মানুষ যেদিন থেকে আগুন জ্বালানো শিখেছে, সেদিন থেকেই থেকে তার অনুসন্ধিৎসু স্বভাব ও নতুন জিনিস নিয়ে পরীক্ষার সূত্রপাত। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই মানবসভ্যতা তার বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। সময়ের সাথে বেড়েছে চারপাশের চমৎকার জগৎ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি। সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে কেউ একদম অপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে পাগলাটে পরীক্ষা চালানোর ফলে অনেক নতুন কিছু আবিষ্কার পেয়েছে মানুষ। আবার মানুষের এমন কিছু পাগলাটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে, যা শুনে শুধু অবাকই হতে হয়। মানুষের ওপর মানুষের এরকম অদ্ভুত এবং অনেক ক্ষেত্রেই অমানবিক পরীক্ষাগুলো ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।
১
উনিশ শতকের শুরুর দিকে রাশিয়ান বিজ্ঞানী ইলিয়া ইভানোভিচ ইভানোভের মাথায় এক অদ্ভুত পরিকল্পনা আসে। তিনি দেখতে চান মানুষ এবং শিম্পাঞ্জীর শংকরে ‘হিউম্যানজি’ নামক কোনো প্রাণী বানানো যায় কিনা! ১৯১০ সালের দিকে ইভানোভিচ প্রাণিবিদদের এক সভায় তিনি তার প্রস্তাবনা পেশ করেন, যাতে তিনি কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণের মাধ্যমে মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর সংকর এক প্রজাতি পাওয়ার সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
এরই প্রেক্ষিতে ১৯২০ সালে ইভানোভিচ কয়েকটি ধারাবাহিক পরীক্ষা চালান। স্ত্রী শিম্পাঞ্জির গর্ভে মানুষের শুক্রাণু স্থাপন করে তিনি গর্ভধারণ করাতে ব্যর্থ হন। হতাশ হয়ে ইভানোভিচ এবার ভিন্ন উপায় অবলম্বনের কথা ভাবেন। তিনি এবার পুরুষ শিম্পাঞ্জির শুক্রাণু মানুষের গর্ভে স্থাপন করার কথা ভাবেন। এর জন্য তিনি নারী স্বেচ্ছাসেবক আহবান করেন। অন্তত ৫ জন নারীর উপর তিনি এই পরীক্ষা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতদিন ধরে চালানো পরীক্ষার কোনো যথার্থ ফলাফল না পাওয়ায় তার ধারণা সম্পর্কে সবাই সন্দিহান হয়ে পরেছিল। স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল তাই যোগার করতে পারেননি। যার ফলে মানুষ ও শিম্পাঞ্জির সংকর তৈরির অদ্ভুত পরিকল্পনা সেখানেই থেমে যায়।
২
মনোবিজ্ঞান জগতে পাভলভ এবং তার ‘ক্লাসিক্যাল কন্ডিশনিং’ তত্ত্ব বেশ পরিচিত। এই তত্ত্ব মূলত মানুষসহ সকল প্রাণীর একটি স্বভাবজাত মনস্তাত্ত্বিক আচরণ ব্যাখ্যা করে। এই তত্ত্বানুসারে, সকল প্রাণীর মধ্যে একটি স্বয়ংক্রিয় শেখার প্রবৃত্তি আছে যাতে কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে তার থেকে সেই একই প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব, যা পূর্বে সেই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত অন্য উদ্দীপকের সাহায্যে পাওয়া যেত। আরো সহজভাবে একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায়। আপনি যদি একটি কুকুরকে বেশ কিছুদিন নির্দিষ্ট সময়ে একটি ঘন্টা বাজিয়ে খাবার দিতে থাকেন তাহলে কিছুদিন পরে দেখতে পাবেন আপনার হাতে খাবার থাকুক না থাকুক, কুকুরটি আপনাকে দেখেই বা শুধু ঘন্টার আওয়াজ শুনেই মুখ দিয়ে লালা ফেলছে, যেমনটা সে করে খাবার দেখলে। কারণ আপনার সাথে সে খাবার দেয়ার ব্যাপারটা অবচেতনভাবেই সংযুক্ত করে ফেলেছে। ঠিক এই উদাহরণটিই পরীক্ষা করেছিলেন পাভলভ। তাই মনোবিজ্ঞান জগতে পাভলভ ও তার কুকুর বিষয়ক পরীক্ষা বেশ জনপ্রিয়।
তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রথমে মনস্তাত্ত্বিক কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো তার উদ্দেশ্য ছিল না। মূলত তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রাণীর লালায় অবস্থিত রাসায়নিক উপাদান যা পাঁচনে সহায়ক ও খাবারের পরিপাকপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা। কিন্তু উদ্দেশ্য যা-ই হোক, তার পরীক্ষার অনেক দিকই ছিল অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য। কুকুরের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরির জন্য প্রথমে খাবারের সময় ঘন্টা বাজানো হলেও ধীরে ধীরে পাভলভ তার জায়গায় তীক্ষ্ণ হুইসেল ও বৈদ্যুতিক শক ব্যবহার শুরু করেন। এরচেয়েও অমানবিক ব্যাপার হলো, তিনি ‘শ্যাম ফিডিং’ বা নকল খাবার খাওয়ানোর এক পদ্ধতি বের করেন, যেখানে কুকুরগুলোর অন্ননালী অপসারণ করে একটি খোলা পথ তৈরি করা হতো। এতে কুকুর যতই খাক, কোনো খাবারই তার পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছুত না।
এতে করে কুকুর সর্বক্ষণই ক্ষুধার্ত থাকতো। পাচনতন্ত্রের সাথে অতিরিক্ত কিছু নালী কৃত্রিম উপায়ে যুক্ত করে দিয়ে তিনি অধিক পরিমাণে নিঃসৃত পাচনরস সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করার সুযোগ পেতেন। এই গবেষণা তাকে ১৯০৪ সালে নোবেল পুরস্কারও এনে দিয়েছিল। কিন্তু এমনটা করতে গিয়ে কতগুলো কুকুরকে যে অমানবিকভাবে জীবন দিতে হয়েছে, তার হিসেব কে রাখে!
৩
গিলোটিনে মাথা কেটে মৃত্যুদণ্ড দেয়াকে ফরাসীরা তুলনামূলক সহজ মৃত্যুদণ্ড মনে করত। কারণ তাদের ধারণা ছিল, এই পদ্ধতিতে মানুষ কিছু টের পাওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পরে যখন একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর জল্লাদ কাটা মস্তকের গাল স্পর্শ করলে তা লালচে হয়ে ওঠে, ঠিক যেন লজ্জার লালচে আভা।
এরপর বিজ্ঞানীরা গিলোটিনে কাটা মাথাগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন এটা বোঝার জন্য যে, শিরচ্ছেদের পর আদৌ কোনো চেতনার লক্ষণ প্রকাশ পায় কিনা। বলা হয়ে থাকে, কিছু বিজ্ঞানী নিজেই শিরচ্ছেদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং তাদের ছাত্রদের হিসেব রাখতে বলেছিলেন ঠিক কতক্ষণ তাদের কাটা মস্তকে চেতনা প্রকাশ পায়! তবে এই ঘটনার পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যায় না। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে মৃত্যুর পরেও মানুষের চেতনা কাজ করে, তবে তা কয়েক সেকেন্ডের বেশি নয়।
৪
মানুষ নিয়ে পৃথিবীতে যত ঘৃণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে তার মধ্যে ইউনিট ৭৩১ সম্ভবত সবচেয়ে বেশি জঘন্য এবং ভয়ংকর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক হিসেবে সবসময়েই জার্মানির নাম নেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই বলা হয় রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণাত্মক ভূমিকার কথা। জাপানের নাম সেখানে খুব কমই নেয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই জাপানেই গড়ে উঠেছিল ভয়ানক ইউনিট ৭৩১ নামে এক ক্যাম্প, যেখানে যুদ্ধবন্দী ও অন্যান্য সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে চালানো হত অমানুষিক পরীক্ষা।
