যা-ই বলুন, দোষটা আপনারই!

জীবনটাকে কি খুব দুর্বিষহ মনে হচ্ছে?
মনে হচ্ছে, যেখানেই হাত দিচ্ছেন সেখানেই ব্যর্থতা?
মনে হচ্ছে, গোটা দুনিয়াই যেনো আপনাকে একের পর এক সমস্যায় ফেলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে?
মনে হচ্ছে প্রতিটা পদক্ষেপেই কোথাও না কোথাও বড় ধরনের গড়বড় রয়ে যাচ্ছে ?

আপনার মন যদি এমনটা ইঙ্গিত দিতে থাকে, নিশ্চিত থাকুন আপনার জীবনে আসলেই কোথাও বড় ধরনের ‘গড়বড়’ রয়ে গেছে । আপনি নিশ্চয়ই এই গড়বড়ে জীবন কাটিয়ে উঠতে চান । হয়তো চেষ্টা করেছেনও, কিন্তু পারেননি। কী সেই শক্তি যে অক্টোপাসের মতো পেছনে টেনে রেখেছে আপনাকে?

আয়নায় তাকান, সেই অক্টোপাসকে দেখতে পাবেন।

যদি ভাবেন প্রতি পদক্ষেপেই এই পৃথিবীর মাটি আপনাকে উল্টে ফেলে দিতে চাইছে, তাহলে আপনি আসলে মাটিতে পা রাখতেই ভুল করছেন। চারপাশে শুধু অন্তহীন সমস্যা দেখতে পেলে, সেটা আপনার দেখার ভুলের কারণেই হচ্ছে। ইতিবাচক আর নেতিবাচক- এই দু’ ধরনের ‘মোড’-এ কাজ করার ক্ষমতা আপনার মহাশক্তিধর মস্তিষ্কের রয়েছে। আপনি শুধুমাত্র নেতিবাচককেই দেখে এসেছেন। অথবা শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে কিংবা কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে এসে নেতিবাচকতায় এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে, ভুলেই গেছেন সবকিছুকে অন্যভাবেও দেখা যায়। কপালে বিরক্তির ভাঁজ না ফেলে, হাসিমুখে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বরণ করে নেয়া যায় সামনে থাকা সমস্যাটিকে।

সুপারহিরো ফিল্ম দেখেছেন? যেখানে ভালো আর খারাপের লড়াইতে দিন শেষে ‘ভালো’র মুখেই শেষ হাসি ফোটে? আপনার জীবনের সুপারহিরো আপনি, কিন্তু আপনার নেতিবাচকতা দিন শেষে আপনাকে হারিয়ে দিচ্ছে।

আপনি কাজটা ভালোবাসেন না, অথচ সারা জীবন অফিসের ডেস্কটায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকতে হবে এমনটাই ধরে নিয়েছেন। কিছু টাকার বিনিময়ে আপনার ভেতরকার অমূল্য জীবনীশক্তিটা শুষে নিয়ে কেউ একজন তার নিজের জীবনের স্বপ্ন সাজাচ্ছে। দোষটা কি তার?

না, দোষটা দিন শেষে আপনারই, কারণ আপনার হৃদয়ের একেবারে ভেতরকার ডাক শোনার মতো সাহসটাই আপনার নেই, সে ডাকে কান পেতে নিজ উদ্যমে নিজ জীবন সাজিয়ে নেয়ার সাহসটা আপনার ভেতর জন্মায় নি এখনো।

ছোট্ট একটা পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন আপনি, যার এ মাথা থেকে ও মাথা মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ঘুরে আসা যায়। মাত্র একবারের জন্যেই আপনি এখানে জন্মেছেন। একটা মাত্র সুযোগ। অথচ ঘর-অফিসের চেনা পথের বাইরে পা বাড়ানোর সুযোগ আপনি নিজেকে দেননি। প্যারিসের ল্যুভরে আপনার মোনালিসা দেখা হয়নি। আমাজনের জঙ্গলে যেখানে কোনো মানুষের পা পড়েনি, সেখানে হয়ত প্রথমবারের মতো আপনিই পা রাখতে পারতেন। অথচ কোনো একদিন একটা প্লেনের টিকেট কেটে যদি উঠে পড়তেন স্বপ্ন পূরণে, তাহলে হয়ত অপূর্ণতার তালিকা এতো দীর্ঘ হতো না। জীবনকে উপভোগ করার, অর্থপূর্ণ করার এই পদক্ষেপ যদি আপনি নিয়েই ফেলতেন, তবে তাতে কতটা খারাপ পরিণতি হতে পারতো? আপনার এই অবাধ্যতায় পৃথিবী কি তার ঘোরা থামিয়ে দিয়ে মহাধ্বংসলীলা ডেকে আনতো? আপনার কি মৃত্যু হতো? আচ্ছা মরে গেলেই বা ক্ষতিটা কি হতো? আপনার একঘেঁয়ে জীবন তো আপনাকে কখনো প্রাণখুলে হাসতেই দেয়নি।

আসলে আপনি ছোট থেকেই শুনে এসেছেন, জীবটা কঠিন, অসংখ্য চ্যালেঞ্জে ভরপুর। আপনি সে ভয়ে এতো টিপে টিপে পা ফেলেছেন যে, কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই হননি আপনি।

