কাকার মিলান ছাড়ার পিছনের ইতিহাস

সালটা তখন ২০০৯। ক্লাব,জাতীয় দল ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সকল শিরোপা জেতা হয়ে গেছে কাকার।ততদিনে মিলান কিংবদন্তির তকমাও পাওয়া শেষ। যদি কিছু করা বাকি থাকে, তা ছিল ইংল্যান্ড-স্পেনের ফুটবল জয়। কেন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ইংল্যান্ডে গেলেন না, কেন স্পেনে গেলেন, কেনই বা এত সফলতার পরও মিলান ছাড়লেন রিয়াল মাদ্রিদের জন্য? তাই আজ জানবো ২০১৭ সালে দেওয়া একটি অনলাইন মিডিয়ায় তার বক্তব্য থেকে।

কাকা ফরএভার; Image Credit: Getty Images

 

আমার এখনও মনে আছে, আমি বাসায় ছিলাম যখন ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনটা আমার বাবা করে এবং তার গলার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছিল, তিনি খুব উৎসাহী ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি আমার জন্য মিলানকে অনেক বড় সাইনিং অফার করেছে।আমি কিছু ভেবে উঠার আগেই তিনি বললেন, মিলানও নাকি অফার গ্রহণ করতে প্রস্তুত। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অফিসিয়ালি মিলানকে অফার না করে, আমার কোনো ধারণা ছিল না যে, ম্যানসিটি আমাকে সাইন করাতে আগ্রহী।

এই প্রসেসটা কীভাবে হবে, তা বোঝা খুবই জটিল ছিল। সিটির সাথে আমার বাবার এই প্রথম কথা হয়। তারা মিলানকে খুবই পরিষ্কারভাবে তাদের পরিকল্পনা বলে এবং জবাবের অপেক্ষায় থাকে।

মিলানের ডিরেক্টর আমার বাবাকে ডাকে, এবং কী হয়েছে সব বুঝায়। সে সময় মিলান এমন ক্লাব ছিল না যে তাদের অন্যতম সেরা প্লেয়ারকে বিক্রি করবে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন প্লেয়ারদের বিক্রি করে দেওয়া, যারা সত্যই ক্লাব ছাড়তে আগ্রহী, এবং আমি তাদের মধ্যে ছিলাম না। কিন্তু ক্লাবের ভাইস-চেয়ারম্যান আদ্রিয়ানো গ্যাল্লিয়ানি আমার বাবাকে বলেন, তারা প্রথমবারের মতো এই অফার গ্রহণ করতে আগ্রহী, কারণ এটা অনেক বড় অংকের সাইনিং হতে যাচ্ছে। সিটি আমাকে সাইন করার জন্য মিলানকে ১০০ মিলিয়ন ইউরো অফার করে।

মিলানে কাকা ছিলেন অনবদ্য; Image Credit: Getty Images

আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার বাবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল এবং আমরা সব কথা একে অপরকে বলতাম।একসাথে আমরা ঠিক করি, আমাদের ইংল্যান্ডে যাওয়ার ব্যাপারে ভাবা উচিত। আমরা ভাবি, মিলান যদি অন্য ক্লাবের সাথে চুক্তিতে আগ্রহী হয়, যা খুবই বিরল, তাহলে আমাদেরও এই ব্যাপারে ভাবা উচিত। এটা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ও নতুন অধ্যায় ছিল, যা আকস্মিক এবং খুব জলদি ছিল। আমি উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হতে থাকি, সম্পূর্ণ পরিস্থিতি আমাকে বিচলিত করে তোলে। আমার মনে আছে, এই পরিস্থিতিতে সান সিরোতে ফিওরেন্টিনার সাথে খেলার সময় সম্পূর্ণ ঘটনা আমার মাথায় ঘুরতে থাকে। আমি খেলায় মন দিতে পারছিলাম না, ফলে মাঠে আমার পারফরম্যান্স খারাপ হয়। আমার এখনো মনে আছে, মিলানের ফ্যানরা আমার দিকে চেঁচিয়ে বলছিলো, “নিজেকে বিক্রি করো না কাকা!”

