২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া হরর সিনেমাগুলো থেকে সাব-জনরায় ভাগ করে বেছে নেওয়া হয়েছে কিছু হরর-কমেডি সিনেমা। হররের সাথে কমেডি পুরোপুরিই দ্বান্দ্বিক, এবং এই মিশ্রণে স্বাদযুক্ত করতে পারাটাও খুব কঠিন কাজ। কিন্তু একবার ফর্মুলা কাজ করলেই আমুদে ভাবের অন্ত থাকে না। তেমনই কিছু সফল হরর-কমেডি, ২০২০ এর, নিয়ে এই লেখা। লোকমুখে যেসব নাম ঘোরে, সেগুলো থেকে বেরিয়ে আড়ালের ভালোগুলোকেই খুঁজে বের করার চেষ্টা এই আয়োজনে করা হয়েছে।
ভ্যাম্পায়ার ভার্সাস দ্য ব্রনক্স (২০২০)
ব্রনক্সের কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত পাড়া। সেখানকারই কিছু প্রাণোচ্ছ্বল ছেলেমেয়ে। স্কুল কামাই করা আর নানা রকম ঘোল পাকানো যাদের স্বভাব। ওদের মধ্যেই এক তরুণ হঠাৎ করে একদিন আবিষ্কার করে, তাদের পাড়ায় ভ্যাম্পায়ার আছে। স্বভাবতই কেউ পাত্তা দিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে তার বাকি বন্ধুরাও একত্রিত হলো, বড়রা কেউ না হলেও। পাড়ায় নতুন এক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এসেছে, শ্বেতাঙ্গদের। ওরাই ভ্যাম্পায়ার। রাতে বের হয়ে কালোদের রক্ত চুষে খায় তারা! ওদের বিরুদ্ধেই লড়তে হবে এই কিশোরদের।
‘ভ্যাম্পায়ার ভার্সেস দ্য ব্রনক্স’-এর প্রিমাইজ পড়েই সচেতন যে কেউ এই সিনেমার মূল বার্তা সম্বন্ধে এক্কেবারে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে যাবে। সাদারা কালোদের পাড়ায় খুলতে এসেছে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। সেটাকেই আবার রূপকের সাথে প্রকাশ করছে, যখন দেখাচ্ছে এই সাদারা ভ্যাম্পায়ার। এবং তারা কালোদের রক্ত চুষে খাচ্ছে। বর্ণবিদ্বেষ, বৈষম্য নিয়ে যে বক্তব্য তা একেবারে সাবলীল। আর হরর-কমেডির অলংকারে সেটাকে বাঁধবার সিদ্ধান্তটা হয়েছে একেবারে আদর্শ। ধোঁয়াশা, অতি আর্টিস্টিক্যালি দ্ব্যর্থবোধক কোনো বক্তব্য না। কিন্তু স্পষ্ট হবার পরও সেটা স্থূল না। এটাই তো চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালকের দক্ষতার নামান্তর।
সেই বক্তব্যের জায়গা বাদ দিয়ে সার্ফেস বা পৃষ্ঠতল দেখলেও উপভোগ্যতায় নেই কোনো ধোঁকা। আশির দশকের টিনেজ সিনেমা, সাথে ‘ফ্রাইট নাইট’-এর মতো ভ্যাম্পায়ার এবং সেই আবহ, কমনীয়তা ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত যাওয়া; সবকিছুতেই মজাটা মিশে আছে। ঐ যে বলে না, “হার্ট এট দ্য রাইট প্লেস,” হ্যাঁ; এই সিনেমার হৃদয়ও সঠিক জায়গাতেই আছে। পৃষ্ঠতলে যেমন হররের আবহ মেশানো কমেডির উপভোগ্যতা আছে, তেমনি পৃষ্ঠতলের নীচে বক্তব্যের দিক থেকে একদম সংহতিপূর্ণ জায়গায় আছে। তলের নীচেও তল দিয়েছে কী অনায়াসেই! ‘ভ্যাম্পায়ার ভার্সেস দ্য ব্রনক্স’-এ বড় কোনো দান নেই। যা আছে তা হলো একরাশ নস্টালজিয়া, সমসাময়িকতা, গালভর্তি হাসি, আমুদে টিনেজ অ্যাডভেঞ্চার এবং সিনেমা শেষে একটু তৃপ্তির ছোঁয়া।
ফ্রিকি (২০২০)
স্ল্যাশার কমেডি ঘরানার এই সিনেমায় একজন মাঝবয়সী সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে ভিন্স ভনকে দেখে মনে হয়েছে- কেন এর আগে কেউ তাকে এমন সাইকোপ্যাথ কিলারের চরিত্রে ভাবেনি! সে তো অনায়সে হেসেখেলে এই সময়ের ফ্রেডি ক্রুগার কিংবা জেসন ভুরহিস হতে পারতো! অমন উচ্চতা, অমন ফিজিক তার আছেই। আর কী অভিনয়! একইসাথে তীক্ষ্ণ এবং ইলেক্ট্রিফাইং!
