ক্লান্ত প্রুশিয়া বেশ কয়েক বছর যুদ্ধ নেপোলিয়নিক যুদ্ধ থেকে দূরে থাকে। ১৮০৭ এর আগস্ট থেকে পরের বছরের ডিসেম্বর অবধি ফরাসি সৈনিকরা প্রুশিয়াতে নিয়োজিত ছিল, তাদের খরচ দিতেও প্রুশিয়া বাধ্য হয়। ফরাসি দখলদারিত্বের ব্যয় ছিল তৎকালীন মুদ্রায় ২১৬ মিলিয়ন থেলার, যেখানে বার্ষিক সরকারি আয় এর ধারেকাছেও নেই। ১৮১৬ সালে প্রুশিয়ার বার্ষিক আয় ছিল সাকুল্যে ৩১ মিলিয়ন থেলার, যখন নেপোলিয়নের পতন ঘটে গেছে এবং প্রুশিয়া আগের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। সুতরাং অনুমান করা যায় কী পরিমাণ সমস্যার ভেতর দিয়ে ধ্বংসপ্রায় রাজ্যকে যেতে হয়েছিল, যা এমনকি নেপোলিয়নের পতনের পরেও বজায় ছিল।
এই সময় রাজা ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের সুযোগ হয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নজর দেবার। উগ্রপন্থী যুদ্ধবাজ সংঘ এখন নিষ্ক্রিয়, রানী লুইসাও প্রুশিয়ার অপমানজনক পরাজয়ের পর শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। রক্ষণশীল এবং পরিবর্তনের বিরোধী রাজনীতিবিদ ও সামরিক অফিসারেরাও কোণঠাসা। ফ্রেডেরিক নিজে মন থেকে সংস্কারের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী মন্ত্রী, আমলারা পদে পদে তাকে বাধা দিয়েছে। ফলে বহুকাল ধরে চলে আসা ব্যবস্থা থেকে প্রুশিয়া বের হতে পারেনি। এখন সুযোগ এসেছে ধংসস্তুপের উপর নতুন করে প্রুশিয়াকে গড়ে তুলবার। কিন্তু রাজা কি এই বিরাট দায়িত্ব সামনে থেকে পালন করতে পারার যোগ্য?
এককথায় উত্তর- না। ফ্রেডেরিক উইলিয়াম তুলনামূলকভাবে একজন ভাল মানুষ, সম্ভবত প্রুশিয়ার সমস্ত রাজার মধ্যে সবথেকে সচ্চরিত্র এবং মৃদুভাষী। নেপোলিয়ন তিলসিতের আলোচনার সময়ে ফ্রেডেরিকের সাথে প্রায় নিয়মিতই রাতের খাবার খেতেন, তার নিজের কথাতেই জানা যায় ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের মুখ থেকে কখনোই একটির বেশি দুটি বাক্য উচ্চারিত হত না। ফ্রেডেরিক নিজেকে সবকিছুর মধ্যমণি দেখতে পছন্দ করেন না। সিংহাসন তার কাছে একটি বোঝা মাত্র, তিনি জানেন আরো অনেকেই তার চেয়ে ভালভাবে প্রুশিয়াকে পরিচালনা করতে সক্ষম। কেবল হনজোলার্ন রক্ত শরীরে থাকায় তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও সবার মাথার উপর ছড়ি ঘোরাতে পারছেন।
হনজোলার্নদের ঐতিহ্য অনুযায়ী যেকোনো রাজপুত্রকেই পরিণত বয়সে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে সম্পৃক্ত করা হয়, যাতে তিনি রাজকার্য শিখে নিতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হলো রাজপুত্র থাকাকালীন তৃতীয় ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের বাবা ছেলেকে কিছুই শেখাননি, যা ফ্রেডেরিক নিজের ছেলের ব্যাপারে সংশোধন করেন। রাজা নির্ভর করতেন তার মন্ত্রীপরিষদের উপর, যাদের সাথে প্রায়শই সচিবদের মতানৈক্য হত। এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার প্যাঁচে পড়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা প্রশাসনকে স্থবির করে ফেলেছিল। অনেক সংস্কারপন্থী একে জেনাতে পরাজয়ের মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেন।
মন্ত্রীসভায় নতুন মুখ
ফ্রেডেরিক জানতেন সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যোগ্য লোক কারা। তিনি তাদের উপযুক্ত জায়গাতে বসিয়ে নিজের সম্মতি প্রদান করেন। ১৮০৭ সালে প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা ব্যারন কার্ল ভন স্টেইনকে রাজার প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। জেনার বেশ কিছুদিন আগে স্টেইন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। নতুন পদে অবশ্য তিনি এক বছরের বেশি থাকতে পারেননি। এর কারণ নেপোলিয়নের সমালোচনা করে লেখা একটি চিঠি যা প্রকাশ হয়ে পড়লে রাজা বাধ্য হন তাকে অপসারণ করতে।