এই ম্যাচটা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল এবং এটা পরিষ্কার ছিল, আমি কী পরিমাণ সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যা সহজ ছিল না। এই চুক্তি আমার ব্যাক্তিগত জীবনে অনেক প্রভাব ফেলে। কোনদিকে আমার যাওয়া উচিত? আমি কি ম্যানচেস্টারে গিয়ে নতুন দেশে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করব, নাকি মিলানেই থেকে যাব, যে ক্লাবকে আমি ভালোবাসি? এটা আরো জটিল হলো, কারণ আমাকে অন্য বিষয় নিয়েও ভাবতে হলো। সেজন্য আমি কিছু মানুষের কাছে উপদেশের জন্য যাই।

Image Credit: Claudio Villa/Getty Images

 

আমি এই পরিস্থিতিতে আমার সকল চিন্তা ও পরিকল্পনা গ্যাল্লিয়ানি ও ক্লাবের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর লিওনার্দোর সাথে শেয়ার করি। তাদের সাথে আমার সবচেয়ে বেশি কথা হতো। অবশ্যই আমার পরিবার আমার কাছে সবসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাপোর্ট ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে। আমি আমার স্ত্রী ক্যারোলিনের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলি। আমরা প্রায়ই এই ব্যাপারে কথা বলতাম। আমার মা-বাবা ও ভাই সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

আমি কখনো এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করবো, আশা করিনি। আমি খুবই আশ্চর্য ছিলাম জানুয়ারিতে সিটির এমন অফারে। সময়টা ছিল এমন যখন বড় ট্রান্সফার খুব কম হয়। গ্রীষ্মের সময় হলে আমাদের অনেক সময় থাকতো এই পরিস্থিতি মোকাবেলার এবং সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার।আমার কাছে অনেক সময় থাকতো ক্লাব ও শহর থেকে দূরে গিয়ে এই ব্যাপারে ভাবার, এবং অবশ্যই সেটা সিজনে মাঝামাঝি সময়ে হতো না।

কিন্ত অফারটা জানুয়ারিতে আসে, এবং মিলানও এতে খুশি জানার পর আমি ও আমার এজেন্ট চুক্তিতে ব্যক্তিগত শর্তে আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিল।আমরা খুবই আগ্রহী ছিলাম আসলে চুক্তিতে কী হচ্ছিল, তা জানার ব্যাপারে। আমার বাবা ইংল্যান্ডে গেলেন সিটির ম্যানেজার মার্ক হিউজ ও ক্লাবের ডিরেক্টরদের সাথে কথা বলতে।

কার্লো অ্যানচেলত্তি তখন মিলানের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি সম্পূর্ণ ব্যাপারে অবগত ছিলেন, কিন্তু তিনি এমন কিছুই বললেন না যাতে আমি ক্লাব ছাড়া বা থাকার ব্যাপারে আগ্রহী হই। তিনি কখনোই আমার ক্লাবে থাকা উচিত কি না এই ব্যাপারে উপদেশ দেননি। তিনি আমাকে বলতেন, আমি কী ভাবছি, সবকিছু ঠিক আছে কি না, কোনো সাহায্যের দরকার কি না, এসবই।

কার্লো তার সহানুভূতি ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছে, সাথে এটাও নিশ্চিত করেছে এতে দলে কোনো প্রভাব পড়বে না। ফুটবল খেলায় দল সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমি সবসময় বুঝি ও সম্মান করি।

Image Credit: Getty Images

 

সেসময় আমি ইতালিতে খুবই গোছানো ছিলাম, এবং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি ক্লাব, শহর ও এই দেশ নিয়ে অনেক খুশি ছিলাম। আমি সেখানে প্রায় ছয় বছর ছিলাম এবং আশপাশের পরিবেশ ঘরের মতোই ছিল। খেলার মাঠ, ব্যক্তিগত জীবন, সব দিক দিয়েই আমার ইতালিতে সময় দারুণ ছিল।সত্যি বলতে, আমি কোথাও যাওয়ার চিন্তাও করিনি। ক্লাব, শহর, দেশ, এখানকার মানুষ নিয়ে আমার কোনো সমস্যা ছিল না।

মানুষ স্বভাবতই পড়বে এবং ভাববে, “তাহলে কেন ইংল্যান্ডে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করছো?’’

