সোশাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি সম্প্রতি বহুল চর্চিত একটি বিষয়। এত এত সামাজিক মাধ্যম তৈরির ফলে মানুষের, বিশেষ করে তরুণদের জীবনধারা, একদমই বদলে যাচ্ছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা-চেতনায় বিশাল প্রভাব রাখছে এই মাধ্যমগুলো। এবং আশঙ্কার বিষয় হলো, এসবের কুপ্রভাবই বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যোগাযোগকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে, অনেক অনেক সুযোগ সামনে এনেছে ঠিক, কিন্তু সেসব ছাপিয়ে কুপ্রভাবগুলোই আসলে অমোঘ রূপ পাচ্ছে। এখন সময় এসেছে সেগুলো নিয়ে কথা বলার।
এই সোশাল মিডিয়া— গোটা তরুণ প্রজন্মকে যেভাবে হতাশা, সংকীর্ণতা, ‘খ্যাতি’ নামক ভ্রমের ফাঁদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলার এটাই সময়। আশার ব্যাপার, সম্প্রতি সেই খারাপ দিকগুলো নিয়ে বিভিন্ন সিনেমা, সিরিজ হচ্ছে। ২০২০ সালের একটি তথ্যচিত্র ‘দ্য সোশাল ডিলেমা’-তো অনেক গোপন সত্য সামনে এনে রীতিমতো ভীতি জাগিয়েছে। এই আর্টিকেলে সেটি নিয়ে নয়, তবে সোশাল মিডিয়ার খারাপ দিক নিয়ে নির্মিত হওয়া সাম্প্রতিক সিনেমাগুলো থেকে বেছে কিছু স্বল্পপরিচিত হরর নিয়ে লেখা হলো। হরর বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ, এই খারাপ দিকগুলো তো ভীতিকরই। তাই হররই তো সেটা অভিঘাতীরূপে উপস্থাপন করতে পারে!
৪) Followed (২০১৮)
সোশাল মিডিয়ার ভয়ানক উন্মত্ততা আর আচ্ছন্নতাকে পৃষ্ঠে রেখেই একটি ফাউন্ড-ফুটেজ হরর। একজন সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার তার টিম আমেরিকার বিভিন্ন হন্টেড হোটেলে ঘুরে বেড়ায়। ফলোয়ার বাড়াতে সত্য-মিথ্যা সব যোগ করে। তেমনই এক হোটেলে গিয়ে সত্যি সত্যিই অশরীরী এক ফলোয়ারের মুখোমুখি হয় এই ইনফ্লুয়েন্সার।
ফাউন্ড ফুটেজ জনরায় সোশাল মিডিয়া নিয়ে বক্তব্য রাখার ভাসাভাসা চেষ্টায়, জনরার ন্যারেটিভে নতুন কিছু এই সিনেমা যোগ করেনি, এবং আগের অলংকারগুলোও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। অথচ সোশাল মিডিয়া স্ক্রিন ফরম্যাট আর ফাউন্ড ফুটেজের ফরম্যাটের মিশ্রণে বেশ নতুন এক ন্যারেটিভ তৈরির সুযোগ এই সিনেমা পেয়েছিল। স্ক্রিপ্ট কোথায় যাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখবার প্রয়োজন ছিল বৈকি। তবে উত্তেজনা আর ভয়ের মুহূর্ত সংখ্যায় একেবারে নগণ্য নয়, সেটা সন্তুষ্টির।
৩) Spree (২০২০)
‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ সিরিজের চরিত্র ‘স্টিভ হ্যারিংটন’-কে এখানে এমন সাইকোপ্যাথ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা বেশ চিত্তাকর্ষক। একজন রাইডশেয়ার ড্রাইভার সে। সোশাল মিডিয়া নিয়ে পুরোপুরি মোহাবিষ্ট। সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার জন্য, খ্যাতি পাওয়ার জন্য সে লাইভে গিয়ে একের পর এক খুন করতে থাকে তার যাত্রীদের! সোশাল মিডিয়াকে ঘিরে বর্তমান প্রজন্মের আচ্ছন্নতাকে বিদ্রুপ করেই এই সিনেমা। পৃষ্ঠতলেই সেটা বোঝা যায়। এবং ওটা ছাড়া আর কোনো তল এই সিনেমায় নেই। সেটা সিনেমাটার সমালোচনার পয়েন্ট না। কারণ এই প্রজন্মের জনপ্রিয় হবার আচ্ছন্নতায় তল তো এমনিতেই নেই। অতল নিয়ে ভাববার সময় কই? সেই বিষয়টিই ধরতে চেয়েছে এবং পেরেছে এই সিনেমা, ন্যারেটিভ অসংহতির মাঝ দিয়েও।
