অফিসের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ থেকে ভিন্ন কিছু করে সবার নজরে পড়তে, সবার প্রশংসার পাত্র হতে এবং প্রোমোশন পেতে কে না চায়? তবে চাওয়ার সাথে পাওয়াটারও মিল রাখতে হলে যে হতে হবে কিছুটা ভিন্ন! আর এই ভিন্নতা আপনার ভেতর কীভাবে আনবেন সেটা নিয়েই কথা হোক আজকে।
১। ছোটখাটো বিষয়গুলোতে হয়ে উঠুন পারদর্শী
কার্ট্রিজ বা টোনার প্রিন্টারে লাগানো, কম্পিউটার হাডর্ওয়্যার ট্রাবলশ্যুটিং ও মেইনটেনেন্স, অফিসের প্রশাসনিক কোনো কাজের জন্য সঠিক প্রক্রিয়া কী!
এগুলো জানা থাকলে, এসব কাজের সমাধানের জন্য অফিসের অন্য সবাই সাহায্যের জন্য আপনার কাছেই ছুটে আসবে। এতে করে আপনার ওপর সবার নির্ভরতা ও বিশ্বাসটাও বাড়বে। অনেক সময় কেউ নিজে থেকে এসে সাহায্য না চাইলেও আপনি নিজ উদ্যোগে এগিয়ে যান। তাহলে সবাই আপনার বিশেষ গুণগুলো সম্পর্কে যেমন জানতে পারবে তেমনি আপনার যে সাহায্যের হাত বাড়ানোর মনমানসিকতা আছে সেটাও প্রকাশ পাবে। তাই ছুটির দিনগুলোতে কিছুটা সময় নিয়ে এসব কাজ শিখে রাখতে পারেন।
২। বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, কনফারেন্স ও ট্রেনিং-এ যোগ দিন
সেলফ ডেভেলপমেন্ট-এর বিষয়টা কিন্তু আসলেই আপনার ক্যারিয়ারে বেশ ভালো একটা প্রভাব ফেলে। অফিসে আপনি যে ডিপার্টমেন্টের জন্য কাজ করছেন সেখানকার কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের কোর্স বা ট্রেনিং-এ অংশগ্রহণ করুন। তাহলে আপনি কিছুটা হলেও সবার থেকে এগিয়ে থাকতে পারবেন। এছাড়া সে বিষয়গুলোতে ভালো দখল থাকার জন্য আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসার সম্ভাবনাও বাড়বে। এতে করে প্রোমোশন বা বড় কোনো সুযোগ আপনার হাতে অনায়াসে চলে আসবে। আজকাল বিভিন্ন ইনস্টিটিউট বা প্রফেশনাল ট্রেইনাররা সেমিনার ও ট্রেনিং-এর আয়োজন করে থাকে। তাই আশেপাশে খোঁজ নিয়েও দেখতে পারেন।
৩। কাজের সাফল্য বা প্রশংসায় অংশীদার করুন অন্যকেও
ধরুন অফিসের কোনো একটি বড় প্রজেক্টে আপনি একটি টিমের সাথে কাজ করেছেন এবং মুখ্য কাজগুলোর প্রায় সবগুলোই আপনি করেছেন। প্রজেক্টটি যখন সফল হলো তখন আপনি একা একাই কাজটির কৃতিত্ব নিতে চাচ্ছেন। এমনটি হলে সবার কাছে আপনার সম্মান যেমন কমবে, তেমনি পরবর্তী সময়ে সবাই আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেও চলবে। কারণ আপনি হয়তো বা ভুলে গিয়েছেন যে শুধুমাত্র আপনার মুখ্য কাজগুলো দিয়েই প্রজেক্টটি সফল হয়নি, বরং সবার মিলিত প্রচেষ্টা আর প্রয়াসেই এসেছে এই সফলতা। তাই নিজে একা সাফল্যের কৃতিত্ব না নিয়ে সবাইকে অংশীদার করুন। এতে তারা আপনার কাছ থেকে অনুপ্রেরণাও পাবে।
৪। ‘টিম প্লেয়ার’ হতে শিখুন
অফিসের কোনো কাজই কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে করা হয় না। হয় আপনি সবসময়ই একটি টিমে কাজ করেন বা ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন সময়ে আপনাকে বিভিন্ন টিমে কাজ করতে হয়। আর একটি টিমের সবাই কখনোই একরকম হবে না। তাই প্রথম প্রথম লক্ষ্য করুন যে কে কী রকম এবং আপনার কাজের সুবিধার্থে তার সাথে সেভাবে মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, সে-ই একজন ভালো ‘টিম প্লেয়ার’ যে কিনা যেকোনো সময় ও যেকোনো পরিস্থিতিতে সবার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে কাজ করতে পারে।
৫। সবকিছুতে ‘পজিটিভ’ মনোভাব রাখুন
পজিটিভিটি যে শুধু আপনাকে মনের দিক থেকে শক্ত করে তুলবে ও অনুপ্রেরণা যোগাবে তা-ই নয়, বরং আপনার আশেপাশের সবাই আপনার ওপর ভরসা রাখতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবে না। ধরুন আপনি অফিসের কোনো কাজের জন্য একজন দলনেতা হিসেবে কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সমাধান যতই জটিল বলে মনে হোক না কেন, আপনি সবার সাহস যুগিয়ে সবাইকে উৎসাহিত করুন। এছাড়া টিম মেম্বাররা যে কাজ উপস্থাপন করবে তাতে কোনো ঘাটতি থাকলেও পজিটিভ কমেন্ট করে তাদের অন্য কোনো উপায়ে কাজ করলে ভালো হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিন।