উত্তর খুব সহজ। কারণ, মিলান অফার গ্রহণ করতে প্রস্তুত। যখন এমন হয়, তখন সব কিছু বদলে যায়।যদি মিলান অফার ফিরিয়ে দিতো, তাহলে বিষয়টি সেখানেই শেষ হয়ে যেত। আর ক্লাব যদি এমন বক্তব্য দিতো, “কাকা বিক্রির জন্য নয়। বিশ্বের কোনো অর্থই আমাদের কাকাকে বিক্রি করতে বাধ্য করতে পারবে না।’’ তাহলে চিন্তার কোনো বিষয় থাকতো না। আমি কখনোই মিলানের বোর্ডরুমে গিয়ে ট্রান্সফারের আবেদন করতাম না। আমি কস্মিনকালেও তাদের আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলতাম না। আমি খুশি ছিলাম ক্লাবে।

কিন্ত তোমার নিজের ক্লাবই যদি বলে, “কেন নয়?’’ তাহলে তোমার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন হতে শুরু করে, এবং সেটাই আমার সাথে ঘটে। মিলান আমাকে বিক্রি করতে আগ্রহী, এটা জানার পর আমি সেখানে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে লাগি। আমার ক্লাব ও ফ্যানদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার পরও তারা আমাকে বলল, আমি যেতে পারি। এটা পরিষ্কার ইঙ্গিত ছিল, ক্লাবে আমার সময় শেষের দিকে। ছয় বছর পর হয়তো এমন হওয়া স্বাভাবিকই ছিল।

একটা বিষয় আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, এই পরিস্থিতির জন্য সে সময়টা সকলের জন্য খারাপ ছিল। ক্লাবের জন্য জানুয়ারিতে প্লেয়ার কেনা-বেচার জন্য ভালো সময় ছিল না। প্লেয়ারের জন্যও তখন ক্লাব বদল করার আদর্শ সময় ছিল না; বিশেষত যদি অন্য লিগে ভিন্ন দেশে নতুন ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে মানাতে হয়।

সত্যি বলতে, আমি ম্যানসিটি সম্পর্কে বেশি কিছু জানতাম না। আমি শুধু কিছু সাধারণ তথ্য জানতাম সেই ক্লাবের। আমি জানলাম, শেখ মানসুর সেই ক্লাবকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাচ্ছে, এবং বিশ্বের সেরা প্লেয়ারদের কিনতে আগ্রহী। কয়েক মাস আগেই তারা রবিনহোকে কিনেছে। সেখান থেকে আমি জানলাম, তারা ইংল্যান্ডের মধ্যে বড় ক্লাব হতে চলেছে। আর আমি তাদের কিছু খেলাও দেখলাম টিভিতে।

সে সময় ম্যানসিটি আজকের ম্যানসিটির মতো ছিল না।তারা তখনও বিশ্বের সেরা ও ক্ষমতাবান ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি হওয়ার যাত্রার শুরুতে। তারা ইংল্যান্ড ও ইউরোপে বড় ট্রফি জয়ের জন্য যোগ্য একাদশ বানানোর পথে। আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম, যাদেরকে তারা কিনতে চায়। আমার মতে, এটা খুবই দারুণ অফার ছিল। কিন্তু আমিই নিশ্চিত ছিলাম না।

সিটি ফ্যানরা কাকার অপেক্ষায়; Image Source: Twitter

সিটির সাথে আমার আলোচনা অনেক দূর পর্যন্ত যায়। সেটা এমন জায়গায় ছিল, যেখানে সকল অঙ্কের ও তথ্যের আলোচনা হয়। অফার আমার সামনেই ছিল। যে জিনিসটা আমার আর সিটির মাঝে ছিল, তা হলো আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। যে বেতন আমাকে অফার করা হয়, তা মিলান থেকে অনেক বেশি ছিল। এমন মুহূর্তে আপনি নিজের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সেটা ভাববেনই। সেটাই স্বাভাবিক ছিল।

