মানুষের মুখে প্রচলিত পৃথিবীর প্রাচীনতম ১০ ভাষা

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের যাবতীয় যোগাযোগ ও আদানপ্রদানে ভাষা অবিচ্ছেদ্য। ভাষা হলো আমাদের ভাবের প্রকাশ। এটি হাজারো বছর আগে মানুষের মুখে একটু একটু করে প্রচলিত হয়েছে। বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের মুখে প্রচলিত আছে এমন ভাষার সংখ্যা ৬,৫০০ হলেও এর মাঝে ২ হাজার ভাষায় কথা বলার মানুষ আছে এক হাজারেরও কম। পৃথিবী থেকে ভাষা প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো ভাষা আবার প্রজন্মে প্রজন্মে মানুষের মুখে মুখে বদলে ভিন্ন রূপ নিচ্ছে। ভাষার বিবর্তন অনেকটা জৈবিক বিবর্তনের মতই যা দীর্ঘ সময়ের আবর্তে ঘটে থাকে এবং যার কোনো নির্দিষ্ট সূচনাবিন্দু নেই। তাই ভাষার সঠিক উৎপত্তিকাল এবং তুলনামূলক প্রাচীনত্ব নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে। তবুও, বর্তমানকালে মানুষের মুখে প্রচলিত আছে এমন ভাষাগুলোর মধ্য থেকে কিছু ভাষা বেছে নেয়া সম্ভব হয় তাদের প্রাচীনত্বের ভিত্তিতে, তাদের সমৃদ্ধির ভিত্তিতে। এমন ১০টি ভাষা নিয়ে আজকের আলোচনা।

হিব্রু ভাষা

আফ্রো-এশিয়ান ভাষাবংশের একটি অতিপ্রাচীন সেমিটিক (উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয়) ভাষা হলো হিব্রু। হিব্রু ভাষার জন্মকাল সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায় না। ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টের জন্মের ১০ হাজার বছর পূর্বেও হিব্রু ভাষার লিখিত রূপ পাওয়া যায়। এটি ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় ভাষা। বর্তমান পৃথিবীতে ৯০ লাখের অধিক মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। এর মাঝে ২ লাখের কিছু বেশি হিব্রু ভাষাভাষী মানুষ বাস করে আমেরিকায়। অবশিষ্ট প্রায় পুরো অংশেরই বসবাস ইসরায়েলে।

হিব্রু বাইবেলের জন্যই টিকে ছিল এই ভাষা; Image Source: ad-ne.org

হিব্রু ভাষার টিকে থাকা ভাষার ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর। কেননা, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকেই এ ভাষা মরে যেতে শুরু করে। তবে ভাষাটি কোনোক্রমে বেঁচে ছিল হিব্রু বাইবেলে। মানুষের মুখ থেকে হারিয়ে যাবার পর এ ভাষাটি ছিল কেবলই ইহুদী ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আর পূজারিদের ভাষা। অল্পবিস্তর সাহিত্যেও ব্যবহৃত হতো। ১৯ শতকে জায়নবাদের উত্থানের সাথে সাথে মৃতপ্রায় হিব্রু ভাষা প্রাণ ফিরে পায়। এরপর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে হিব্রু ভাষাকে করা হয় সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। এরপর থেকে এই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা বাড়ছেই।

তামিল ভাষা

তামিল বর্ণমালা; Image Source: freelanguage.org

তামিল সিনেমার অনেক ভক্তই খুঁজে পাওয়া যাবে আমাদের দেশে। সিনেমার সাথে পরিচিতি থাকায় এই ভাষাটির সাথেও আছে অল্পবিস্তর পরিচিতি। অনেকেরই ধারণা, এটি কেবলই ভারতের তামিলনাড়ুর ভাষা। কিন্তু বিশ্বে তামিল ভাষাভাষী লোকজনের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ কোটি মানুষ তামিল ভাষায় কথা বলে। ভারতের তামিলনাড়ু ছাড়াও শ্রীলংকা আর সিঙ্গাপুরের অন্যতম সরকারি ভাষা এই তামিল ভাষা। তামিল ভাষাকে বলা পৃথিবীতে বেঁচে থাকা প্রাচীনতম ক্লাসিক্যাল ভাষা। দ্রাবিড়িও এ ভাষার আদি নমুনা তামিল-ব্রাহ্মি লিপির খোঁজ মেলে তামিলনাড়ুর আদিচানাল্লুরে, যা আনুমানি ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। ভাষাবিদদের ধারণা, এর কাছাকাছি সময়েই এ ভাষার উৎপত্তি। তাছাড়া, প্রাচীনতম যে ভাষাগুলো আজও মানুষের মুখে প্রচলিত আছে, সেগুলোর মাঝে তামিল ভাষাই সবচেয়ে সমৃদ্ধ। এ ভাষায় সাহিত্য রচিত হচ্ছে প্রায় ২ হাজার বছর ধরে। তামিল সাহিত্যের আদিরূপ সঙ্গম সাহিত্যের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ। এতেই বোঝা যায় এ ভাষার সমৃদ্ধি ও পরিপক্কতা। ভারতে এখনো পর্যন্ত যত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী আর খোদাই করা লিপি পাওয়া গেছে, তার অর্ধেরকের বেশিই তামিল ভাষার!