সিনেমাটি বানিয়েছেন ক্রিস্টোফার ল্যান্ডন। ‘হ্যাপি ডেথ ডে’, ‘হ্যাপি ডেথ ডে টু ইউ’- এ সকল স্ল্যাশার, ব্ল্যাক কমেডি সিনেমা যে তারই বানানো। নির্মাণের আগে ‘ডিস্টার্বিয়া’, ‘প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটিস ২, ৩, ৪’ এগুলোর চিত্রনাট্য লিখেছেন। তো তার ক্যারিয়ার গ্রাফ দেখলে বোঝাই যায়, জনরা সিনেমার একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি। এবং সেগুলোর ক্রাফটেও আছে বিশেষ দক্ষতা। বিশেষ করে, জনরা অলংকারগুলো যেভাবে একটু পাল্টে দিয়ে কিংবা ঘুরিয়ে দিয়ে ব্যবহার করেন, কমেডির রসদ ওতেই তৈরি হয়ে যায়। যেমনটা হয়েছিল ‘হ্যাপি ডেথ ডে’ ১ আর ২ এ। ‘ফ্রীকি’ও তেমনই। এরও চিত্রনাট্য তার লেখা।
এবং এই সিনেমায়, স্ল্যাশার সিনেমায় জেন্ডার টুইস্ট করে গোটা সিনেমাটাকে মজার আর টোনকেও সাবভার্সিভ রেখেছেন। গল্পের প্রিমাইজ এমন- শতাব্দীপ্রাচীন এক বিশেষ চুরি দিয়ে মাঝবয়সী সিরিয়াল কিলার যখন এক হাই স্কুলপড়ুয়া তরুণীকে খুন করতে যায়, তখনই ছোটখাট এক ভুলের কারণে দুজনের আত্মা অদলবদল হয়ে যায়! তরুণীর দেহে ঢুকে পড়ে সিরিয়াল কিলার, আর সিরিয়াল কিলারের দেহে তরুণী! এবং ২৪ ঘন্টার মাঝে সবকিছু ঠিকঠাক করতে না পারলে, এই বদলাবদলি হয়ে যাবে চিরস্থায়ী। তারপর ঘটতে থাকে একের পর এক ফ্যাসাদ। তবে অবশ্যই হাস্যরস ধরে রেখে।
এই দেহ বদলের গল্প নতুন নয়। নতুন হলো সিরিয়াল কিলার বা স্ল্যাশারের মোড়কে এটা এত চৌকসভাবে ব্যবহার করা। এতে জেন্ডার ডায়নামিকটাও বেশ মজাদার একটা কোণ পেলো এবং ওভাবেই বক্তব্যটা রাখল। একইসাথে মাঝবয়সের জটিলতাও সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত প্রেক্ষাপটে ধরা পড়ল বক্তব্যের খাতিরে। আর ক্রিস্টোফার ল্যান্ডনের চতুর লেখা তো আছেই। একদমই সিংগেল এবং স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড একটা গল্পধারণা নিয়ে কীভাবে গোটা সময়কে উপভোগ্য করার মতো চিত্রনাট্য লিখতে