আমি নিজেকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। ইংল্যান্ডে খেলার সময় আমার জীবন কেমন হবে, নতুন ক্লাবে আমার রুটিন কী হবে, আমার বাচ্চা ও স্ত্রীর জন্য ঘর বদলানো কেমন কষ্ট হবে, এ সকল চিন্তা আমার মাথায় ঘুরতে থাকে। আমি সে সময় অনেক প্রার্থনা করতে থাকি। প্রার্থনা এমন জিনিস ছিল, যা আমার জীবনে সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে; আর অবশ্যই সেই সিদ্ধান্তে শান্তি পেতেও।

আলোচনার চূড়ান্ত মুহূর্তে আমার ফোন আবার বাজে। এবারও আমি বাসায়ই ছিলাম, এবং ফোনে আমার বাবাই ছিলেন। তিনি সিটির সাথে আরেকটি মিটিংয়ে ছিলেন। একই সময় আমার জানালা দিয়ে দেখলাম, আমার বাসার সামনের রাস্তায় শত শত মিলান সমর্থক জড়ো হয়েছে। তারা বুঝতে পারে, এটা তাদের সঙ্গে আমার শেষ কিছু সময় ছিল। আর তারা প্রকাশ করে, এটা তাদের জন্যও অনেক বড় সিদ্ধান্ত। এই ঘটনা সেই সময় তাদের ভালোবাসার এক প্রদর্শনী ছিল। মিলান সমর্থকরা আমাকে ভালোবাসতো, এখনো ভালোবাসে, এবং আমিও তাদের ভালোবাসি। আমি সত্যিই বলতে পারি না, সেদিন যদি তারা আমার বাসার সামনে না আসতো, তাহলে হয়তো আমার সিদ্ধান্ত অন্য কিছু হতো। এমন ভালোবাসার সম্মুখীন হতে পারাটা অসাধারণ অনুভূতি। এটা বুঝতে পেরে খুব ভালো লাগে, তারা আমাকে কী পরিমাণ চায় যে, আমাদের একসাথে এই যাত্রা চলতে থাকুক। তারা আমাকে অনেক সাহায্য করে সে সময়। রাস্তা ভীড়ে সয়লাব, আমার নামে গান বাজছিল। আমি তখনও ফোনে বাবার সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে চুক্তির শেষ ধাপগুলো বুঝালেন।

এটাই সেই মুহূর্ত ছিল।তিনি বললেন, “আর কোনো কিছু ভাবার নেই, সব কিছু তোমার উপর।”

“বাবা,” আমি স্থিরভাবে বললাম, “তুমি তাদের বলতে পারো, আমি এখন কোথাও যাচ্ছি না।তাদের বলো,ভবিষ্যতে কী হয় সেটা পরে দেখা যাবে। আমার সিদ্ধান্ত মিলানে থাকার। এটাই ফাইনাল।”

সেই মুহূর্ত; Image Credit: EPA

আমি অবশেষে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে, আমার সিটিতে যাওয়ার জন্য এটা সঠিক সময় ছিল না। তার মূল কারণ ছিল তাদের নতুন স্কোয়াড গড়ে তোলার ব্যাপারটা, যা অনিশ্চিত ছিল। কীভাবে নতুন করে স্কোয়াড গড়ে উঠবে, তা আমার কাছে পরিষ্কার ছিল না, এবং সেটা কাজ করবে কি না সেটাও। বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটি অনেক শক্ত ক্লাব, তাই এখন যদি আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো, তাহলে সেটা সহজ হতো আমার জন্য। এখন যদি কেউ তাদের কাছ থেকে অফার পায়, তাহলে তাকে আমার মতো মাথাব্যথায় ভুগতে হতো না, যা এক দশক আগে আমার সাথে হয়েছিল।সহজ কথায়, আমাকে যদি এ বছর তাদের সাথে চুক্তি করতে হতো, তাহলে আমার সিদ্ধান্ত ভিন্ন কিছু হতো, এটা নিশ্চিত।