গোটা সময় আগ্রহ— চিত্রনাট্য আর পরিচালনার জায়গা থেকে ধরে না রাখা গেলেও, জো কিয়েরির অবিশ্বাস্য অভিনয় থেকে নজর ফেরানোর উপায় নেই। তার চেহারা আর উপস্থিতিতে জড়িয়ে থাকা সাদাসিধে মোহনীয় ভাবের সাথে ১৮০ ডিগ্রী বৈপরীত্যের ব্যক্তিত্ব তাকে পুরো সময় ‘অপ্রত্যাশিত’ করে তুলেছে। বিপদজনক প্রমাণিত হবার পরও একটা অদ্ভুত কমনীয়তা তার কাজেকর্মে মিশে ছিল। এটাই সিনেমার আবহ আরো ভয়ের করে তুলেছে। পোস্টারে ‘আমেরিকান সাইকো’ সিনেমার যে রেফারেন্স টানা হয়েছে, বিষয়াদিতে সবসময় সমান্তরালে না থাকলেও, এই চরিত্রের ক্ষেত্রে আসলেই ‘স্প্রী’র এই ড্রাইভার এই সময়ের আমেরিকান সাইকো!
২) Like Me (২০১৭)
‘লাইক মি’ সম্পূর্ণ একাকী এক তরুণীর গল্প। মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে, যোগাযোগ তৈরি করবে বলে হন্যে হয়ে ঘুরছে সে। কিন্তু সে শুধু ব্যবহৃতই হয়। এবং সেখান থেকেই এই সিনেমা মোড় নেয় দুঃস্বপ্নের দিকে। সোশাল মিডিয়ায় লাইভে গিয়ে একের পর এক খুন করতে থাকে সে। পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সে। ভুলে যায় বাস্তব আর কল্পনার ফারাক সম্বন্ধে।
‘লাইক মি’, গোটা সিনেমাটার গঠনবিন্যাস সাজানো হয়েছে এই প্রজন্মের সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত হবার বাসনাকে কেন্দ্র করে। ভার্চুয়াল জগতে হাঁটতে-চলতে গিয়ে বাস্তব জগতকেই ভুলে যাচ্ছে যেন। সোশাল মিডিয়ায় কে কী করল, দেখাল, কত ফলোয়ার পেল- এসব ঘিরেই তার চিন্তাজগত। ফলে ডিপ্রেশন কতটা গুরুতর বিষয়, তা না বুঝেই ফাঁপা, ঠুনকো বিষয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে তারা। বাকি জগত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিজের অস্তিত্বকেই পরবর্তীতে সংকটের মাঝে আবিষ্কার করছে। সোশাল মিডিয়ার সাময়িক উত্তেজনার বিনিময়ে চিরস্থায়ী দুশ্চিন্তা, হতাশা, একাকিত্বকে অজান্তেই জড়িয়ে নিচ্ছে তারা।
এসকল বিষয় ঘিরেই এই সিনেমা। তবে ড্রামা হয়নি। তীব্র ভায়োলেন্সযুক্ত হরর হয়েছে রবার্ট মকলারের এই সিনেমা। কিন্তু খুব শীঘ্রই ভায়োলেন্সের তীব্রতার মাঝে বিষয়াদি, বক্তব্যসহ বলতে গেলে ন্যারেটিভটা হারিয়ে গেছে। ক্লেশ জাগিয়েছে ৮০ মিনিটের সিনেমা হয়েও। তবে বলতেই হয়, এক অন্যরকম ভিজ্যুয়াল ভাষা, এই সোশাল মিডিয়ানির্ভর হরর সিনেমা দিয়েছে। তবে সবাই এর ভিজ্যুয়াল ন্যারেটিভের সাথে কতখানি যুক্ত হতে পারবে, সেই প্রশ্নও আসতে পারে। এটা নিয়ে অবশ্য চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক মকলার ভাবেননি। ‘সুরিয়াল নাইটম্যায়ার’ কোয়ালিটির নান্দনিকতাই ব্যবহার করেছেন। লাইটিংয়ে দ্বিগুণ এক্সপোজার ব্যবহার করেছেন ব্যাকগ্রাউন্ড আরো স্পষ্ট এবং অর্থবহ আকারে ইমেজারিতে তুলে আনতে। একটা গ্রেইনি ভাব আছে এর ইমেজারিতে।
