দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বলা যায় বিশ শতকের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। দীর্ঘ অর্ধযুগ ধরে চলা এই যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য অস্ত্র। যুদ্ধ চলাকালীন অস্ত্রগুলোর মান উন্নয়ন করা হয়েছে, পুরনো অস্ত্রকে বাতিল করে তার জায়গায় নতুন অস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে। মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তির এই ‘অফুরন্ত’ অস্ত্রভান্ডার যুদ্ধ শেষে কোথায় হারিয়ে গেল তা নিয়ে কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক। আজকে জানা যাক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই অস্ত্রভান্ডারের ভাগ্যে কী ঘটেছিল।
যুদ্ধের সময় অস্ত্র ও রসদ উৎপাদনের হার স্বভাবতই তুলনামূলকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যান (আনুমানিক) ঘাটলে এর একটা নমুনা টের পাওয়া যায়।
- ট্যাংক, সেল্ফ-প্রপেলড আর্টিলারি, সামরিক যান: ৬ মিলিয়ন
- আর্টিলারি, মর্টার, ট্যাংকবিধ্বংসী কামান: ৮ মিলিয়ন
- বিমান: ৮৫০,০০০
- মিসাইল: ৪৫,০০০
- জাহাজ: ৫৫,৫০০
এ তো গেল বড়সড় অস্ত্রের হিসেব। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে বিভিন্ন ছোট ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, বিশেষত অ্যাসল্ট রাইফল, মেশিন পিস্তল, মেশিনগান, রকেটতাড়িত অস্ত্র, সাইডআর্ম ইত্যাদি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই যে এই অস্ত্রগুলোর সবগুলো সেকেলে হয়ে গিয়েছিল তা কিন্তু বলা যায় না। কিছু দেশ বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও এসব অস্ত্র তাদের সৈন্যবাহিনী সাজাতে ব্যবহার করেছে। যুদ্ধের সময় ধ্বংস হওয়া অনেক অস্ত্রকেই পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়েছিল অথবা পরিবর্তন করে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে বেশিরভাগ অস্ত্রই বাতিল ধাতুতে পরিণত হয়েছিল।
যুদ্ধের সময় যুদ্ধের তাগিদেই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যথেষ্ট দ্রুত সাধিত হয়েছিল। এই যেমন যুদ্ধের শুরুর দিকে বেশিরভাগ যুদ্ধবিমান ছিল প্রপেলার চালিত। কিন্তু যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জার্মান ও ব্রিটিশরা জেটচালিত বিমান তৈরি করে। আবার কিছু অস্ত্র শুধু সুনির্দিষ্ট কোনো প্রয়োজন মেটাতে তৈরি করা হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে সে প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় এসব অস্ত্রগুলোও অপ্রয়োজনীয় ও বাতিল হয়ে পড়েছিল।
বাতিলের জঞ্জাল
যুদ্ধ শেষে অনেক সরঞ্জাম বিশেষত সামরিক যান সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কারণ এই সরঞ্জামগুলো শত্রু দেশের মাটিতে সংরক্ষিত ছিল। ইউরোপ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মার্কিনীরা ইউরোপে বা রাশানরা জার্মানিতে অনেক সামরিক উপকরণ ফেলে রেখে গিয়েছিল। যুদ্ধের পর এগুলো নিজের দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়াটা মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছিল বলে এসব যুদ্ধোপকরণ ফেরত না নিয়ে সমুদ্রগর্ভে খালাস করে দেওয়াটাই সহজ উপায় ছিল।
প্রশান্ত মহাসাগরের ভানুয়াতু দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ এসপিরিতো সান্তো-এ মিলিয়ন ডলার পয়েন্ট নামে একটা স্থান রয়েছে। এই জায়গার নাম মিলিয়ন ডলার হওয়ার কারণ হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের মার্কিন যুদ্ধ সরঞ্জাম এখানে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়।