স্টেইন ছাড়াও কাউন্ট ডহ্না এবং কার্ল ভন আল্টেনস্টেইন যৌথভাবে মন্ত্রীপরিষদ প্রধানের ভার নেন। পদচ্যুত হার্ডেনবার্গকে ডেকে এনে তার হাতে তুলে দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয়। ফ্রেডেরিক উইলিয়াম তাকে নতুন এক উপাধি প্রদান করেন, স্নাটজকান্সলা (Staatskanzler), যার মানে দাঁড়ায় অনেকটা প্রধানমন্ত্রী। হার্ডেনবার্গ ছিলেন প্রুশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
স্টেইন আর হার্ডেনবার্গ সংস্কারপন্থী হলেও দুজনের চিন্তাধারা ছিল দু’রকম। ব্রিটিশ শিক্ষায় প্রভাবান্বিত স্টেইন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জোরদার করার উপর জোর দিতেন। তার মতে সুশাসনের জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। হার্ডেনবার্গ জার্মান এনলাইটেনমেন্টের অনুসারী এবং ইলুমিনাতি (জার্মান Illuminaten) গোষ্ঠীর সদস্য। তিনি সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার সমর্থক। চারিত্রিকভাবেই দুজন বিপরীত মেরুতে। স্টেইন ঝোঁকের বশে কাজ করে বসেন, কিন্তু হার্ডেনবার্গ চলেন বহু হিসেব করে। কিন্তু সংস্কারের ব্যাপারে দুজনেই ছিলেন এক বিন্দুতে।
মন্ত্রীপরিষদের সংস্কার
স্টেইনের প্ররোচনায় রাজা তার উপদেষ্টা কাউন্সিল ভেঙে দেন, বরখাস্ত করা হয় নবনিযুক্ত মন্ত্রী ছাড়া অন্য আমলা এবং সচিবদের। সেই জায়গায় ১৮০৮ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় পাঁচজন মন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি নির্বাহী সংস্থা, যার অন্যতম কাজ ছিল কোনো সচিব বা আমলা ছাড়া সরাসরি রাজাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা এবং সেই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন। এর পেছনে ছিল সংস্কারপন্থীদের বদ্ধমূল ধারণা যে প্রুশিয়ার সমস্ত দুর্গতির মূলে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার অক্ষমতা। স্টেইন এটাও প্রস্তাব দেন যে রাজার সিদ্ধান্ত ততক্ষণ কার্যকর হবে না যতক্ষণ পাঁচজন মন্ত্রী এতে স্বাক্ষর না করেন, কিন্তু ফ্রেডেরিক এতে সায় দেননি।
সামরিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস
১৮০২ সালে প্রুশিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সামরিক সংঘ বা মিলিটারি সোসাইটি। এখানে সেনা কর্মকর্তারা আড্ডা দিতেন সমরবিদ্যার নতুন নতুন আবিষ্কার ও প্রয়োগ নিয়ে। সংঘের অন্যতম সদস্য ছিলেন শ্যানহর্স্ট, যিনি কয়েকবারই সামরিক সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাবনা হাই কম্যান্ডের কাছে উত্থাপন করেন। কিন্তু রক্ষণশীল হাই কমান্ড, বিশেষ করে প্রুশিয়ান বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ফিল্ড মার্শাল মলেনডোর্ফ সমস্ত আধুনিকীকরণের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ করে দেন। চরমভাবে রক্ষণশীল মলেনডোর্ফ সেভেন ইয়ার্স ওয়ারের একজন বীর সেনানী, ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেটের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন। ফলে তাকে পাশ কাটিয়ে এমনকি রাজার পক্ষেও কিছু করা সম্ভব হচ্ছিল না। নেপোলিয়ন সেই কাজ সহজ করে দিলেন।