ফার্সি ভাষা

মহাকবি ফেরদৌসির শাহানামা ফার্সি সাহিত্যের জ্বলজ্বলে নক্ষত্র; Image Source: amazon.com

পারসিয়ান বা ফার্সি ভাষা বর্তমান বিশ্বে তিনটি দেশ, ইরান, আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা। কিন্তু এ ভাষার সাহিত্য এতটাই সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় যে এটি কেবল এর স্থানীয় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মাঝে আবদ্ধ নেই। বিশ্বে মাত্র ১১ কোটি ফার্সি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী থাকলেও এ ভাষার সাহিত্য চর্চা হয় বিশ্বের সকল প্রান্তেই। ফেরদৌসি, রুমী, খৈয়াম আর নিজামীর মতো ভুবনখ্যাত কবি সাহিত্যিকেরা এ ভাষাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে। এর সমৃদ্ধি বোঝাতে একে মধ্যযুগীয় ইংরেজির সাথেই তুলনা করা যাক। মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে, মধ্যযুগে শেক্সপিয়ার যে সাহিত্য রচনা করে গেছেন, তা বর্তমানে ইংরেজি ভাষাভাষীদের পড়তে কিছুটা হলেও ঝক্কি পোহাতে হয়। অথচ শেক্সপিয়ারের আরো ৬০০ বছর আগে সাহিত্য চর্চা করে যাওয়া ফেরদৌসির শাহানামা বর্তমানকালের ফার্সি ভাষী মানুষ অনর্গল পড়ে যেতে পারেন! ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর ইন্দো-ইরানিয়ান শাখা থেকে ফার্সি ভাষার উদ্ভব। খুব সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ শতকের দিকে এ ভাষার প্রাচীন রূপ কাঠামো লাভ করে। পরবর্তীতে পারস্য সাম্রাজ্যের বিস্তার এ ভাষাকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে তোলে।

ম্যাসেডোনিয়ান ভাষা

ম্যাসেডোনিয়ান ভাষার প্রাচীন রূপ; Image Source: youtube.com

ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর একটি স্ল্যাভিক ভাষা হলো ম্যাসেডোনিয়ান। এর উৎপত্তিকাল নবম খ্রিস্টাব্দ বলা হলেও মূলত ওল্ড পোল্যান্ড থেকে দেশান্তরী হয়ে পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করা স্ল্যাভিক জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষারই খানিকটা রূপান্তরিত রূপ আজকের ম্যাসেডোনিয়ান। আর এটি ৬০০ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। এই পোলিশ জনগোষ্ঠী প্রাথমিকভাবে ৩টি উপভাষায় কথা বলতো, পূর্বাঞ্চলীয়, পশ্চিমাঞ্চলীয় এবং দক্ষিণাঞ্চলীয়। এদের মাঝে দক্ষিণাঞ্চলীয় স্ল্যাভিক ভাষাটিই পরবর্তীকালে ম্যাসেডোনিয়ান ভাষার রূপ পায়। খ্রিস্টীয় ৯০০ অব্দের দিকে সিরিল এবং মেথোডিয়াস এ ভাষার লিপিবদ্ধ রূপ সংকলন করেন। বর্তমানে এটি প্রায় আড়াই কোটি মানুষের মুখের ভাষা, যার সিংহভাগই ম্যাসেডোনিয়ার অধিবাসী। এছাড়া রোমানিয়া, আলবেনিয়া এবং সাইবেরিয়ায় ম্যাসেডোনিয়ান ভাষাভাষী মানুষের বসবাস রয়েছে।

বাস্ক ভাষা

বাস্ক ভাষাভাষী মানুষের বসবাস এ অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ; Image Source: britannica.com

