And so he spoke, and so he spoke
The lord of Castamere,
But now the rains weep o’er his halls
With no one the there to hear
এইচবিও-র জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’ বা প্রখ্যাত লেখক জর্জ আর আর মার্টিনের জগত-কাঁপানো ফ্যান্টাসি উপন্যাস ‘অ্যা সং অব আইস এন্ড ফায়ার’-এর ভক্ত যারা আছেন, তাদের কাছে উপরের লাইনগুলো বেশ পরিচিত মনে হবে। এগুলো মূলত গেম অব থ্রোনসের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবার ‘হাউজ ল্যানিস্টার’ এর জাতীয় সঙ্গীত, যে সঙ্গীত মূলত ‘The Rains of Castamere’ নামে সমধিক পরিচিত। কিন্তু এই লাইনগুলো যেমন ল্যানিস্টারদের বীরত্বগাঁথা, একইসাথে এটি তাদের নিষ্ঠুরতার ধারক-বাহকও বটে।
কী বলা হয়েছে এই গান তথা ‘দ্য রেইনস অব কাস্ট্যামিয়ার’-এ? সেটি জানতে হলে আগে জানতে হবে ল্যানিস্টারদের পূর্বপুরুষদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, জানতে হবে হারিয়ে যাওয়া আরও দুই পরিবার ‘হাউজ রেইন’ (House Reyne) এবং ‘হাউজ টারবেক’ (House Tarbeck) সম্পর্কে। তাই কথা না বাড়িয়ে মূলপ্রসঙ্গে আসা যাক।
হাউজ রেইন
হাউজ রেইন তথা রেইন পরিবার ছিল ওয়েস্টেরসের অন্যতম সম্ভ্রান্ত পরিবার। তাদের নিবাস ছিল ওয়েস্টারল্যান্ডের কাস্ট্যামিয়ার নামক অঞ্চলে। শুরুতেই তারা বেশ কিছু সোনা আর রুপার খনি নিজেদের আয়ত্বে আনতে পেরেছিল। তাই অল্প সময়ে তারা হয়ে ওঠে ওয়েস্টেরসের অন্যতম ধনী পরিবার। তারা এতটাই সম্পদশালী হয়ে উঠেছিল যে, তাদের সাথে শুধুমাত্র ল্যানিস্টারদেরই তুলনা চলত। তাদের এই সম্পদ আর প্রতিপত্তির বলে তারা হয়ে ওঠে ওয়েস্টারল্যান্ডের অন্যতম শক্তিশালী পরিবার।
পরবর্তীতে ‘কিংডম অব রক’ এর রাজা প্রথম লরিওন ল্যানিস্টার একজন রেইন কন্যাকে বিয়ে করেন [১]। এর ফলে হাউজ রেইন রুপ নেয় ল্যানিস্টারদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্রতে।
হাউজ রেইনের অবনমন
বিভিন্ন কারণে হাউজ রেইনের সম্পদ ফুরিয়ে আসতে থাকে। তাদের সোনা আর রুপার খনিগুলোতেও কমে আসতে থাকে সঞ্চয়ের পরিমাণ। তাই রেইন পরিবার এবার নতুন পন্থা অবলম্বন করে। তারা চাইলো, তাদের কন্যা সন্তানদের ল্যানিস্টারদের সাথে বিয়ে দিয়ে তাদের সম্মান ও প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ন রাখবে। কাজেই, সেই সময়কার রেইন পরিবারের প্রধান রবার্ট রেইন তার মেয়ে এলিন রেইনের সাথে টাইওয়াল্ড ল্যানিস্টারের বিয়ে ঠিক করেন। টাইওয়াল্ড ল্যানিস্টার নিজে রবার্ট রেইনের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন জেরল্ড ল্যানিস্টারের উত্তরাধিকারী।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ব্যাটল অব স্টারপাইকে রবার্ট রেইন এবং টাইওয়াল্ড ল্যানিস্টার উভয়ই মৃত্যুবরণ করেন। [২]
ওদিকে, রবার্টের মেয়ে এলিন রেইনও কম উচ্চভিলাষী ছিলেন না। তিনি এবার টাইওয়াল্ডের জমজ ভাই টিওন ল্যানিস্টারকে বিয়ে করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন। টিওনের ইতোমধ্যে আরেক নারীর সাথে বাগদান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ক্রমাগত চাপের মুখে একপর্যায়ে এলিনকে বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি।
