১৯৮৪ সালে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (CDC) এর প্রকাশিত তথ্যমতে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭,৭০০ জন নাগরিক এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩,৫০০ জন। এতে করে বোঝা যায়- তখন ব্যাপকহারে এইডস সংক্রমিত হয়েছিল দেশটিতে। মার্কিন গবেষকরা ঐ বছর জনসম্মুখে প্রথমবারের মতো এইডসের কারণ উপস্থাপন করেন।
এই রোগের উৎপত্তি নিয়ে সিডিসি (CDC) এর গবেষকরা ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল অবধি বিস্তর গবেষণা করছিলেন ঠিকই। কিন্তু এমন সংকটকালেও নীরব ভূমিকা পালন করছিলেন দেশটির নেতারা। প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় নেতারাও মুখ খোলেননি দেশের স্বাস্থ্যখাতের এমন সংকটকালে। অতঃপর ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বরে এইডস নিয়ে জনসম্মুখে প্রথম বিবৃতি দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান। কিন্তু ততদিনে এইডস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গন্ডি পেরিয়ে আমেরিকা মহাদেশের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। পরের দিনগুলো প্রায় সবারই জানা। সংক্রামক না হলেও মহামারির মতোই পৃথিবীতে সংকট সৃষ্টি করতে থাকে এইডস।
চলুন জানা যাক এইডস নিয়ে মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের প্রথমদিককার গবেষণা ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ কেমন ছিল সেই সম্পর্কে।
এইডসের শুরু
সিডিসি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ১৯২০ সালে সর্বপ্রথম এইচআইভির (HIV) উৎপত্তি হয় কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের কিনশাসায়। কঙ্গো থেকে খুব দ্রুত এটি হাইতি এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তখনও অভিবাসন আইন শক্তহাতে কার্যকর করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মেক্সিকো ছাড়া অন্যান্য দেশের অভিবাসীরা খুব সহজেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারতো। ইউরোপ এবং মেক্সিকোর পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসন প্রত্যাশীদের যাত্রা শুরু হতো আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলো থেকে। এতে করে খুব সহজেই নিউ ইয়র্কে প্রবেশ করে এইডস!
কয়েক দশক পর ১৯৭০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথমবারের মতো নতুন এক রোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। তখনও এটি নিয়ে খুব গুরুত্ব সহকারে ভাবেনি দেশটির স্বাস্থ্যবিভাগ। ১৯৮০ এর দশকে মার্কিন স্বাস্থ্যবিভাগের নিকট নতুন এক এই সমস্যা নিয়ে নানারকম অভিযোগ আসে। লস অ্যাঞ্জেলস এবং নিউ ইয়র্কে সমকামী পুরুষদের অজানা রোগে অসুস্থ হওয়ার খবর পায় তারা। এমন অসুখে ভুগতে থাকা বেশিরভাগ পুরুষের বয়স ছিল ২০ থেকে ৪০ এর মধ্যে। যদিও প্রথমদিকে একে শারীরিক দুর্বলতা হিসেবেই ভেবেছিল সিডিসি।
ততদিনে অবশ্য সমকামী কমিউনিটিতে ‘গে প্লেগ’ হিসেবে এটি পরিচিতি অর্জন করে। অনেকে এটি মোকাবেলা করার জন্য সমকামিতা ত্যাগ করলেও অজানা এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পাননি। বরঞ্চ প্রথমদিকে অসুস্থ হওয়া লোকজন দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করতেন। এরই মধ্যে সিডিসির ল্যাবে এটি নিয়ে সীমিত আকারে গবেষণা শুরু করছিলেন মার্কিন গবেষকরা।
গবেষণা চললেও এই রোগ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি মার্কিন গবেষকরা। এতে করে অজানা এই রোগ নিয়ে বিপাকে পড়ে মার্কিন পত্রিকাগুলা। অনেক সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এই রোগের সংবাদ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যতিক্রমী ভূমিকা পালন করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তারা এই রোগে আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণকারী লোকেদের নিয়ে স্বল্প পরিসরে সংবাদ প্রচার করা শুরু করে। যদিও এরপর এইডস সম্পর্কিত সংবাদগুলো পত্রিকাটির প্রথম পাতায় স্থান পেতে আরো দুই বছর সময় লেগেছিল। এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ জন এইডসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