হয়; সিন ডিজাইন করতে হয়, সাজাতে হয় এবং সংলাপগুলোতে একটা তেরছা রসবোধ যুক্ত করতে হয় তা তিনি জানেন। সাথে তার উইটি স্টাইলকে ফিজিক্যাল কমেডিতে ভাঙার মতো দক্ষ এবং চতুর অভিনয়, ভিন্স ভন আর ক্যাথরিন নিউটন দিয়েছেন। ল্যান্ডনের হররপ্রীতি এবং তা নিয়ে জানাশোনা নিয়ে আরেকবার বলার প্রয়োজন নেই। তবে বললেও অত্যুক্তি হবে না। আশির দশকের স্ল্যাশারের প্রতি নস্টালজিয়া তো ‘ফ্রীকি’র ঝোলাতে আছেই। সাথে জনরা মাস্টার জন কার্পেন্টার, রোমেরো, ওয়েস ক্রাভেনদের স্টাইলের চৌকস মিশ্রণও আছে। চতুর এবং চটকদার ভঙ্গীতেই ‘ফ্রীকি’ তার আবহকে শুরু থেকে শেষ অব্দি সমতায় রেখেছে।
দ্য উলফ অব স্নো হলো
‘অ্যান আমেরিকান ওয়্যারউলফ ইন লন্ডন, প্যারিস’, ‘উলফকপ’- এই সিনেমাগুলোর ধারাতে আরেকটি নতুন সংযোজন ‘দ্য উল্ফ অব স্নো হলো’। তবে দারুণ ব্যাপার হলো, এই সিনেমা ‘উলফ’ সাবজনরার অন্য কোনো সিনেমার মতোই হয়নি! এমন না যে এই সিনেমা তেড়েফুঁড়ে রেখে দেবার মতো বৈপ্লবিক কোনো জনরা পিস কিংবা আনকোরা নতুন কোনো ন্যারেটিভ নিয়ে এসেছে। এই সিনেমা অমন উঁচু স্টেজে না গিয়ে বরং আরেকটু সূক্ষ্ম, বস্তুনিষ্ঠ, চরিত্রনির্ভর হয়েই বাকিগুলোর চেয়ে নিজেকে করেছে ভিন্ন। চৌকসতার পরিচয় দিয়েছে ওখানেই।
ছোট্ট শহরে বরফাচ্ছাদিত শীতের রাতগুলোতে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে এক ওয়্যারউল্ফ। ভীতু, সাধারণ মানুষগুলোর উপর চড়াও হয়েছে এই প্রাণী। প্রত্যেক পূর্ণিমায় একটা করে ছিন্নভিন্ন দেহ মিলছে। পুলিশ কোনোভাবেই আতঙ্ক আর মৃতদেহ থামাতে পারছে না। এদিকে যে পুলিশ অফিসার কেস দেখছে, সে নিজেই ব্যক্তিগত জীবনে অক্ষম ক্রোধ আর মানসিক অস্থিতিশীলতায় দ্বিখণ্ডিত হয়ে আছে। তার উপর মদ্যপ। তার মনোযোগ বার বারই নড়ে যাচ্ছে, তাতে আরো রেগে উঠছে সে। এবং সে বিশ্বাসই করে না নেকড়েরমানবের লোক-গালগপ্পে। যতক্ষণ না তার ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেললো নেকড়েমানব!