আপনার জীবনের এই গভীর অসুখের জন্য দায়ী জীবাণুটা আপনার নেতিবাচকতা। ঝুঁকি নিয়ে আপনার যে সীমাহীন ভয়, সেটাই আপনার জীবনীশক্তিটাকে পরজীবীর মতো কুরে কুরে খাচ্ছে। আপনি আপনাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছেন প্রিয় মানুষগুলোর জন্য পরিশ্রম করে, খেটে খেটে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। অথচ আপনার নিজেকে একা বোধ করছেন, আপনার মনে হচ্ছে আপনার চারপাশের কোনো মানুষের সঙ্গেই আসলে আপনার ঘনিষ্ঠতা জন্মায়নি। মনে হচ্ছে, আপনি শুধু একতরফাভাবেই দিয়ে যাচ্ছেন, আপনাকে কেউই কিছু দিচ্ছে না। আপনার কথা ভাবছেই না একদম।

আপনি যেনো অদৃশ্য হয়ে উঠছেন তাদের কাছে, দিন দিন আপনার সঙ্গে বাকি সবার সম্পর্ক খারাপ হয়ে উঠছে। নেতিবাচকতায় নজর দিন। তাদের দিক থেকেও একটু গোটা বিষয়টা দেখার চেষ্টা করুন। লক্ষ্য করুন, আপনি যাদের জন্য খাটছেন, তাদের কাছ থেকে আপনি কি চাইছেন, ভয়মিশ্রিত ভক্তি নাকি নিখাদ প্রাণখোলা ভালোবাসা। শেষেরটির জন্য কাড়ি কাড়ি টাকার দরকার হয় না। নাহ, সিনেমার সংলাপ নয়, আসলেই দরকার হয় না। দরকার হয় পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর নিজের সবলতা, দুর্বলতা এবং স্বপ্নগুলো তাদের সামনে মেলে ধরার ক্ষমতা।

আপনি ভাবছেন, “পড়াশোনা শেষ করে চাকরি, বিয়ে, সন্তান-সন্ততি এবং তারপর মৃত্যু”– এই অনুগত জীবনের চক্র ভাঙার সাধ্য কারো নেই। আপনার ধারণা ভুল। জীবনটাকে উপভোগ করতে আপনার সন্ন্যাসব্রত নিতে হবে, বা একা হয়ে যেতে হবে, এটা একেবারেই ঠিক নয়। আপনি যেভাবে সুখী হবেন, তাতে যদি আপনার কাছের মানুষটি নাখোশ হন, তবে প্রশ্ন করুন, তিনি আসলেই আপনার কতটা কাছের? আপনার জীবন অর্থহীন হয়ে গেলে, কাছের মানুষটার জীবন তো অর্থবহ হতে পারে না কোনোভাবেই। যদি আপনাকে দাস জীবনেই তিনি আঁটসাঁট করে বেঁধে রাখতে চান, তাহলে তিনি আপনার মনিব হতে পারেন বড়জোড়, ভালোবাসার মানুষ নন।

আসলে গোটা বিষয়টাই খুব পরিষ্কার। আপনার সবচেয়ে বড় শত্রুটাই আপনি। আপনি বারবার বল ছুঁড়ে দিচ্ছেন আপনার জীবনের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে, ব্যর্থ হচ্ছেন। চোখ মেলে তাকালে দেখবেন, যে গোলকিপার বারবার আপনাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করছে, তার ভূমিকায়ও আপনিই দাঁড়িয়ে আছেন।

নিজের মনে কান পাতুন। শুনতে চেষ্টা করুন, আপনি কি চান? দিনের পর দিন নয়টা-পাঁচটা চাকরি করে হয়ত শেষ জীবনে অনেক টাকার মালিক হবেন, কিন্তু তাতেই কি আপনি সন্তুষ্ট থাকবেন? আপনি সামান্য কয়টি বছর হাতে নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। অবাই যে পথে গেছে, অন্ধের মতো হাতড়ে হাতড়ে সে পথে গিয়েই কি ‘মানবজনম’ নিঃশেষ করবেন? এই সিদ্ধান্ত আপনার নিতে হবে এবং যদি সম্ভব হয়, নিতে হবে আজই।

নিজের স্বপ্নের কথা শুনুন। বোঝার চেষ্টা করুন, কোনো কাজ করার সময় আপনার মনেই হয় না যে আপনি আসলে কাজ করছেন। কোনো জিনিস শেখার সময় বারবার ঘড়ির দিকে তাকাতে হয়না ছুটির ঘণ্টার অপেক্ষায়। যদি তা খুঁজে পান, তবে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান এবং জ্ঞানীদের মধ্যে একজন। আপনি আপনার নিজের প্রাণের স্পন্দন ধরতে পেরেছেন। সাফল্য আপনার নিশ্চিত, মাঝে কেবল কয়টা বছরের সংগ্রাম রয়েছে মাত্র। সেই সংগ্রামের সময় হয়ত অনেকে আপনাকে বিদ্রুপ করবে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে। আর আপনি সেসবে কান না দিয়ে মুখে হাসি নিয়ে এগিয়ে যাবেন স্বপ্ন পূরণের পথে, জীবনের সার্থকতার পথে। সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষেরা হয়ত আপনার পাশে থাকবে, কিন্তু তারা বড়জোর আপনার জন্য শুভকামনা করতে পারেন। সাফল্যের পথে আসলে হাঁটতে হয় একাই।

জেনে রাখুন, পথ শেষে জীবনের সূর্য যখন অস্তাচলে হেলে পড়বে, তখন একজন সফল, সার্থক এবং সুখী মানুষ হিসেবেই আপনি চোখ বুজবেন।

তথ্যসূত্র

১/ tinybuddha.com/blog/your-job-doesnt-define-you/

২/ quora.com/Life-Is-life-too-short-for-a-9-to-5-job

৩/ thoughtcatalog.com/becca-martin/2016/12/hate-to-break-it-to-you-but-you-are-the-reason-your-life-sucks-so-much/

Related Articles

Exit mobile version