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতোই এক চিরন্তন রহস্য বাস্ক ভাষা, যে রহস্য আজ অবধি ভেদ করা সম্ভব হয়নি। কেননা, বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত ভাষাগুলোর মাঝে এক বাস্ক ভাষার উৎসই আমাদের জানা নেই। শুধু উৎসই নয়, আমরা জানি না এটি কোন ভাষা বংশে কিংবা কোন অঞ্চলে, কখন এর উৎপত্তি হয়েছিল। পৃথিবীতে প্রায় ১২ লাখ মানুষের মাতৃভাষা বাস্ক ভাষা সম্বন্ধে এতটুকুই কেবল নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি বেশ প্রাচীন একটি ভাষা, যা ‘রোম্যান্স’ ভাষাগুলোর আবির্ভাবের পূর্বেই বিরাজমান ছিল। রোম্যান্স ভাষা বলতে আধুনিক কিছু ভাষাকে (ফরাসি, স্প্যানিশ ইত্যাদি) বোঝানো হয়, যেগুলো খ্রিস্টীয় ৩য়-৮ম শতকের মাঝে ল্যাটিন ভাষার কিছুটা বিকৃত চলিত রূপ থেকে প্রচলিত হয়েছিল। স্পেন ও ফ্রান্সের সীমান্ত ঘেষা পিরিনিজ পর্বতাঞ্চলের বাস্ক দেশের মানুষেরাই এ ভাষায় কথা বলে। খুব অল্প সংখ্যক বাস্ক ভাষাভাষী মানুষ স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে বসবাস করে।

লিথুনিয়ান ভাষা

লিথুনিয়ান বর্ণমালা; Image Source: commons.wikimedia.org

 

ইউরোপীয় ভাষাগুলোর প্রায় সবই এসেছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকে। লিথুনিয়ানও ভিন্ন নয়। এই ভাষাগোষ্ঠীর বাল্টিক শাখা থেকে উদ্ভুত হয়েছে লিথুনিয়ান ভাষা। এই ভাষার বিকাশকাল খুব সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩,৫০০ অব্দের দিকে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকেই বিভিন্ন সময়ে ফরাসি, ইংরেজি, স্প্যানিশের মতো ভাষাগুলোর জন্ম হলেও কেউই নিজেদের ভাষাগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারেনি। এক্ষেত্রে লিথুনিয়ান ভাষা অনন্য। ৩,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে যখন ইন্দো-ইউরোপীয় মৌলিক ভাষাটি বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হতে শুরু করলো, তখন অন্য সকলে পূর্বপুরুষদের তুলনায় ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হলেও লিথুনিয়ান ভাষা এর পূর্বপুরুষদের বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছিল অনেকাংশে। এজন্য ভাষাবিদগণ একে বলেন ‘প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়’ ভাষা। এই ভাষার লিখিত রূপ ল্যাটিন বর্ণমালা নির্ভর। বর্তমানে প্রায় ৩২ লাখ মানুষ লিথুনিয়ান ভাষায় কথা বলে।

ফিনিশ ভাষা

ফিনিশ ভাষার ফ্যামিলি ট্রি; Image Source: languagesoftheworld.info

ফিনিশ ভাষার উৎপত্তি উরালিক ভাষাবংশের ফিনিক শাখা থেকে। এই ফিনিক শাখার উদ্ভব হয় আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ধারণা করা হয়, এর কাছাকাছি সময়েই এ ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। সঠিক সময় না জানা গেলেও ফিনিশ ভাষা অত্যন্ত প্রাচীন একটি ভাষা তাতে সন্দেহ নেই। এ ভাষার লিখিত রূপ সে তুলনায় বেশ নতুন। ষোড়শ শতকে ল্যাটিন বর্ণমালার উপর নির্ভর করে ফিনিশ ভাষার লিখিত রূপ সৃষ্টি হয়। তথাপি শতাব্দীর পর শতাব্দী এ ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ ধার করে। মজার ব্যাপার হলো, ফিনিশ ভাষার অসংখ্য শব্দ রয়েছে যেগুলো তাদের মূল ভাষায়ই এখন আর প্রচলিত নেই। যেমন, রাজা’র জার্মান প্রতিশব্দ ‘কুনিনগাজ’ থেকে ফিনিশ শব্দ ‘কুনিনগাস’ এসেছে যা এ ভাষায় প্রচলিত থাকলেও জার্মান ভাষায় এখন আর ব্যবহৃত হয় না। ২০১২ সালের হিসেবে বিশ্বে ফিনিশ ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ৫৪ লক্ষ

জর্জিয়ান ভাষা

কার্টভেলিয়ান ভাষাবংশের সদস্য মাত্র চারটি ভাষা; Image Source: languagesoftheworld.info