বিয়ের পরপরই এলিন তার উদ্দেশ্য সফল করতে উঠে-পড়ে লাগেন। তিনি তার ভাই রজার রেইন আর রেইনার রেইনসহ তার নিকট আত্মীয়-স্বজনদের সম্মান এবং জমিজমা দিয়ে পুরস্কৃত করতে লাগলেন। ফলে, অল্প সময়ের মধ্যেই রেইন পরিবার তাদের পারিবারিক ভারসাম্য খুঁজে পেল।
কিন্তু এবারও এলিনের ভাগ্য সহায় হলো না। ব্ল্যাকফায়ারের বিদ্রোহে তার স্বামী টিওন ল্যানিস্টার প্রাণ হারান। এর পর পরই টিওনের বাবা জেরল্ড ওয়েস্টারল্যান্ডের ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেন। ফলে ওয়েস্টারল্যান্ডে রেইনদের ক্ষমতার ইতি ঘটলো। ওদিকে, জেরল্ডের আরেক পুত্র টাইটোস ল্যানিস্টারকে শয্যাসঙ্গী করার দায়ে এলিনকে হাউজ ল্যানিস্টার থেকে বিতাড়িত করা হয়।
বিতাড়িত এলিন এবার বিয়ে করেন হাউজ টারবেকের লর্ড ওয়াল্ডেরান টারবেককে [৩]। বলে রাখা ভালো, হাউজ টারবেকেরও অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না।
সময় বদলায়। জেরল্ড ল্যানিস্টারের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তার পুত্র টাইটোস ল্যানিস্টার। অন্য ল্যানিস্টারদের তুলনায় টাইটোস ছিলেন অবিচক্ষণ এবং মেরুদন্ডহীন। এই সুযোগে হাউজ রেইন আর হাউজ টারবেক টাইটোসকে লুটেপুটে খেতে লাগল। লোনের নাম করে হাতিয়ে নিতে থাকলো বিশাল পরিমাণ সোনা-রুপা।
টাইউইন ল্যানিস্টারের উত্থান
এবার ল্যানিস্টারদের ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে এলেন টাইটোসের পুত্র ও উত্তরাধিকার টাইউইন ল্যানিস্টার। এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেয়া ভাল, টাইউইন হলেন সার্সেই, জেইমি এবং টিরিওন ল্যানিস্টারের বাবা।
টাইউইন তার বাবার মতো মেরুদন্ডহীন ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন সাহসী, দূরদর্শী, সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী এবং নিষ্ঠুর। নাইনপেনী কিংসের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেই তিনি ল্যানিস্টার পরিবারের হাল ধরেন। টারবেক আর রেইনরা যে বিশাল পরিমাণ সোনা-রুপা লোন নিয়েছিল, তিনি সেগুলো ফেরত চান এবং তাদের এই দূর্নীতির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে উঠে-পড়ে লাগেন।
অবস্থা বেগতিক দেখে ওয়াল্ডেরান টারবেক টাইটোসকে বোঝাতে কাস্টারলি রকে আসেন। কিন্তু কাস্টারলি রকে এসেই টাইউইনের হাতে তিনি বন্দি হন। এতে করে লেডি এলিন ক্ষিপ্ত হন, টারবেকরাও যুদ্ধের হুমকি দেয়। অতঃপর, টাইটোসের হস্তক্ষেপে ওয়াল্ডেরান ছাড়া পান। উপরন্তু, টাইটোস টারবেকদের সাথে এক স্থায়ী শান্তিচুক্তিতে যান। ফলে টারবেক আর রেইনরা এই যাত্রায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