১৮০৭ সালের জুলাই মাসে ফ্রেডেরিক উইলিয়াম সামরিক পুনর্গঠনের জন্য একটি কমিশন গঠন করলেন। এর প্রধান হলেন জেনারেল শ্যানহর্স্ট, যিনি উঠে এসেছিলেন সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে। তার সাথে ছিলেন সমমনা কাউসোভিতজ, বয়েন, গিনিয়াসেনইয়ো আর গ্রলম্যান। তারা ছোট ছোট সেনা ইউনিট গঠনের উপর জোর দেন যারা উন্মুক্ত প্রান্তরে দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে শত্রুদের উপর আঘাত হানতে পারবে। শ্যানহর্স্ট নিজে সমরকৌশল, প্রশিক্ষণ পদ্ধতি এবং অস্ত্রশস্ত্র উন্নয়নের দায়িত্ব নেন। অফিসার পদে জাঙ্কারদের একচ্ছত্র আধিপত্য খারিজ করে ১৮০৮ সালে ৬ আগস্ট আইন জারি হলো যে এখন থেকে পদোন্নতির একমাত্র মাপকাঠি হবে মেধা ও যোগ্যতা। ফলে সাধারণ সৈনিকদের সিঁড়ি বেয়ে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হল। অযোগ্যতার জন্য ২০৮ জন অফিসারকে পদচ্যুত করা হলো। বাহিনীর ১৪২ জন জেনারেলের ভেতর সতেরজনকে রাতারাতি বরখাস্ত করা হয়, ছিয়াশিজনকে দেয়া হলো সম্মানজনক অবসর। সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য বেশ কিছু অমানবিক শাস্তি চালু ছিল, সেগুলো রহিত করে অফিসারদের পরামর্শ দেয়া হয় সাধারণ সৈন্যদের অনুপ্রাণিত করতে।
সংস্কার শুধু এটুকুতেই থেমে থাকেনি। কমিশন একটি যুদ্ধ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয় যার মন্ত্রী নিযুক্ত হন শ্যানহর্স্ট। তিনি সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের নিয়ম কঠোরভাবে প্রণয়নে মনোযোগী হন। পূর্বে জাঙ্কাররা সেনা প্রশিক্ষণ গ্রহণ থেকে রেয়াত পেতেন, সেই প্রথা বাতিল করা হয়। নেপোলিয়নের শর্তের মধ্যে সেনাসংখ্যা রাখা হয় ৪০,০০০। কিন্তু প্রশিক্ষণ দেয়া হয় দুই লাখের বেশি মানুষকে, যাদের এরপর পাঠিয়ে দেয়া হলো নিজ নিজ অঞ্চলে। সেখানে তারা গঠন করে স্থানীয় মিলিশিয়া।
ভূমি আইন
স্টেইনের দুই সহকারী, থিওডর ভন শোন এবং ফ্রিড্রিখ ভন শোয়েটা জমি আইনের সংস্কারে হাত লাগান। ৯ অক্টোবর, ১৮০৭ সালে প্রণীত হয় এই নতুন বিধি (October Edict)। যুগ যুগান্তর থেকে চলে আসা সামন্ত প্রথা, যেখানে সাধারণ প্রুশিয়ানরা বর্গা চাষী হিসেবে অভিজাতদের জমিতে কাজ করত, তা বাতিল করা হয়। ঋণগ্রস্ত হয়ে বংশানুক্রমিকভাবে অনেকে দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ ছিল, সেটিও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আইন কার্যকরে দুই বছর সময় নেয়া হয়, বলা হলো ১১ নভেম্বর ১৮১০ সালে থেকে প্রুশিয়ার সমস্ত নাগরিক হবে স্বাধীন।
এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল আইনের চোখে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, এবং সাধারণ প্রুশিয়ানদের ভূসম্পত্তি অর্জনের সুযোগ তৈরি। বর্গা নেয়া জমিতে কৃষকদের মালিকানা তৈরি করবার ভাবনা ছিল, কারণ সাধারণ মানুষ নিজের জমিতে স্বাভাবিকভাবেই বর্গাচাষীর থেকে বেশি শ্রম দেবে, ফলে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে তরতর করে। কিন্তু বর্গা নেয়া জমিতে কৃষকদের অধিকার কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর বিনিময়ে জমি মালিকদের কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে সেই বিষয়ে অস্পষ্টতা থেকে যায়।
১৮০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রণীত ব্যাখ্যায় স্থায়ীভাবে জমি বর্গা নেয়া কৃষকদের অধিকার জোরাল হলেও সাময়িক বর্গা নেয়া কৃষকদের অবস্থা ছিল দুর্বল। তাদের জমি মালিক কর্তৃক ছিনিয়ে নেয়ার পথ খোলা ছিল, তবে তা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে। ১৮১১ এবং ১৮১৬ সালে আরো দুটি পর্যায়ক্রমিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করা হয়। আইনের ঘোরপ্যাঁচে না গিয়ে বলা যায় এখানে মোটা দাগে দুটি পথ খোলা হয়, যারা বংশানুক্রমে জমি চাষ করে আসছিল তারা এর দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে পাবে জমির অর্ধেক। আর যদি পারে তাহলে পুরো জমি কৃষকেরা কিনে নিতে পারবে। তবে এর প্রয়োগ খুব সহজ হয়নি, আরো অর্ধ শতাব্দী জুড়ে আদালতে মামলা চলে কৃষক ও জমির মালিকদের ভেতর।