প্রথমে ক্যাম্পটির নাম ছিল Epidemic Prevention and Water Purification Department of the Kwantung Army, ১৯৩৬ সালে সার্জন জেনারেল শিরো ইশীর হাতে এই ইউনিটের দায়িত্ব দেয়া হয়।
মাঞ্চুরিয়ার দূরবর্তী এলাকায় এই গবেষণাগারটি স্থাপনের পরিকল্পনাও ছিল ইশীর, কারণ লোকচক্ষুর আড়ালে মানুষের উপর সরাসরি পরীক্ষা চালানো সহজ ছিল তার জন্য। অন্যান্য অনেক নিষ্ঠুর পরীক্ষার মাঝে সবচেয়ে গা শিউরে ওঠা পরীক্ষাটি ছিল ভিভিসেকশান বা কোনো প্রকার অ্যানেসথেশিয়া ছাড়া জীবন্ত মানুষকে কেটে তার শরীরের অভ্যন্তরের খুঁটিনাটি পরীক্ষা বা সেই অবস্থাতেই কোনো অঙ্গ কেটে পৃথক করে নেয়া।
এছাড়াও বন্দীদের ওপর বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল অস্ত্র, যেমন- প্লেগ রোগের জীবাণু সম্বলিত বোমা ছুঁড়ে পরীক্ষা করা, প্রেশার চেম্বারে ঢুকিয়ে কতক্ষণ বেঁচে থাকা যায় তা দেখা, বরফ পড়া শীতে দিনের পর দিন বাইরে রেখে ফ্রস্টবাইটের ব্যাপারে গবেষণা করা, এমনকি নারীদের ধর্ষণ করে জোরপূর্বক গর্ভধারণে বাধ্য করা- কিছুই বাদ ছিল না। মানুষকে নিয়ে জঘন্য গবেষণার এরকম ভয়ানক নজির খুব কমই আছে।
৫
মানুষ নিয়ে ভয়ংকর সব পরীক্ষার আরেক কুখ্যাত নায়ক জোসেফ ম্যাঙ্গেল, যিনি ‘এঞ্জেল অফ ডেথ’ নামেও পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অসউইজ বন্দী শিবিরের চিকিৎসক ছিলেন ম্যাঙ্গেল। তাই বন্দীদের নিয়ে যা ইচ্ছে তা-ই করার সব ধরনের সুযোগ ও অনুমতি তার ছিল। বংশগতি নিয়ে গবেষণার যে ইচ্ছা ম্যাঙ্গেলের ছিল, তা ওই বন্দী শিবিরে এসে খুব বিস্তৃত সুযোগ লাভ করল। কেননা এখানে সে মানুষের উপরেই সরাসরি পরীক্ষা চালাতে পারত।
তার বিশেষ ঝোঁক ছিল জমজ বাচ্চা, হেটেরোক্রোমিয়া ইরিডিয়ামে (যার দুই চোখের রঙ দুই রকম) ভোগা ব্যক্তি, বামন কিংবা শারীরিক অসঙ্গতি সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে গবেষণার প্রতি। জমজ বাচ্চা জন্ম দেয়ানোর পেছনে কারণ ছিল যত বেশি পারা যায় জার্মান নাগরিক তৈরি। জমজ বাচ্চাদের নিয়ে ম্যাঙ্গেলের পরীক্ষাগুলোর মধ্যে থাকতো কোনো এক জমজের অঙ্গ কেটে দেয়া বা একজনকে কৃত্রিম উপায়ে শরীরে অসুখের জীবাণু ঢুকিয়ে অন্যজনের প্রতিক্রিয়া দেখা কিংবা একজনের রক্ত অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করানো। প্রায় সব জমজই এসব পরীক্ষার কারণে মৃত্যুবরণ করত। দুইজনের মধ্যে একজন পরীক্ষার দরুন মারা গেলে ম্যাঙ্গেল আরেকজনকে হত্যা করত তুলনামূলক ময়নাতদন্তের ফলাফলের জন্য। জমজদের নিয়ে তার সবচেয়ে বড় পাগলামি হলো দুজন স্বাভাবিক জমজ বাচ্চাকে একসাথে জোড়া দিয়ে সংযুক্ত জমজে পরিণত করা। সে চেষ্টা করত তাদের রক্তনালীগুলোকে সুসঙ্গত করে একটি স্বতন্ত্র সত্ত্বা সৃষ্টি করতে। কোনো বাচ্চাই এরপর বেশিদিন বাঁচত না।
৬
অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ব্যারি মার্শাল প্রমাণ করেন, পেপটিক আলসারের কারণ হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া এবং এর জন্য ২০০৫ সালে নোবেল পুরস্কারও পান। কিন্তু এর জন্য তাকে একটি পরীক্ষা করতে হয়, সহকর্মীদের এই ধারণা ভুল প্রমাণ করতে যে পেটের আলসার স্ট্রেস বা চাপের কারণে না, বরং ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। তাঁর যুক্তিগুলো সহকর্মীরা গ্রহণ করছিলো না, আর এই পরীক্ষা ইঁদুর জাতীয় গিনিপিগের উপর করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। শুধুমাত্র মানুষের উপরই পরীক্ষাটি করলে প্রকৃত ফলাফল পাওয়া যেত। কিন্তু মানুষের উপর এ ধরনের পরীক্ষার অনুমোদন না থাকায় ব্যারি নিজেই স্বেচ্ছাসেবক হবার সিদ্ধান্ত নেন।