শুধু ভারি যান নয়, বরং গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্রও সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ৮ মে জার্মান দখলদারিত্বের অবসান হলে নরওয়েজিয়ান সরকার প্রায় ১৬৮,০০০ টন জার্মান যুদ্ধাস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশটির বিভিন্ন হ্রদ ও খাঁড়িতে ফেলে দেয়।
শুধু কনভেনশনাল অস্ত্রশস্ত্র নয়, সম্প্রতি জানা গেছে, প্রায় ৩২ হাজার টনের মতো রাসায়নিক অস্ত্র ও চার লাখ রকেট ও মাস্টার্ড গ্যাসভর্তি বোমাও সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল মিত্রশক্তি।
তবে শুধু সমুদ্রগর্ভে নয়, বরং ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানেও বাতিল অস্ত্রের আস্তাকুঁড় তৈরি করা হয়েছিল। এগুলোর কিছু মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল, আবার কিছু মরুভূমিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে আসা হয়েছিল।
উত্তর আফ্রিকার মরুভূমিসমূহ, বিশেষত লিবিয়ার মরুভূমি হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানের সবচেয়ে বড় গোরস্তান। এছাড়া ইস্টার্ন ফ্রন্টের জলাভূমি ও বিলগুলো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন যুদ্ধযান ও সরঞ্জামের অন্যতম উৎস।
অ্যাসল্ট রাইফেল ও আগ্নেয়াস্ত্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পদাতিক সেনারা তাদের অস্ত্র নিয়ে যথেষ্ট সমস্যায় পড়েছিলেন। সে সময় লং রেঞ্জ ও শর্ট রেঞ্জের জন্য আলাদা আলাদা বন্দুক ব্যবহার করা হতো। শর্ট রেঞ্জের মেশিন পিস্তল ও সাব-মেশিনগান জাতীয় অস্ত্রগুলোর ফায়ার রেট উচ্চ থাকলেও এগুলো বেশি দূরত্বের টার্গেটে তেমন কাজে দিত না। আবার দূরবর্তী লক্ষবস্তুর জন্য ইনফ্যান্ট্রি রাইফল থাকলেও এগুলোর ফায়ার রেট ও ম্যাগাজিন সাইজ ছিল যথেষ্ট কম। এছাড়া রিলোড করাটাও ছিল বেশ ঝক্কির।
সেনাবাহিনী তখন এমন একটি অস্ত্রের কথা চিন্তা করল যা শর্ট ও লং রেঞ্জে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করবে। এই চিন্তারই ফসল হচ্ছে জার্মানির তৈরি স্টমগেভিয়া’-৪৪ তথা এসটিজি-৪৪ সেমি-অটোমেটিক অ্যাসল্ট রাইফেল। এটিই ইতিহাসের প্রথম সফল অ্যাসল্ট রাইফেল। বলা হয় মিখাইল কালাশনিক তার দিগ্বিজয়ী একে-৪৭ আবিষ্কারের ধারণা জার্মানদের এসটিজি-৪৪ থেকে পেয়েছিলেন, যদিও ভদ্রলোক নিজেই এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।
এসটিজি-৪৪ এর জন্য বিশেষভাবে ৭.৯২×৩৩ মিমি ক্যালিবারের ইন্টারমিডিয়েট কার্ট্রিজ তৈরি করা হয়েছিল। লং রেঞ্জের ৭.৯২×৫৭ মিমি ক্যালিবার ও শর্ট রেঞ্জের ৯×১৯ মিমি লুগার পিস্তল ক্যালিবারের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া এই বিশেষ কার্ট্রিজটির কারণে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এসটিজি-৪৪ অ্যাসল্ট রাইফল হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পরই একে-৪৭-কে পৃথিবীবাসীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন মিখাইল কালাশনিকভ। ফলে এসটিজি-৪৪-এর আর কোনো সুযোগই থাকল না বিকশিত হওয়ার। তারপরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইস্ট জার্মান প্যারামিলিটারি পুলিশ ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ‘স্টমগেভিয়া’ রাইফল ব্যবহার করে। এদিকে জব্দ করা এসটিজি-৪৪-গুলোকে চেকোস্লোভাকিয়া ও যুগোস্লাভিয়ার কাছে বেচে দেয় রাশিয়া। রাশিয়া তাদের সমর্থিত গেরিলা ও বিদ্রোহীদলগুলো যেমন পিএলও, হিজবুল্লাহ ইত্যাদিকেও এসটিজি-৪৪ সরবরাহ করেছিল। ইরাকের মিলিশিয়া বাহিনীও এসটিজি-৪৪ ব্যবহার করত। এছাড়া বর্তমানে সিরিয়া যুদ্ধেও এসটিজি-৪৪ ব্যবহার করা হচ্ছে।
