বাল্টিক উপসাগরীয় দেশ লিথুয়ানিয়ার উত্তরে একটি বাণিজ্যিক শহর, সিউলিয়াই। ব্যস্ত সিউলিয়াই থেকে মাত্র ১২ কি.মি. দূরেই দাঁড়িয়ে আছে একটি ছোটখাটো পাহাড়। পাহাড় না বলে টিলা বলাই সমুচিত হবে। কিন্তু আর দশটা পাহাড়-টিলার চেয়ে আকারে, গঠনে, বিশেষণে একদমই আলাদা। চারদিকে সবুজ ঘাসে ঢাকা সমতল জমিতে হঠাৎ যেন ধূসর এক দ্বীপ জেগে উঠেছে। কয়েক লক্ষ ছোট বড় ক্রুশের স্তুপের ভারে নতজানু এই টিলার অদ্ভুতুড়ে অবয়ব দূর থেকেই পথিকের মনে এক অজানা শিহরণ জাগায়। মৃদু বাতাসের দোলায় রোজারির দানাগুলো একসাথে টুং টাং শব্দে বেজে উঠে, সৃষ্টি করে এক গা ছম ছমে পরিবেশ। এখানে আকাশের বিশাল ক্যানভাসের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার ক্রুশ, যীশু কিংবা মাতা মেরীর মূর্তি। এই পাহাড়ের নিচে সিঁড়িতে দাঁড়ালে মনে জাগবে প্রশান্তির ভাব অথবা ভুতুড়ে অস্বস্তি। জুরগাসিয়াই গ্রামের পাশে অবস্থিত প্রায় ১৮৬ বছর পুরনো এই মনুষ্য কীর্তির নাম –
ক্রুশ পাহাড় রহস্য: ধর্ম ও চেতনার এক আশ্চর্য মেলবন্ধন
ক্রিযু কালনাসের প্রবেশ মুখেই যীশুখ্রিস্টের একটি বিশাল মূর্তি দু’হাত বাড়িয়ে পথিককে স্বাগত জানাচ্ছে। ধারণা করা হয়, এখানে প্রায় ২,০০,০০০ এর ও অধিক ক্রস, রোজারি, যীশু ও মেরীর মূর্তি আছে। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অসংখ্য দর্শনার্থী ও ভক্তদের রেখে যাওয়া নতুন নতুন ক্রুশ বা স্মৃতিচিহ্নে এ সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। কাঠ, পাথর, গ্রানাইট, ধাতু- নানা উপাদানে তৈরি ছোট বড় অসংখ্য ধর্মীয় প্রতীক আর স্থানীয় মোটিফের অগণিত কারুশিল্পের স্তরে স্তরে সৃষ্টি হয়েছে চোখ ধাঁধানো এই জগৎ।
লিথুয়ানিয়ার জাতীয় পরিচয় ও ভাবমূর্তিতে ক্রুশের পাহাড় এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু কবে কীভাবে এখানে ক্রস স্থাপন শুরু হয়েছে আর কীভাবেই বা এই টিলার সৃষ্টি হয়েছে তার প্রকৃত তথ্য এখনও অজানাই রয়ে গেছে। পাহাড়টি ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখা নানা রকম অদ্ভুত দৃশ্য, সাধু দর্শন কিংবা অলৌকিক ঘটনা এই যুগেও সবার মনে একই সাথে অলৌকিক আবহ এবং কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। এই পাহাড়ে লুকিয়ে আছে অনেক গল্প, অনেক রহস্য আর নীরব প্রতিরোধের ইতিহাস। আর তাই ভ্রমনার্থীদের কাছেও ক্রিযু কালনাসের সাংস্কৃতিক আবেদন অনেক।
কিভাবে তৈরি হলো ক্রুশের পাহাড়
সুদূর ১২ শতাব্দীতে সিউলিয়াই শহরের গোড়াপত্তন। শহরটি শুরুতে প্যাগান রীতিতে বিশ্বাসীদের দখলে থাকলেও, কিছুদিন পরেই জার্মান ক্যাথলিক অর্ডার টিউটনিক নাইটস এই অঞ্চল দখল করে নেয়। নাইটদের কালো ক্রসের পতাকা তলে ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্ম এই অঞ্চলে প্রসার লাভ করে। বলা যায় তখন থেকেই মধ্যযুগীয় লিথুয়ানিয়ার স্বকীয়তার এই প্রতীক স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয়। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম এই পাহাড়ে ১৮৩১ সাল থেকে ক্রুশ স্থাপনের কথা বলা হলেও স্মৃতি স্তম্ভে এই প্রতীকের ব্যবহার সেই ১৩ শতক থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বিস্তৃত সবুজ সমতলে হুট করে এই পাহাড় কিভাবে সৃষ্টি হলো, সেই রহস্যের সমাধান আজও হয়নি। বরং স্থানীয় শিল্প ও ইতিহাস গবেষকরা এখনো প্রচলিত কিংবদন্তিগুলোই ধারণ করে চলেছেন।