গোটা সম্পাদনায় এক চরম বিক্ষিপ্ততা রেখেছেন। কোনোরকম ছন্দ নেই। এই প্রজন্মেও তো নেই কোনো ছন্দ। সেই অনুসারেই ভাষা দাঁড় করিয়েছেন মকলার। অস্বস্তি জাগানোর মতো দৃশ্যে ভরা। একদম নাড়িভুঁড়ি উগলে আসার মতো। এই বিক্ষিপ্ত সম্পাদনার স্টাইলের ফলে ওগুলো আরো বেশি অস্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে, যেমনটা পরিচালক চেয়েছেন। এই সিনেমার এক চরিত্রে ল্যারি ফ্যাসেন্ডেন অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হরর সিনেমাও তিনি বানিয়েছেন (‘দ্য লাস্ট উইন্টার’, ‘ডিপ্রেইভড’, ‘ওয়েন্ডিগো’ ইত্যাদি)। তার সিনেমার যে স্বতন্ত্র ভিজ্যুয়াল এস্থেটিক, এখানেও সেটির ভাব পাওয়া যাবে। মকলার সেই জায়গা থেকে হয়তো গুরুকে সিনেমায় অভিনয়ও করালেন। সে যাক। ‘লাইক মি’ সংসক্তি উপহার দেয়নি। ওসব নিয়ে ভাবেওনি। এই বিক্ষিপ্ত, বিভ্রান্ত প্রজন্মকে শ্লেষ করে নির্মিত এক অস্বস্তিদায়ক হরর এটা, যা শুধু ভিজ্যুয়ালিই অস্বস্তি জাগাবে।
১) Tragedy Girls (২০১৭)
আশির দশকের টিন-স্ল্যাশার সিনেমার অলংকারগুলোর অঙ্গবিন্যাস পাল্টে দেওয়ার কাজই করেছে এই সিনেমা। পড়েছে ঠিকই, তবে সেটা স্রেফ বদলে দিয়ে নিগূঢ় হাস্যরস প্রদান করতেই। গল্প শুরু হয় এভাবে— গাড়ির ভেতরে দুই তরুণ-তরুণী ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে লিপ্ত থাকাকালে খুট করে শব্দ হয়। এবং দ্বিতীয়বার শব্দটা আরো জোরালো হয়। গাড়ি থেকে নামল তরুণ। এবং অবশ্যম্ভাবীভাবেই মারা পড়ল মুখোশ পরা এক সিরিয়াল কিলারের হাতে। স্ল্যাশার সিনেমায় এমন প্রস্তাবনা দৃশ্য তো নীতির মতোই। তবে এই অতি চেনা অলংকারকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজ এই সিনেমা ঠিক পরমুহূর্তেই করে।
গাড়ির ভেতরের ওই তরুণী আর বাইরে অবস্থান করা তার এক বান্ধবী মিলে সুকৌশলে পাকড়াও করে এই সিরিয়াল কিলারকে। তাকে বেঁধে রেখে অত্যাচার করে। কুকুরকে খাবার খাওয়ায়। তবে মারেও না, পুলিশেও খবর দেয় না। বরং তার কাছে দীক্ষা চায়! কিলারকে ধরার পরপরই তাদের মাথায় বুদ্ধি খেলে— সারা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া এই কিলারকে পুলিশে না দিয়ে বরং গোটা ব্যাপারটা গোপন রাখা যাক। আর এই পরিচিতি দিয়েই নিজেদের সোশাল মিডিয়ার ইমেজ, তাদের পেজ ‘ট্র্যাজেডি গার্লস’ বুস্ট করবে। এই জায়গাতেই এই সিনেমা তার শ্লেষপূর্ণ হাস্যরসের চরম দানটা ব্যবহার করেছে। এই দুই তরুণী এবার নেমে যায় একের পর এক খুনের মিশনে। সাইকোপ্যাথি, স্যাডিস্টিক আচরণ সবকিছু এসে ভীড় করে।