জনমানুষের মাঝে এই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি না হওয়ার জন্য পত্রিকাগুলোর এমন অবহেলা অনেকাংশে দায়ী। অন্যথায় ক্ষয়ক্ষতি কম হতে পারতো। এমনটাই দাবি করেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাবেক সম্পাদক ম্যাক্স ফ্র্যাঙ্কেল। পত্রিকাটির মেট্রোপলিটন বিভাগের রিপোর্টার ডেভিড ডানল্যাপ অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। ১৯৮১ সাল থেকে এই পত্রিকায় কাজ করছেন তিনি। তিনি বলেন,
এমনও কিছু বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল যেগুলো কখনোই সাদা কলামে লেখা হয়নি! আপনি নিজেই জানেন স্বেচ্ছায় এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
এইডসের সংবাদে কর্তৃপক্ষের নীরবতা
ল্যাব টেস্টের পর ১৯৮২ সালে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এইডস নিয়ে সর্বপ্রথম বিবৃতি দেয়। নিয়মিত সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি নতুন নামের রোগটি প্রথমদিকে সংবাদপত্র এবং জনমানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। আর যতটুকু মনোযোগ পেয়েছিল তার পুরোটাই ছিল নেতিবাচক। সিডিসির পরেই ৬০০ জন আক্রান্তের খবরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হয়ে জনসম্মুখে বিবৃতি দেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ল্যারি স্পেইকস। যদিও সেদিন কনজারভেটিভ সাংবাদিক লিস্টার কিংসোলবিংয়ের করা প্রশ্নে কিছুটা বিপাকে পড়েন ল্যারি।
প্রশ্নের মাঝে কিংসোলবিং একে ‘সমকামী প্লেগ‘ হিসেবে উল্লেখ করায় অন্য সাংবাদিকরা হাসিঠাট্টা করেন। মূলত প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান নিজে না এসে এভাবে বিবৃতি প্রদানের কারণেই এমন অদ্ভুতুড়ে কথাবার্তা শুরু করেন এই সাংবাদিক। পরবর্তীতে কিংসোলবিংকে উদ্দেশ্য করে নিজে এইডসে আক্রান্ত নন বলে মন্তব্য করেন হোয়াইট হাউস মুখপাত্র! অতঃপর ১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো কংগ্রেসে এইডস নিয়ে আলোচনা হয় এবং সেদিন মাত্র একজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বক্তৃতায় ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি বিল ড্যানেমেয়ার সমকামীদের আচারণ এবং এইডস আক্রান্ত হলে প্রাথমিক লক্ষণ কেমন হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তবে সে সময়ের কয়েকজন ক্ষমতাবান রাজনৈতিক লোকের প্রচেষ্টা ছিল উল্লেখযোগ্য। তারা বিভিন্নভাবে চেয়েছেন যাতে এইডস আক্রান্ত রোগীদের আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া যায়। এছাড়াও এর চিকিৎসা এবং গবেষণায় নাগরিকরা যাতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হন সে ব্যাপারে রেগান প্রশাসনের উপর চাপ প্রয়োগ করেন তারা। যদিও অন্যান্য রিপাবলিকান নেতারা এই খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে নানারকম সমস্যা তৈরি করেন।
রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কৃত্রিম বাজেট সংকট
১৯৮৩ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন গবেষকরা বুঝতে পারেন যে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কারণ মাত্র ১ বছরের মধ্যেই দেশটিতে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়ে যায়। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার তখনও এটি মোকাবেলা করার ব্যাপারে কোনোপ্রকার মন্তব্য করেনি। সেই সাথে সিডিসির মাধ্যমে রোগীদের সেবা দানে বিনিয়োগের ব্যাপারেও সম্মতি জানায়নি তারা। আর পুরো পদক্ষেপটি কংগ্রেসনাল প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য কঠিন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এইডসের জন্য প্রথম যে অর্থ অনুমোদন করেছিল সেটি বেশ সমালোচিত হয়।
ফুসফুস প্রদাহ এবং বিষাক্ততার লক্ষণ পরীক্ষার জন্য বার্ষিক বাজেটের সাথে সম্মিলিতভাবে এইডসের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে রেগান প্রশাসন। আর এই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের বাৎসরিক বাজেট কমিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান। এতে করে গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ক্ষেপে ওঠেন। সমকামীদের দায়ী করার কারণে তারা বিস্তর গবেষণার দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন কর্মসূচী শুরু করেন।