লোকমুখে প্রচলিত আছে, টিলার জায়গাটিতে প্রাচীনকালে একটি চার্চ ছিল। একদিন প্রবল ঝড়ের সময় চার্চের উপর বজ্রপাত হয়। দীর্ঘ সময়ে ঝড়ো বাতাসে বয়ে আনা বালি, পাথরে চার্চের ভিতরের মানুষজন নিয়ে চার্চটি চাপা পড়ে যায়। জনশ্রুতি আছে, ভোরে সূর্যোদয়ের সময় পাহাড়ের পাদদেশে সেই ভুতুড়ে পাদ্রীদের নীরব মিছিল দেখা যায়।
১৩ শতকের প্রথম দিকে এই টিলায় সামোগিশিয়ার প্যাগান ব্যারনদের কাঠের দূর্গ ছিল। ১৩৪৮ সালে জার্মান পাদ্রী-যোদ্ধারা খ্রিস্টীয়করণের অংশ হিসেবে এই দূর্গ ধ্বংস করে। প্রচলিত ধারণা মতে, যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া সৈনিকরা তাদের মৃত সহযোদ্ধাদের একত্রিত করে এই স্থানে গণ কবর দেয়। আর এভাবেই উঁচু টিলার সৃষ্টি হয়। ভোরে ভুতুড়ে পাদ্রীদের মিছিল আর রাতে পরাজিত সৈনিকদের আত্মারা নীরবে ঘোরাফেরা করে বলে স্থানীয়দের কাছে শোনা যায়।
তবে শুধুই একটি সাধারণ পাহাড় থেকে ক্রুশের পাহাড়ে পরিণত হওয়ার গল্পটি এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিংবদন্তি। একবার মুমূর্ষু এক কন্যার পিতা তার সুস্থতা কামনায় দিন রাত প্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন। মৃত্যুশয্যায় থাকা প্রিয় সন্তানের জন্যে তিনি কিছুই করতে পারছিলেন না। এমন সময় এক রাতে, স্বপ্নে এক মহিলাকে দেখলেন। স্বপ্নে তাকে বলা হলো, কাঠের একটি ক্রুশ বানিয়ে তা যেন কাছেই কোনো পাহাড়ে স্থাপন করে। আর এমনটা করলেই তার মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বাবা সকালেই একটি ক্রুশ বানিয়ে পাহাড়ে রেখে এলেন। ঘরে ফিরতেই তিনি দেখেন, সম্পূর্ণ সুস্থ মেয়ে তাকে স্বাগত জানাতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। এক পিতার বিশ্বাস ও প্রতিদানের এই গল্প যুগ যুগ ধরে লিথুয়ানিয়ার মানুষের মাঝে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। আজও বহু মানুষ মনের আশা পূরণে এখানে ক্রস রেখে যায়।
প্রতীকী প্রতিবাদের সুদীর্ঘ ইতিহাস
আধুনিক বিশ্বে লিথুয়ানিয়া নামটি অধিক পরিচিত না হলেও মধ্যযুগীয় ইউরোপে দেশটির অপরিসীম ক্ষমতা ও প্রভাব ছিল। খ্রিষ্টীয় ১৫ শতক থেকে ১৭ শতক পর্যন্ত লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের মিত্রশক্তি ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাম্রাজ্য ছিল। রাশিয়ান সাম্রাজ্যের উত্থানের মাধ্যমে এই শক্তির পতন ও বিভাজন ঘটে। ১৭৭২ -১৭৯৫ সালের মধ্যে পোলিশ- লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথ বিভাজনে রাশিয়া লিথুয়ানিয়া দখল করে। রাশিয়ার রাজনৈতিক আগ্রাসনের সাথে আসে ধর্মীয় আগ্রাসন। ক্যাথলিক বিশ্বাসের পরিবর্তে অর্থোডক্স ক্রিশ্চিয়ানিটি এবং চার্চের প্রধান হিসেবে আসে রাশিয়ান জার। আর এখান থেকেই ক্যাথলিক লিথুয়ানিয়ানদের প্রতিবাদের ইতিহাসের সূচনা ঘটে।