সিনেমা শুরু থেকে শেষ অব্দি, ‘পিচ ব্ল্যাক কমেডি’। ভিলেনকে হিরো বানিয়েই তো স্ল্যাশার সিনেমার বড় জনরা অলংকারকে বদলেছে সিনেমাটি। পাশার দান উল্টে দেওয়ার মতো। ফ্রেডি ক্রুয়েগার (‘অ্যা নাইটম্যায়ার অন এল্ম স্ট্রিট’ ফ্র্যাঞ্চাইজি), মাইকেল মেয়ারস (‘হ্যালোউইন’ ফ্র্যাঞ্চাইজি), কিংবা জেসন ভুরহিসের কথাও যদি বলা হয় (‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’ ফ্র্যাঞ্চাইজি); এরা সবাই অ্যান্টাগনিস্ট। দৈহিকভাবে শক্তিশালী। অনেককে খুন করার পরও ঠিকই কোনো না কোনো এক বা একাধিক প্রোটাগনিস্ট থাকবে যারা শেষপর্যন্ত খুনির হাত থেকে বাঁচবে লড়াই করে। এবং হবে হিরো, যে সাইকোপ্যাথের খুনের মড়ক থামাবে। কিন্তু এই ‘ট্র্যাজেডি গার্লস’ তেমন কোনো প্রোটাগনিস্টকে দাঁড়াতে দেয় না।
ওই দুই অপছন্দনীয় অ্যান্টাগনিস্টই এখানে প্রধান। এদের দৃষ্টিকোণ ধরেই চলে সিনেমা। ওই যে, নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘দ্য এন্ড অফ দ্য ফাকিং ওয়ার্ল্ড’-এর রেফারেন্স আনা যায় এই প্রসঙ্গে। তবে ওখানে সেই চরিত্র দুটির প্রতি দর্শক সহানুভূতিশীল হয়। সেসব জায়গা, চরিত্রগুলোর সেসব বৃত্ত আছে। এখানে ওসবের ধার ধরা হয়নি। এটা একদম ঠোঁটকাটা স্বভাবের। কোনো ছিঁচকাঁদুনে স্বভাব এই সিনেমায় নেই।
চরম ভায়োলেন্সেও এতে আছে রসবোধ। সাথে সোশাল মিডিয়ার আসক্তি নিয়ে যে বক্তব্য আছে, তাতে মিশে আছে তীব্র শ্লেষ। চরিত্র দুটো ওভাবে সাজানো হয়েছেই তো সোশাল মিডিয়ায় আসক্তির প্রতি তীব্র বিদ্রুপ করতে। সোশাল মিডিয়াতে পরিচিতি গড়ার মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে তরুণসমাজ যে ভয়াবহ রকমের নার্সিসিস্ট আর স্যাডিস্ট হয়ে উঠছে তাদেরই অজান্তে, সেটাই কড়া ব্ল্যাক হিউমারের সাথে উপস্থাপন করেছে এই সিনেমা।
সাথে আছে নিজ জনরাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া এবং রেফারেন্স ব্যবহার করা। শেষ অংকের ওই প্রম নাইটের ঘটনা পুরোটিই তো ব্রায়ান দে পালমার ক্লাসিক ‘ক্যারি’ (১৯৭৩) সিনেমাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে তৈরি। স্ল্যাশার জনরার সাথে ঠাট্টা করে, চেনা অলংকারগুলো বাঁকিয়ে, আবার নিজ জনরার প্রতি সৎ থেকে, একইসাথে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রেখে ‘ভালো’ হওয়ার জন্য একটি চিত্রনাট্যের যতখানি তীক্ষ্ণ, বুদ্ধিদীপ্ত হতে হয়, তেমনটাই হয়েছে টাইলার ম্যাকল্যানটায়ারের এই চিত্রনাট্য। নিজের শক্তি আর দৌড় সম্বন্ধে তিনি যে ভালোই অভিহিত, তা তার লেখা আর পরিচালনা দুটোতেই স্পষ্ট।
এই রইলো সোশাল মিডিয়ার কুপ্রভাব নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলো থেকে ৪টি স্বল্পপরিচিত হরর নিয়ে আলোচনা। সোশাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে কিছুটা হলেও ভাবনার উদ্রেক ঘটাবে এই সিনেমাগুলো। সেটাই দরকার। ওতে এই ভয়ঙ্কর আচ্ছন্নতা সম্বন্ধে তরুণরা সচেতন হলেই সিনেমাগুলোর ভেতরের বক্তব্য সফল হবে।