জর্জিয়ান ভাষা একটি জটিল অথচ সুন্দর এবং সমৃদ্ধ ভাষা। ককেশীয় অঞ্চলের ভাষাগুলোর মাঝে সবচেয়ে প্রাচীন সাহিত্যিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ভাষা হলো জর্জিয়ান ভাষা। সাধারণত, কোনো বিশেষ অঞ্চলের ভাষাগুলো একই ভাষাবংশের অন্তর্গত হয়। কিন্তু ককেশীয় অঞ্চলের পাশাপাশি তিনটি দেশ আর্মেনিয়া, আজারবাইজান আর জর্জিয়ার প্রধান ভাষাগুলো এসেছে তিনটি ভিন্ন ভাষাবংশ ইন্দো-ইউরোপীয়, তুর্কিক এবং কার্টভেলীয় থেকে। এর মাঝে কার্টভেলীয় ভাষাবংশের ভাষার সংখ্যা মাত্র ৪। এ চার ভাষার মাঝে জর্জিয়ান ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, আনুমানিক ৩৭ লক্ষ। অপর তিনটি ভাষা কেবল কিছু সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রচলিত আছে। তাছাড়া, জর্জিয়ান ভাষাসহ কার্টভেলীয় ভাষাবংশের অপর তিনটি ভাষা বাস্ক ভাষার মতোই অন্যদের চেয়ে আলাদা প্রকৃতির। জর্জিয়ান ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে এবং এর লিখিত রূপও এ তালিকায় অপরাপর ভাষাগুলোর তুলনায় বেশ পুরনো (হিব্রু বাদে)।

আইসল্যান্ডিক ভাষা

আইসল্যান্ডিক ভাষা প্রায় পুরোটাই আইসল্যান্ডে সীমাবদ্ধ; Image Source: legacy.joshuaproject.net

আইসল্যান্ডিক ভাষা একটি জার্মানিক ভাষা। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের একটি শাখা জার্মানিক ভাষার ছিল কয়েকটি উপশাখা। সেগুলোর মাঝে একটি হলো পশ্চিম জার্মানিক যা থেকে জার্মান ভাষার উৎপত্তি, আর আইসল্যান্ডিকের উৎপত্তি উত্তর জার্মানিক থেকে। উত্তর জার্মানিক ভাষা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে এসে বিকৃত হয়ে আইসল্যান্ডিক ভাষায় পরিণত হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ আইসল্যান্ডিক ভাষাভাষী মানুষ আছে যার সিংহভাগেরই বসবাস আইসল্যান্ডে। ডেনমার্ক, কানাডা আর যুক্তরাষ্ট্রে অল্প সংখ্যক আইসল্যান্ডিক ভাষাভাষী মানুষের বসবাস আছে যাদের অধিকাংশই আবার উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমন করা আইসল্যান্ডের নাগরিক। এ ভাষাটি লিথুনিয়ান ভাষার মতো প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা না হলেও, এটিও এর পূর্বসূরীর, বিশেষ করে উত্তর জার্মানিক ভাষার অনেক বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখেছে। বিশেষত, ব্যাকরণগত দিক থেকে অনেক কিছুই সংরক্ষিত থাকায় একে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা না বললেও একটি রক্ষণশীল ভাষা বলা হয়।

আইরিশ-গ্যালিক ভাষা

আইরিশ-গ্যালিক ভাষার বিবর্তন; Image Source: en.wikibooks.org

যদিও ইরোপে আইরিশ-গ্যালিক ভাষা জানা মানুষের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখের মতো, তথাপি দৈনন্দিন জীবনে এ ভাষায় কথা বলা মানুষ মাত্র ৭৩ হাজার! ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা কম হলেও এ ভাষার রয়েছে বেশ লম্বা ইতিহাস। ৩য়-৪র্থ খ্রিস্টাব্দে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সেল্টিক শাখা থেকে আইরিশ-গ্যালিক ভাষার উৎপত্তি। এর উৎপত্তিস্থল আয়ারল্যান্ড। এটি বর্তমানে আয়ারল্যান্ডের সরকারি ভাষা। আইরিশ-গ্যালিক জানা মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম না হলেও অধিকাংশের জন্যই এ ভাষা দ্বিতীয় ভাষা। ল্যাটিন বর্ণমালা নির্ভর এ ভাষার লিখিত রূপ তৈরি হয়েছে মধ্যযুগে, যখন এর বিবর্তনের ক্লাসিক্যাল অধ্যায় চলছে। প্রাচীন, মধ্যযুগীয় আর ক্লাসিক্যাল, আইরিশ-গ্যালিক ভাষার বিবর্তনের এ তিনটিই রূপ। ক্লাসিক্যাল যুগের পর আধুনিককালে এ ভাষায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

This article is written in Bangla language. It's about 10 of the oldest languages still in use.
Necessary references are hyperlinked inside the article.

 

Featured Image: undark.org

Related Articles

Exit mobile version