মার্কিন এমথ্রি সাব-মেশিন গান যুদ্ধের পরে ফিলিপাইন সেনাবাহিনী এবং ব্রিটিশ ব্রেন লাইট মেশিন গান আইরিশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এমন কিছু দুর্দান্ত অস্ত্রের নকশা তৈরি করা হয়েছিল যেগুলো এ যুগে এসেও চলনসই বলে প্রতীয়মান হয়েছে। যেমন: এম১ গারান্ড রাইফল ও কোল্ট এম১৯১১এ১ অটোমেটিক হ্যান্ডগান। গারান্ড রাইফলকে মোডিফিকেশনের মাধ্যমে এম১৪ রাইফলে পরিণত করা হয়। এম১৪, এম১৬ অ্যাসল্ট রাইফল দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার আগে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনী ও মেরিন কোরের সার্ভিসে যুক্ত ছিল।
ট্যাংক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তি উভয়েরই অন্যতম প্রধান শক্তি ছিল ট্যাংক। আর এই ট্যাংকের দুনিয়ায় দাপিয়ে বেড়িয়েছিল মার্কিন শেরম্যান, জার্মান টাইগার, রাশান টি-৩৪ ইত্যাদি মডেলের ট্যাংকগুলো। এসব ট্যাংক সহজে স্থানান্তরযোগ্য হওয়ায় কখনো কখনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে মেরামত করে আবাও যুদ্ধে পাঠানো হতো। তবে শেষ অব্দি বেশিরভাগ ট্যাংকই অব্যবহার্য দশায় পরিণত হয়েছিল।
যুদ্ধের পর, ফরাসিরা প্রায় ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত কিছুসংখ্যক জার্মান প্যান্থার ট্যাংক ব্যবহার করেছিল। মার্কিন শেরম্যান ট্যাংকগুলো যুদ্ধের কয়েক দশক পরও আপগ্রেড করে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯৬০-এর দশকে ইজরায়েল প্রায় ১৮০টি এম৪এ১ শেরম্যান ট্যাংক নতুন কামান, ইঞ্জিন ও সাসপেনশসহ আপগ্রেড করেছে। আপগ্রেডকৃত এই ট্যাংক-কে এম-৫১ ক্লাসে অন্তর্ভুক্ত করে সুপার শেরম্যান হিসেবে নতুন নাম দেওয়া হয়। ইজরায়েল শুধু ট্যাংকগুলোকে আপগ্রেড করে ক্ষান্ত হয়নি, ১৯৮০-এর দশকে তারা ১০০টি ট্যাংক চিলির সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রিও করে। চিলি এই ট্যাংকগুলো ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করেছিল। শুধু ইজরায়েল নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক আরব দেশ সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের টি-৫৪, টি-৫৫ ও টি-৬২ মডেলের ট্যাংক যুদ্ধের পরেও ব্যবহার করেছিল।
ট্যাংকগুলোর যুদ্ধ-পরবর্তী আরেকটি স্বতন্ত্র ব্যবহার ছিল কৃষিকাজে। অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ট্যাংক দিয়ে হালচাষ করা হতো! ব্রিটিশ মাতিলদা ট্যাংকের টারেট খুলে নিয়ে তার জায়গায় বুলডোজার ব্লেড লাগিয়ে অথবা শেরম্যান ট্যাংক দিয়ে জমিতে লাঙ্গল দিয়ে ফসল উৎপাদনে পিছপা হয়নি অস্ট্রেলীয়রা।
যুদ্ধবিমান
যুদ্ধের পর বেশিরভাগ বিমানই বাতিল হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে বিধ্বস্ত বিমানের প্রয়োজনীয় অংশগুলো খুলে নিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা হয়েছিল। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ধাতব উপাদানগুলোকে রিসাইকেল করা হয়েছিল। শুধু অ্যারিজোনার কিংম্যান এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বাতিল বিমান ফেলে রাখা হয়েছিল।