‘দ্য উল্ফ অব স্নো হোলো’ জিম কামিংসের ‘থান্ডার রোড’ (২০১৮)-এরই একটা অন্যরকম সাক্সেসর বলা যায়। গল্পের দিক থেকে নয়, চরিত্রের দিক থেকে। ‘থান্ডার রোড’ সিনেমায় মানসিকভাবে অস্থিতিশীল যে পুলিশ অফিসারকে দর্শক দেখেছিল, এখানেও ঠিক তাকেই দেখা যায়। যে নিজের রাগ সংবরণ করতে পারে না। আবার নিজের বয়স ভুলে, বাচ্চাদের মতো কেঁদে ওঠে হতাশায়, ব্যর্থতায়। এই সিনেমাতেও যেমন তার মেয়ের সামনে মাতাল অবস্থায় ভেউ ভেউ করে কেঁদে ওঠে। চল্লিশের কোঠায় বয়স, তা-ও সফল না হওয়া, নেকড়েমানবকে ধরতে না পারা- এসব মিলিয়ে। তবে কৌতূহলজাগানিয়া বিষয় হলো- তার এসব ইমোশনাল ব্রেকডাউনে সে দর্শককে মোটেই সমব্যথী করতে চায় না। বরঞ্চ, ওতে একটা ডেডপ্যান হিউমার লুকিয়ে রাখে। যার কারণে দর্শক হেসে ওঠে তার কান্না দেখে, অবস্থা দেখে। আবার পরক্ষণেই একটু অপরাধবোধে ভোগে এমন অসহায় অবস্থায় হেসে ওঠার কারণে।
ওই অপরাধবোধ জাগানোই মূলত জিম কামিংসয়ের উদ্দেশ্য। দর্শককে মজা দিয়ে আবার দর্শকের সাথেই মজা নেওয়ার খুবই ধূর্ত আর স্যাডিস্টিক এই ব্যাপার তার ফিল্মমেকিং স্টাইলকেই আরো শাণিত করে।
জিম কামিংসের চরিত্রের এক দুর্দান্ত আর্কিটাইপ তো রইলোই। সাথে স্ত্রীর না থাকা (প্রথম সিনেমার মতো), এবং তার তরুণী মেয়েকে দেখে মনে হয় এটা ওই সিনেমারই ধারাবাহিকতায় আসা। ওটা ছিল পুরোপুরি ড্রামেডি। এখানে তার সাথে যোগ হয়েছে হররের অলংকার। যেন ওই সিনেমারই পুলিশ অফিসার, ‘স্নো হলো’তে অন্য কোনো শহরে ট্রান্সফার হয়েছেন। তার খিটখিটে মেজাজ, মানসিক অস্থিতিশীলতা এখনও ঠিকঠাক চলমান। এবং এবার সে একটা নতুন কেস পেল, যেখানে তার প্রতিপক্ষ এক ওয়্যারউল্ফ! ‘দ্য উল্ফ অব স্নো হোলো’ আগের সিনেমার মতোই আদতে চরিত্রনির্ভর ড্রামা।
এবারও অভিনয় আর পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমার চিত্রনাট্য জিম কামিংস নিজেই লিখেছেন। এবং ডেডপ্যান হিউমারকে এর মধ্যেই তার সিগনেচার স্টাইল বানিয়ে ফেলেছেন। কোয়েন ব্রাদার্সদের মতো, তবে সম্পূর্ণ স্বকীয়। ডেডপ্যান স্টাইল, এরকমে বরফে আচ্ছাদিত শহর আর আবহ, প্রধান চরিত্রের পেশাগত আর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ‘ফার্গো’ সিনেমার একটা ভাইব দেয়, যা আবার ওয়্যারউল্ফের অলংকার গায়ে জড়িয়ে স্টিফেন কিংয়ের ‘সিলভার বুলেট’ কিংবা কানাডিয়ান হরর কমেডি ‘উল্ফকপ’-এর নির্যাস উপহার দেয়।