রাশিয়ান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ১৮৩১ সালে। বিদ্রোহ চূড়ান্তভাবে দমন হলেও দমিত হয়নি তাদের মনোবল। আর তাই এই বিদ্রোহের সাথে একাত্বতার প্রতীক হিসেবে সিউলিয়াই এবং আশেপাশের এলাকাবাসীরা মৃতদের আত্মার উদ্দেশ্যে প্রাচীন দূর্গের এই পাহাড়ে ক্যাথলিক ক্রস স্থাপন করে। পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালের বিদ্রোহে আবারও বহু প্রাণহানি ঘটে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কবর দেয়ার জন্য মৃতদেহের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেককে সাইবেরিয়াতে যেতে বাধ্য করা হয়। সে সময় তাদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু ক্রুশ গেঁথে রাখা হয়, আবার কিছু রাখা হয় শুধুমাত্র জারের শাসনের প্রতিবাদে। ১৮৯৫ সাল নাগাদ এখানে প্রায় দেড়শ’র মতো ক্রুশ দাঁড়িয়েছিল। রাশিয়ান জারের শাসনামলে এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। ১৯১৮ সালে অবশেষে লিথুয়ানিয়া স্বাধীনতা ফিরে পায়। ক্যাথলিক রাষ্ট্র হিসেবে এরপর থেকে ক্রিযু কালনাস হয়ে ওঠে ভোজ ও খ্রিষ্টীয় আনুষ্ঠানিকতার স্থান। ১৯১৪ সালে যেখানে ক্রসের সংখ্যা ছিল ২০০। ১৯৪০ সালে তা প্রায় দ্বিগুণে পরিণত হয়।
কিন্তু ক্রুশের পাহাড়ে সবচেয়ে বড় আঘাত আসে যখন ১৯৪০ সালে লিথুয়ানিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশে পরিণত হয়। সোভিয়েত শাসনামলে সব ধরণের ধর্ম চর্চা নিষিদ্ধ করা হয়। সোভিয়েত নাস্তিক রাষ্ট্র হলেও লিথুয়ানিয়ার জনগণ যেখানে অর্থোডক্স সাম্রাজ্য মেনে নেয়নি, সেখানে নাস্তিকতা মেনে নেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাই ক্রুশের পাহাড় হয়ে ওঠে এই অঞ্চলের মানুষের প্রতিবাদের অন্যতম ভাষা। সোভিয়েত শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল ক্যাথলিক চার্চ। বিশেষত ‘৭০ এবং ‘৮০’র দশকে একাধিক প্রতিরোধ- বিদ্রোহ সংঘটিত হয় যেখানে ক্যাথলিক ধর্মযাজকেরা নাস্তিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নিজেদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এদিকে পাহাড়ে জমতে থাকে অগণিত ধর্মীয় প্রতীক- যীশু, মেরী কিংবা শুধুই ক্রস।
সোভিয়েত শাসনের ৫০ বছরে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করে পাহাড়ে এই প্রতিবাদের ভাষা দমিয়ে রাখতে। ধর্মীয় প্রতীক বহন করা ছিল তখন শাস্তি যোগ্য অপরাধ। পাহাড়ের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তারা যত দ্রুত ক্রস সরিয়ে ফেলে তত দ্রুতই আবার পাহাড়ে ক্রস বাড়তে থাকে। ১৯৬৩, ১৯৭১ এবং ১৯৭৫ সালে তিনবারে প্রায় ৬৫০০ ক্রস তারা বুলডোযার দিয়ে গুড়িয়ে দেয় এবং ধ্বংসাবশেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাথর আর ধাতব ক্রসগুলো শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবে তুলে নেয়া হয়। কাউকে এখানে ক্রস হাতে দেখলে জরিমানা করা হতো, এমনকি শাস্তিও পেতে হতো। এত কিছুর পরও রাতের আঁধারে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে প্রতিদিনই কেউ না কেউ ক্রুশ রেখে যেত।