জার্মানরাও একই পন্থা অবলম্বন করেছিল তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমানগুলোর রফা করতে। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বেশিরভাগ জার্মান বিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যেগুলোর অবশিষ্টাংশ ছিল সেগুলোও অমেরামতযোগ্য হয়ে উঠেছিল। আবার কিছু বিমান জার্মান বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
যুদ্ধের পর লেবানন ইতালির তৈরি এসএম-৭৯ মডেলের বেশ কিছু মিডিয়াম বম্বার প্লেন ব্যবহার করা শুরু করেছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও পুরনো হয়ে যাওয়ায় বিমানগুলো অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠে।
আমেরিকান ফাইটার এয়ারক্রাফট ভট এফ৪ইউ কর্সেয়ার যুদ্ধের পরে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত উৎপাদন করা হতো। এল সালভাদরের বিমানবাহিনী ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এই ন্যাভাল ফাইটারটি ব্যবহার করেছিল।
তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ মার্কিন পি-৫১ মাস্টাং এর মতো যুদ্ধবিমানগুলো কিনে নিয়েছিল। ডিসি-থ্রি ডাকোটা বিমান আজও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশে মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
জাহাজ
যুদ্ধে ধ্বংস হওয়া অনেক জাহাজই সারিয়ে তুলে পুনরায় ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কিছু যুদ্ধজাহাজ এতটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল যে সেগুলোকে নিয়ে যুু্দ্ধের পর কর্তৃপক্ষের আর ভাবার অবকাশ হয়নি। ১৯৪১ সালে জিব্রাল্টার প্রণালীতে জার্মান টর্পেডোর আঘাতে ব্রিটিশ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এইচএমএস আর্ক রয়্যাল ডুবে যায়। এই ক্যারিয়ারটি এখনো সমুদ্রের এক কিলোমিটার গভীরে ঘুমিয়ে আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমেরিকান ব্যাটলশিপ ইউএসএস আইওয়া যুদ্ধের পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সার্ভিসে ছিল। ৫৮,৪০০ টন ভারি এই জাহাজটিকে ২০১১ সালে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
অন্যান্য সামরিক নৌযানগুলোর মধ্যে কিছু নৌযান বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মার্কিন অভিনেতা জন ওয়েইন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি আমেরিকান ওয়াইএমএস-১ ক্লাস ইয়ার্ড মাইন সুইপার কিনে নেন। তিনি প্রায় ১৭ বছর এই জাহাজটি নিজের ব্যক্তিগত ইয়ট হিসেবে ব্যবহার করেন। গুজব আছে, এই জাহাজের খরচা সামলাতে গিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন এবং খরচ তুলতে তাকে বাড়তি সিনেমায় কাজ করতে হয়েছিল।
জিপগাড়ি
জিপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার। অফরোডে চলার উপযোগী করে বানানো এই যানটি মার্কিনীরা তৈরি করেছিল যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করার জন্য। যুদ্ধক্ষেত্রে রসদ পরিবহন, সামরিক কর্মকর্তাদের বাহন হিসেবে আবার কখনো কামান টানার জন্য এই জিপগুলো ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো উইলি’স এমবি মডেলের জিপ তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশাল সংখ্যক জিপগাড়ি বিভিন্ন দেশে ফেলে আসে মার্কিনীরা। ফিলিপাইনে এই পরিত্যক্ত জিপগুলো দিয়ে ‘জিপনি’ নামে পরিচিত নতুন ধরনের যাত্রী পরিবহনকারী বাস তৈরি করা হয়। লিবিয়া ও তিউনিসিয়ায় জিপ ও অন্যান্য পরিত্যক্ত সামরিক যান এসব দেশের যুদ্ধপরবর্তী অর্থনীতিতে বেশ ভূমিকা রাখে।