তবে ‘দ্য উল্ফ অব স্নো হলো’র সবকিছু একান্তই নিজস্ব। শীতের রিক্ততায় পরিবেশ এমনিতেই প্রাণহীন, শুকনো, খটখটে থাকে। সেটাকেই সিনেমার সামগ্রিক বাতাবরণে এনে সিনেমার কমেডির পরতেও সেই ডেডপ্যান স্টাইলের খটখটে হিউমার মেশানোতে দুয়ে মিলে এক দারুণ রূপ পেয়েছে। আবহসঙ্গীতে হররের ভাব, ওদিকে পর্দায় চলমান জিম কামিংসয়ের হুটহাট রাগ কিংবা কান্না; দুয়ের এই বৈপরীত্যকে এতটা দারুণ সমতায় তিনি বেঁধেছেন যে, হাসি আসতে বাধ্য। আর জিম কামিংসের নিজস্ব ডি.আই.ওয়াই. এস্থেটিকও আরো পরিণত রূপ পেয়েছে। প্রত্যেকটা ডিসলভ, ম্যাচ কাটের মতো সিনেম্যাটিক ট্রিটমেন্টগুলোকে খুব সুচিন্তিতভাবে ব্যবহার করেছেন তিনি।
ইন্ডি সিনারিওতে অবাক করার মতো নাম হয়ে উঠছেন জিম কামিংস। ডেডপ্যান হিউমারসমৃদ্ধ নিজস্ব লেখনশৈলী এবং ফিল্মমেকিং স্টাইলের পাশাপাশি অভিনেতা হিসেবেও নিজের যে আর্কিটাইপ গড়েছেন তাতে দুর্দান্ত তিনি। সাথে আবার সম্পাদনাও নিজে করেন। এমন ইন্ডি ভয়েজই যে কাম্য! ওয়ান ম্যান আর্মি!
ওয়্যারউলভস উইদিন (২০২০)
‘ওয়্যারউলভস উইদিন’, ‘দ্য উলফ অব স্নো হলো’র মতোই আরেকটি ওয়্যারউলফ সাবজনরার হরর কমেডি। তবে এটুকু আগেই নিশ্চিত করি, দুটোই পুরোপুরি ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন আমেজের সিনেমা। শুধু দুটোই একই গোছের সেটিং ভাগাভাগি করেছে, এটাই একমাত্র জ্বলন্ত সামঞ্জস্য। এই সিনেমাতেও দেখা যায়, এক ওয়্যারউল্ফ ত্রাস হয়ে দেখা দিয়েছে ছোট্ট শহর বিভারফিল্ডে। খুন আর আতঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে গলা জড়াজড়ি করে। সেই সাথে শহরের পাইপলাইন নিয়েও উত্তপ্ততা বিরাজ করছে। দায়িত্ব নিয়ে এলো নতুন রেঞ্জার। সাথে নিলো এক পোস্টাল ওয়ার্কারকে। কিন্তু বিধি বাম! ধেয়ে আসছে তুষারঝড়। তাই তদন্ত করতে বের হয়েই আটকা পড়লো আর আশ্রয় নিল শহরের একমাত্র সরাইখানায়, আরো কয়েকজন শহরবাসী সমেত। কিন্তু ওয়্যারউল্ফ যে আছে এদের মাঝেই! হাস্যরস সম্মুখে রেখে আতঙ্ক, উত্তেজনা আর সন্দেহের গ্যাঁড়াকলে পড়ল এরা সবাই!