একজন আলসার রোগীর থেকে ব্যাকটেরিয়ার নমুনা সংগ্রহ করে তা নিজেই পান করেন। পাঁচ থেকে আট দিন পরেই তার মধ্যে আলসারের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে এবং এন্ডোস্কপির মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে ব্যাকটেরিয়া তাঁর পেটের মধ্যে ছড়াতে শুরু করেছে এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তিনি নিজের তত্ত্বে নিশ্চিত থাকার পরেও কেবলমাত্র রোগের কারণ উদ্ভাবনের লক্ষ্যে অসুস্থতা বরণ করে নেন।
৭
‘লিটল আলবার্ট’ পরীক্ষা নামে কয়েকটি ধারাবাহিক পরীক্ষা করা হয় একটি ছোট শিশু আলবার্টের উপর। এই হতভাগা শিশুটি সেই সময়ে জন্মেছিল, যখন আমেরিকায় নৈতিকতার বালাই ছিল না এবং যে যা ইচ্ছা ভয়ানক পরীক্ষা চালাতে পারত কারো তোয়াক্কা না করে। পাভলভের ক্লাসিক্যাল কন্ডিশনিং নিয়ে আরেকজন মনোবিজ্ঞানী, জন বি. ওয়াটসন, কাজ করার কথা ভাবেন। কিন্তু কুকুরের খাওয়ার অভ্যাসের বদলে এবার তিনি বাচ্চাদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করার কথা চিন্তা করেন। অর্থাৎ তিনি দেখতে চান, অতিরিক্ত আওয়াজ সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি বাচ্চার মনে ভয় তৈরি করতে পারেন কিনা।
এই পরীক্ষা চলাকালে আলবার্ট নামের শিশুটিকে বিভিন্ন খেলনা, ছোট কুকুর বা সান্তা ক্লজের সাথে খেলতে দেয়া হয়। একপর্যায়ে খেলনার পেছন থেকে বিকট আওয়াজ করে শিশুটিকে ভয় দেখানো হয়। এরকম বারবার করতে থাকার পর দেখা যায় একসময় শিশুটি ওই খেলনা বা কুকুর এমনকি সান্তা ক্লজ দেখেই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। এই শিশুটির পরবর্তী জীবনে এই ঘটনাগুলো কী পরিমাণ বাজে প্রভাব ফেলবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেবলমাত্র কিছু মনস্তাত্ত্বিক বিষয় সিদ্ধ করার জন্য একটি ছোট শিশুকে পরীক্ষার বিষয়বস্তু বানানো কতটা যুক্তিসঙ্গত ও মানবিক, তা আসলেই ভাববার বিষয়।
৮
যুক্তরাষ্ট্র সরকার সময়ে সময়ে করা কিছু উদ্ভট কাজকর্মের জন্য সবসময়েই নিন্দিত। তার মধ্যে একটি হলো নিজের দেশের অধিবাসীদের উপরেই বায়োলজিক্যাল যুদ্ধোপকরণ পরীক্ষা। ১৯৫০ সালের দিকে মার্কিন নৌবাহিনী ‘অপারেশান সী স্প্রে’ নামে একটি পরীক্ষা চালায়, যাতে সেরেশিয়া মারকেসেন্স নামক একটি ব্যাকটেরিয়া স্যান ফ্র্যান্সিসকোর বাতাসে ছেড়ে দেয়া হয়।
নৌবাহিনীর কথায়, তারা আসলে দেখতে চাইছিল যে ভিন্ন দেশের এ ধরনের বায়োলজিক্যাল অস্ত্রের প্রভাব কত দ্রুত ছড়াতে পারে। তারা এটাও দাবি করেছিল যে এই ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর নয়। কিন্তু এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই স্যান ফ্রান্সিসকোর স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ইনফেকশনের দুর্লভ কিছু লক্ষণ সহকারে কিছু রোগী ভর্তি হতে থাকে এবং তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যুও ঘটে। এই ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর কারণে ওই এলাকায় নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যায়। অন্য একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় দুই দশক পরে এই পরীক্ষার তথ্য প্রকাশিত হয়, নাহলে কখনোই হয়ত যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই ব্যাপারে জনসাধারণকে জানাত না।
ফিচার ইমেজ- Cloudfront.net