৬। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লক্ষ্যের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করুন
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই কিছু লক্ষ্য থাকে যেগুলোকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা করা হয় এবং সে অনুযায়ীই এগোনো হয়। প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সে বিষয়গুলো সম্পর্কে সব কর্মচারীকে অবগত করেন। যেহেতু প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের সাথে নিজের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনাটাও সমান তালে কাজ করে, তাই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যগুলোর খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় আনুন। এক্ষেত্রে আপনার মতামত জানাতে অবশ্যই ভুলবেন না। কারণ আপনি যখন একটি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করছেন, তার অর্থ হচ্ছে আপনি সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর আপনার এই গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি যখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খেয়াল করবেন তখন তারা আপনার মতামতকে প্রাধান্য দেবেন। এছাড়া পরবর্তী পর্যায়ে যেন আপনার এই গুণটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন, সেজন্য আপনাকে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সব কাজে নিয়োগ দেবেন।
৭। আপনার বুদ্ধিমত্তাকে সবার সামনে তুলে ধরুন
অফিসের সহকর্মীদের সাথে আড্ডায়, প্রতিটি কাজে পরামর্শমূলক, নতুন ও সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি যে চারপাশের সবকিছু নিয়ে সবসময় আপডেটেড থাকেন তা প্রকাশ পায়। আর আপনি যখন চারপাশের ঘটে যাওয়া সব বিষয় নিয়ে চর্চার উপর থাকেন তখন আপনার বুদ্ধিমত্তারও ঝালাই হয় বেশ ভালোভাবে। আপনার অফিসের চারদিকের মানুষ যখন বুঝতে পারবে যে আপনার জ্ঞানের পরিধি অনেক বেশি, তখন আপনার কথা তারা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। সাম্প্রতিক কোনো বিষয় বা যেকোনো বিষয় নিয়ে জানতে তখন তারা আপনার জন্যই খোঁজ করবে।
৮। প্রতিটি কাজেকে বিভিন্ন মাপকাঠি বিবেচনা করতে ভুলবেন না
শুধু ঠিকঠাকভাবে কাজ করে গেলেই চলবে না। প্রতিটি কাজের ফলাফল শুধুমাত্র সাফল্যের মাপকাঠিতে বিচার করা ছাড়াও পরবর্তী সময়ে সে সাফল্য থেকে আপনার জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে কিনা, তা থেকে আপনার জ্ঞানের পরিধি কতটা বাড়লো এবং সেখানে করা ভুলগুলো থেকে আপনি কী কী শিখলেন সেগুলো নিয়ে ভাবুন। তাহলে এরপরের কাজগুলোতে আপনার ভুলগুলো, কোন কোন জায়গায় ঠিক কোনটি করলে ফলাফল আরও ভালো হবে এসব আপনার মাথায় থাকবে।
৯। ‘নেটওয়ার্ক’ বাড়ানোয় জোর দিন
আপনার কাজের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কাজের ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সাথে পরিচিতি এবং সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে তাদের সাথে কথা বলে আপনি যেমন অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবেন তেমনি আপনার অফিসের কোনো কাজে প্রয়োজন হলে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে কাজটি সমাধান করে ফেলতে পারবেন। তাই বিভিন্ন ধরনের ভলান্টিয়ারিং কার্যক্রমের সাথে জড়িত হোন, কোনো কনফারেন্স বা সেমিনারে গিয়ে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে সবার সাথে কথা বলুন এবং লিংকড্ ইন-এ সবার সাথে কানেকশন রাখুন। অফিসের কোনো কাজে যদি অফিসের বাইরের কাউকে প্রয়োজন হয় তাহলে আপনিই তখন আপনার রেফারেন্স দিয়ে তাদের আনতে পারবেন।
আপনার ব্যক্তিত্ব থেকে আরম্ভ করে আপনার বুদ্ধিমত্তা ও চলাফেরা সবকিছুই অফিসে আপনার ইমেজের উপর প্রভাব ফেলে। তাই কথাবার্তা, কাজ, আচার-আচরণ সবকিছুতেই বুঝে-শুনে পা ফেলুন। প্রতিনিয়ত কীভাবে নিজের ইমপ্রুভমেন্ট করা যায় তা নিয়ে ভাবুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করারও চেষ্টা করুন।