অনেকটাই সিঙ্গেল লোকেশনে নির্মিত হয়েছে গোটা সিনেমা। এবং এটাই আসল মজার বিষয়। পরিচালক জশ রুবেন, তার আগের সিনেমা ‘স্কেয়ার মি’ (২০২০)-তেও এই সেটিং ব্যবহার করেছেন। ওটাও দুর্দান্ত এক হরর কমেডি সিনেমা। তাই বলাই যায়, এমন সিঙ্গেল সেটিংয়ে হরর-কমেডির মতো একটা শক্ত জনরাকে ক্র্যাক করায় জশ রুবেন পারদর্শী। এবং একটি স্টাইল হিসেবেও বিষয়টি দাঁড় করিয়েছেন।
‘ওয়্যারউলভস উইদিন’কে তিনি ক্লাসিক মিস্ট্রি সিনেমাগুলোর আদলে সাজিয়েছেন। এবং সেটাকে আগাথা ক্রিস্টির ‘হুডানইট’ এর মতো আধুনিকীকরণ করেছেন। “ওয়্যারউল্ফটা কে?” আগাথা ক্রিস্টিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন, তবে বেশ ঠাট্টার সুরে। কমেডির মিশ্রণটা ওতেই। খুবই সরস একটা চিত্রনাট্য লিখেছেন মিশ্না উল্ফ। শেষে এসে তো অত্যন্ত মজাদার আর বুদ্ধিদীপ্তভাবেই জেন্ডার ডায়নামিককে উপস্থাপন করলেন সাবটেক্সট হতে নিয়ে। আর গোটা কমিউনিটির কী ডিটেলড এবং নুয়্যান্সড উপস্থাপন! সংযোগ তাই অতি সহজেই তৈরি হয়ে যায়।
‘মার্ডার বাই ডেথ’ (১৯৭৬), ‘ক্লু’ (১৯৮৫); এই ক্রাইম-কমেডি সিনেমাগুলো, যেখানে সমানভাবে ঠাট্টাবিদ্রুপও থাকতো, সেগুলোর ধারাতেই একটা আধুনিক হরর কমেডি হয়েছে ‘ওয়্যারউলভস উইদিন’। এবং সাসপেন্স রেখে খুবই উপভোগ্যতার সাথেই হরর আর কমেডিকে মিশিয়েছে। বড় কথা হলো, নিখুঁত ব্যাল্যান্স রেখেছে। এই ব্যাল্যান্স রাখার ক্ষেত্রে স্যাম রিচার্ডসন আর মিলানা ভ্যানত্রুবের কুশলী, চপল অভিনয়; মিশ্না উল্ফের একইসাথে সরস এবং তলসমৃদ্ধ চিত্রনাট্য, যেখানে বাইরে থাকা নেকড়ে থেকেও মানুষের ভেতরে থাকা পশুরই একটা ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে; জশ রুবেনের সুচতুর ফিল্মমেকিং, যেখানে সীমাবদ্ধ স্পেসেও অভিনব ভিজ্যুয়াল গ্যাগের পদ্ধতি বের করেছেন তিনি এবং সাথে ক্লাসিক মিস্ট্রি, হরর-কমেডি সিনেমাগুলোর গুফি স্বভাব কাজে লাগিয়েছেন- সবকিছুই সংহতি রেখে গতিময়তার সাথে কাজ করেছে সিনেমাটিতে।
একটা ভিডিও গেমের অ্যাডাপ্টেশন হয়েও কী স্বকীয় ঢঙের সিনেমা হয়েছে ‘ওয়্যারউলভস উইদিন’! একদম ‘টোটাল সিনেমা’। সবকিছুতে মূর্ত থাকা এই টোটালিটিই সিনেমাকে আরো ভালো বানিয়েছে। হরর-কমেডিকে সফল বানানোর ক্ষেত্রে এডগার রাইটের সিনেমাগুলোর মতো গতিময় সম্পাদনা আর ক্যামেরাকে সর্বদা সচল রাখার কৌশলটা জশ রুবেন সহজাতভাবেই রপ্ত করেছেন যেন! এই সময়ে এসে প্রোপার ‘জনরা ফিল্ম’ বানানো কঠিনই। কিন্তু নানা জনরাকে একসাথে মিশিয়ে সেই কঠিন ব্যাপারকে অনায়াসেই ছাতু করেছেন রুবেন। তাই এই জনরা ফিল্মমেকারের উপর তৃপ্তির রসালো দৃষ্টিতেই ‘আস্থা’ রাখা যায়।