সিডিসির সহকারী পরিচালক ডক্টর ওয়াল্টার ডোডলকে লেখা এক চিঠিতে সংস্থাটির তৎকালীন একজন কর্মী সে সময়ের হতাশার কথা উল্লেখ করেন। চিঠি থেকে জানা যায় অপর্যাপ্ত তহবিল এইডস মোকাবেলায় গবেষকদের কাজকে সীমাবদ্ধ করেছিল। ফলশ্রুতিতে এইডস নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সিডিসির তথ্যমতে, ঐ বছর শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বমোট ৪,৭০০ জন এইডসে আক্রান্ত হন এবং ২,০০০ এর অধিক রোগী মৃত্যুবরণ করেন।
সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ
১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচআইভি পজেটিভ পুরুষদের সাহায্যার্থে প্রথমবারের মতো ‘দ্য গে মেন্স হেলথ ক্রাইসিস’ প্রতিষ্ঠা করেন লেখক ল্যারি ক্র্যামের। যদিও রাজনৈতিক নেতাদের ষড়যন্ত্রে নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা থেকে বিতাড়িত হন ল্যারি। পরবর্তীতে অবশ্য আরও শক্তিশালী গোপন সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি। সমকামী নারী, পুরুষদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে তার সংগঠনের সদস্যরা।
এছাড়াও সরকারের আর্থিক অসহযোগিতা এবং সমন্বয়হীনতার অভাবে এইডস নিয়ে বিপাকে পড়েন মার্কিন সচেতন নাগরিকরা। অতঃপর স্থানীয় নেতারা এগিয়ে আসেন জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে। ১৯৮৪ সালের শেষদিকে সান ফ্রান্সিসকো শহরের সেক্স ক্লাবগুলো বন্ধ করে সেখানে স্থায়ীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং জনসাধারণের সাহায্যর্থে রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। যদিও স্থানীয় নেতারা ততদিনে বুঝতে পারেন স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম কোনোভাবেই এই দ্রুত বর্ধনশীল রোগ থেকে তাদের মুক্ত করতে পারবে না।
১৯৮৫ সালের প্রথমদিকে ডাক্তার ডোনাল্ড ফ্রান্সিসের নেতৃত্বে দেশটির প্রথম এইডস প্রতিরোধী পরিকল্পনা ঘোষণা করে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। যদিও ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে এটি প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয় হোয়াইট হাউজ। পরবর্তীতে ডাক্তার ফ্রান্সিস পাবলিক হেলথ পলিসি নামক একটি জার্নালে মর্মান্তিক এই ঘটনা সম্পর্কে লিখেন। তার ভাষ্যমতে সিডিসির এইডস বিষয়ক কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ডক্টর জন বেনেট সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে বলেন,
Don, they rejected the plan. They said, ‘Look pretty and do as little as you can.
অতঃপর ১৯৮৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এইডস সম্পর্কে মুখ খোলেন। তিনি একে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বাজেট বৃদ্ধির কথা জানান। অক্টোবর মাসের ২ তারিখ কংগ্রেসে এইডস নিয়ে রিসার্চের জন্য ১৯০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়। আর অঙ্কের হিসেবে এটি ছিল সিডিসির আবেদন করা অর্থের থেকেও ৭০ মিলিয়ন বেশি।
একইদিনে প্রেসিডেন্ট রেগানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অভিনেতা রক হাডসন এইডসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর খবরটি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলে এটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল মেডিসিন একাডেমি অব সায়েন্স এবং রেগানের সার্জন সি. এভেরেট কোপ এইডসের বিরুদ্ধে আনীত পদক্ষেপসমূহে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়। অতঃপর প্রচণ্ড চাপের মাথায় তদন্তের জন্য একজন কমিশনারও নিযুক্ত করেন প্রেসিডেন্ট রেগান। যদিও একে জনগণের চোখে ধুলা দেয়ার মতো একটি বিষয় হিসেবেই দেখেন অনেকে।
১৯৮৭ সালের শেষদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইডসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পায়। টিভি, পত্রিকা এবং জনসমাগম হয় এমন স্থানে “America Responds to AIDS” বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বাড়িতে এইডসের সচেতনামূলক কাগজপত্র বিলি করার ব্যবস্থা করেন ডাক্তাররা। এতকিছুর পরেও ১৯৯০ এর দশকে প্রায় ৪৭,০০০ মার্কিন নাগরিক এইডসে আক্রান্ত হন। আর ২০১৯ সালের হিসেবে দেশটির ১.১ মিলিয়ন নাগরিক এইডস নিয়েই জীবনযাপন করছেন যা রীতিমতো ভয়বাহ।