সোভিয়েতরা এমনকি পয়ঃবর্জ্য আর ময়লার স্তূপ ফেলে এই পাহাড়কে ভাগাড়ে পরিণত করতে চেষ্টা করে। কিন্তু সব রকম দমন নিপীড়নকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ক্রুশের পাহাড় বিস্তৃত হতে থাকে, ঠিক যেমন মানুষের মাঝে বিস্তৃত হয় স্বাধীনতার আগুন। অবশেষে ১৯৯০ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে লিথুয়ানিয়া প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন হয়, প্রায় ৫৫,০০০ ক্রস সগর্বে ক্রিযু কালনাসে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান থেকে ক্রুশের পাহাড় হয়ে উঠল লিথুয়ানিয়ার অদম্য মনোভাব এবং জাতীয়তাবাদের প্রতীক ।
ক্রুশের পাহাড়- সর্বজনের তীর্থ
পাহাড়ের মাঝ বরাবর কাঠের রাস্তাটি দিয়ে সামনে এগোলে দেখা যায় আসলে এখানে একটি টিলা নয়। গঠনে অনেকটা ইংরেজি এম অক্ষরের মতো হওয়ায় দূর থেকে এমন দেখায়। সামনে আরও একটি ক্রুশে বোঝাই টিলা রয়েছে। নাম ক্রুশের পাহাড় হলেও শুধুই কি খ্রিষ্টীয় প্রতীক আছে এখানে? মূল পথ ছেড়ে ভিতরের দিকে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরতেই চারপাশে প্রতীকের কোলাহল একটু স্তিমিত হয়ে আসে। এবারে একটু ভালো করে তাকাতেই চোখে পড়ে নানা ধর্মের নানা রকম প্রতীক। পেন্টাগন, দ্য আই, পাখি, গাছ, আগুন, ভেড়া, স্ক্রল- কি নেই এখানে! এখানে মনের আশা পূরণে ভিড় করা মানুষের নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নেই। ল্যাটিন, গ্রীক, সিরিলিক এমনকি হিব্রু ভাষার লিপির দেখা পাওয়া যায় এখানে। এখনও লিথুয়ানিয়ার নানা প্রান্তেরমানুষ এখানে আসে। কেউ ক্রস রাখে, কেউ রোজারির ছড়া, কেউ বা মনের ইচ্ছেটিই কাগজে লিখে বিশ্বাসের কাছে সঁপে দেয়। আজও কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থ হয়ে ওঠা বা কোনো সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা পূরণে ক্রুশের পাহাড় তার কাজ করে যাচ্ছে।
পোপ দ্বিতীয় জন পল ১৯৯৩ সালে এই তীর্থস্থান ভ্রমণে আসেন। তিনি কাছেই একটা উপাসনালয় স্থাপনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। সেই সাথে বিশাল এক ক্রুশ স্থাপন করেন যাতে এলাকার মানুষকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ক্যাথলিক বিশ্বাসের প্রকাশ হিসেবে এই পাহাড়ের উত্থান হলেও ওটি কোনো একক গোত্রের মাঝে আর সীমাবদ্ধ নেই।
সত্যিকার অর্থে, ক্রুশের পাহাড় লিথুয়ানিয়ার জাতীয় চরিত্রের পরিচয় বহন করে। রাশিয়ান সাম্রাজ্য কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়ন শত চেষ্টা সত্বেও এদেশের মানুষের মন থেকে ধর্ম ও ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস মুছে ফেলতে পারেনি। কিন্তু ক্রিযু কালনাসের মাহাত্ম শুধু ধর্মীয় নয়। খালি চোখে যা কাঠ পাথরের ক্ষয়িষ্ণু জট, প্রকৃত দৃষ্টিতে তা একটি জাতির চিরন্তন প্রতিবাদের ভাষা। কখনোই নীরবে মেনে না নেওয়ার প্রতিজ্ঞা। কখনো মাথা নত না করা, কারো শাসনে বাধ্য থাকতে অস্বীকৃতি। জাতি হিসেবে লিথুয়ানিয়ানরা কখনোই বিকল্পহীনতা মেনে নেয়নি। আর তাই দেশটির অলিতে গলিতে কোথাও সোভিয়েত শাসনের চিহ্নের লেশমাত্রও নেই, কিন্তু ক্রুশের পাহাড় এই জাতির ইতিহাসে এবং মানুষের মনে লিথুয়ানিয়ার প্রতীক হিসেবে চিরস্থায়ী আসন গড়েছে।
ফিচার ইমেজ : dailymail.co