কিন্তু শান্তিচুক্তি স্থায়ী হলো মাত্র এক বছর। টাইউইন দমে যাবার পাত্র নন। এবার তিনি নিজ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিজের বাবা টাইটোসকে হাতের পুতুল বানিয়ে টারবেক-রেইনদের কাছে থেকে অতিসত্ত্বর সমস্ত সোনা-রুপা ফেরত চান। কাজেই, বিপদ বুঝতে পেরে টারবেক আর রেইনরা ঐক্যজোট গঠন করে এবং ল্যানিস্টারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
ওদিকে, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী টাইউইন ঠিক এটাই চাইছিলেন। তিনি তার বিশাল ল্যানিস্টার সেনাবহর নিয়ে টারবেকদের আক্রমণ করলেন। ঘন্টাখানেকের মধ্যে টারবেকদের পতন ঘটলো। হত্যা করা হলো টারবেক পরিবারের সবাইকে, নিজ সন্তান সমেত হত্যা করা হলো লেডি এলিনকে, জ্বালিয়ে দেওয়া হলো টারবেক দুর্গ। নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হলো টারবেক পরিবারকে। ওদিকে, মৃত্যুর আগে লেডি এলিন তার ভাই রজার আর রেইনারকে ল্যানিস্টারদের সম্পর্কে জানিয়ে যান।
ল্যানিস্টারদের তুলনায় রেইনদের সৈন্যসংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। তারপরও শেষ চেষ্টা হিসেবে রেইন সেনাবহর অতর্কিতে হামলা করে ল্যানিস্টার সৈন্যদের। কিন্তু ল্যানিস্টারদের বিশাল সেনাবহরের কাছে রেইনরা কচুকাটা হয়ে যায়। নিষ্ঠুর টাইউইন ল্যানিস্টারের নির্দেশে হত্যা করা হয় রজার-রেইনার সহ সকল রেইন সেনাকে।
এবার টাইউইন দৃষ্টি দেন রেইনদের আবাসভূমি কাস্ট্যামিয়ারের দিকে। তিনি তার সেনাবাহিনীসহ হাজির হন কাস্ট্যামিয়ারে। সেখানে রেইনদের স্বর্ণখনির মুখ পাথর দিয়ে সিলগালা করে দেন, পার্শ্ববর্তী এক জলাধারের পানি প্রবাহিত করেন খনির ভেতর। এতে মৃত্যু হয় ভেতরে থাকা সকল খনি শ্রমিকের [৪]।
একে একে হত্যা করেন রেইন পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ সবাইকে। জ্বালিয়ে দেন রেইন দুর্গ। শুধু এতটুকু করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের লাশ তিনি ঝুলিয়ে রাখেন রাস্তার দু’ধারে, এক দীর্ঘ গ্রীষ্মকাল জুড়ে। ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে দেন হাউজ রেইনের নাম।
টাইউইন ল্যানিস্টারের এই বিজয়গাঁথা নিয়ে রচিত হয় হাউজ ল্যানিস্টারের সঙ্গীত ‘দ্য রেইনস অব কাস্ট্যামিয়ার’। কাব্যের আড়ালে বলা হয় হাউজ রেইনের নাম, যারা ল্যানিস্টারদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। ব্যক্ত করা হয় ল্যানিস্টারদের শত্রুদের পরিণাম, যেমনটা রেইনদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল ল্যানিস্টার সেনাবাহিনী, যাদের ধ্বংসস্তূপে বৃষ্টির ক্রন্দন ধ্বনিত হয়, কিন্তু সেই ক্রন্দন শোনার জন্য বেঁচে নেই কেউই [৫]। বলা হয় টাইউইন ল্যানিস্টারের বীরত্বগাঁথা, যার ভয়ে কেঁপে ওঠে ল্যানিস্টারদের সকল শত্রুর অন্তরাত্মা। [৬]
পরিশেষে বলা যায়, লেখক জর্জ আর আর মার্টিন তার মুন্সিয়ানা দিয়ে একটি কাল্পনিক ঘটনা বা চরিত্রকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, তা সত্যিই অভাবনীয়। একদিন লেখক থাকবেন না, এই প্রজন্মের কেউই বেঁচে থাকবে না, কিন্তু লেখক তাঁর লেখনীকে সাহিত্যের যে সুউচ্চ স্তরে ধাবিত করেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষ তাঁকে সেভাবেই স্মরণ করবে।