অন্যান্য সংস্কার
শিক্ষা ছিল স্টেইনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য তিনি দায়িত্ব দেন উইলিয়াম ভন হাম্বোল্ডটকে। হাম্বোল্ডট ছিলেন মূলত একজন স্কলার, তিনি রোমে লেখাপড়ায় মগ্ন ছিলেন। জেনার পর তিনি প্রুশিয়া ফিরে এলে তাকে ১৮০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ধর্ম এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হলো। হাম্বোল্ডট একটি সুশৃঙ্খল নীতির আওতায় তৎকালীন ইউরোপিয়ান ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন করেন। তার মূল কথা ছিল ছাত্ররা স্কুল থেকে শিখবে সৃজনশীলতা। তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য কলেজ প্রতিষ্ঠা করলেন। মন্ত্রণালয়ে আলাদা সেল খোলা হলো শিক্ষাক্রম আর পাঠ্যপুস্তক তদারকি করতে। ১৮১০ সালে তিনি বার্লিনে প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রেডেরিক উইলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৯৪৯ সালে হাম্বোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয়।
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের তাগিদে শহর কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠা করেন স্টেইন, যেখানে কাউন্সিলররা নির্বাচিত হতেন। ১৮০৮ সালের আইনে কাউন্সিলে সম্পদশালী ইহুদিদের প্রার্থিতার অনুমতি দেয়া হলো। ডেভিড ফ্রিডল্যান্ডার ছিলেন প্রথম ইহুদি যিনি বার্লিন কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ইহুদি জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার প্রশ্নে ১৮০৯ সালে শোয়েটা প্রস্তাব করেন ধাপে ধাপে তাদের উপর জারিকৃত বিধি নিষেধ তুলে নেবার জন্য। ১৮১০ সালে হার্ডেনবার্গ তাকে সমর্থন দেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ধীরে ধীরে প্রুশিয়ার সমস্ত ইহুদি জনগোষ্ঠীকে ভোটাধিকারের আওতায় নিয়ে আসা। এই উদ্দেশ্যে ১৮১২ সালের মার্চে ডিক্রি জারি করা হয়, যা এডিক্ট অফ এম্যানসিপেশন নামে পরিচিত। পুর্ণাঙ্গ না হলেও অনেক সুবিধা ইহুদিদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো। দুর্ভাগ্যবশত ১৮১৫ সালে ভিয়েনা কংগ্রেসের পর এর অনেকগুলো আবার রহিত করা হয়।
বাইরের বিশ্ব
প্রুশিয়া যখন ব্যস্ত নিজেকে গুছিয়ে নিতে নেপোলিয়ন তখন প্রতিপক্ষকে একের পর এক যুদ্ধে ঘায়েল করে চলেছেন। স্পেনের সহায়তায় ১৮০৭ সালের ভেতরেই পর্তুগালে তিনি ঢুকে পড়েন। পর্তুগিজ রাজপরিবার পালিয়ে যায় তাদের ক্ষমতাধীন ব্রাজিলে। এরপর স্পেনকে বিস্মিত করে দিয়ে তাদের উপর নেপোলিয়ন স্থাপন করেন ফরাসি প্রভুত্ব। স্প্যানিশ সিংহাসনে বসিয়ে দেন ভাই জোসেফকে।
১৮০৯ সালে অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, ইংল্যান্ড আর স্পেন তার বিরুদ্ধে পঞ্চম কোয়ালিশন গঠন করে। এবারও অস্ট্রিয়াকে পরাস্ত করে আরো এলাকা ছিনিয়ে নেন নেপোলিয়ন, ধসে পড়ে পঞ্চম কোয়ালিশন। কিন্তু পর্তুগালে ব্রিটিশ আর পর্তুগিজ সেনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। পর্তুগিজ সেনাদের বিশৃঙ্খলা দেখে তাদের সংগঠিত করবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ব্রিটিশ জেনারেল বেরেসফোর্ড। সম্মিলিত বাহিনীর নেতৃত্ব তুলে দিয়েছিলেন এক দক্ষ ব্রিটিশ সেনা অফিসারের কাছে, যার নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর্থার ওয়েলেসলি। পরবর্তীতে যিনি পরিচিত হবেন ডিউক অফ ওয়েলিংটন নামে। পর্তুগাল থেকে ফরাসিদের বের করে দিয়ে তিনি চলে আসেন স্পেনে, সেখানে শুরু হয় পেনিনসুলার ওয়ার। ১৮১৩ সালের মধ্যেই স্পেন থেকে বিতাড়িত হয় ফরাসিরা, যেখানে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন আর্থার ওয়েলেসলি নামে সেই ভদ্রলোক।