দুর্ভাগ্যবশত, তখন বিষয়বস্তু অন্যরকম ছিল। আমাকে ইউরোপের অন্যতম ঐতিহাসিক ও সফলতম ক্লাব ছাড়তে বলা হয়েছিল এমন একটি দলের জন্য, যারা তার নবযাত্রার শুরুর দিকে ছিল। যেখানে আমিই তাদের প্রথম বড় প্লেয়ার হওয়ার কথা। পিছনে ফিরে তাকালে মিলানে থাকাই নিরাপদ ছিল, কারণ মিলান ইউরোপের প্রথম সারির ক্লাবের মধ্যে একটি হিসেবে ইতঃমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত ছিল, যারা প্রত্যেকবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার জন্য লড়াই করে। আর সেখানে আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলাম।

মানুষ আমাকে প্রায় সেই জনপ্রিয় ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করে, যেখানে আমি বারান্দা দিয়ে আমার মিলানের জার্সি তুলে ধরেছিলাম মিলানের ফ্যানদের দেখানোর জন্য। এটা এমন কিছু ছিল, যা হঠাৎ করেই হয়েছিল। ওটা একটা উত্তর ছিল সকল চাপ ও দুশ্চিন্তার প্রতি, যাতে আমি প্রতিনিয়ত ভুগে চলছিলাম। আমার বাবার সাথে কথা বলার পর আমার কাজ ছিল মিলানকে আমার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানানো। ক্লাব তাৎক্ষণিক প্রেস অফিসারদের মাধ্যমে অফিসিয়াল বক্তব্য রাখে। মিডিয়া জলদি এই খবর ছড়িয়ে দিল, এবং আমার বাসার নিচে সমর্থকদের এই খবর জানতে বেশি দেরি হলো না। ফ্যানদের উদযাপন, উল্লাস, গান গাওয়া সব কিছু আমি শুনতে পারছিলাম। আমিও মিলানের জার্সি নিয়ে তাদের সাথে উদযাপনে যোগ দেই। তারা গান গাইলো, নাচলো, এমনকি আতশবাজিও ফোটালো। উন্মাতাল এক উদযাপন চলছিল, যা আমি এর আগে কখনো দেখিনি। আধাঘন্টা পর লিওনার্দো আমার বাসায় আসে। আমরা বিকালের বাকি সময় আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করি।

আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটুও অনুতপ্ত হইনি। অবশ্যই সিদ্ধান্ত ভুল হতেই পারে, কিন্ত কিছু মানুষ কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই অনেক সময় ব্যয় করে। সেই ঘটনার পর আমি আমার জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট। পেশাগত ও ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে নিয়ে খুশি, আর আমার সিদ্ধান্তগুলোই আমাকে আজকের এই ব্যক্তি হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। আমি ইতালি, স্পেন ও আমেরিকার অরলান্ডো সিটিতে ক্যারিয়ারে যা কিছু শিখেছি, তা নিয়ে গর্বিত। প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল আজকের মতো হয়ে উঠতে।

কয়েক মাস পর আমি অবশেষে মিলান ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদ গেলাম নিজের স্বপ্ন পুরণ করতে। এটা আমার কাছে পরিষ্কার ছিল, যদি আমাকে মিলান ছেড়ে অন্য ক্লাবে যেতে হয়, তবে সেটা হবে রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্ত সে সময় অফারটা সিটি থেকে আসে। আমার মনে হয়, সিটির অফার ফিরিয়ে দেওয়াটাই প্রমাণ ছিল যে, টাকা আমার কাছে কখনোই মূল বিষয় ছিল না।

রিয়ালে সাইনিংয়ের সময়; Image Credit: Juan Medina/Reuters

সিটিকে না বলার পর আমি জানতাম জুন-জুলাই অন্য অফার আসবে। মিলান ট্রান্সফারের জন্য দরজা খুলে দেয়, এবং আমিও এই ব্যাপারে ভাবি।আমি ঠিক করি, এই সময় যদি রিয়াল মাদ্রিদ আমার প্রতি আগ্রহ দেখায়, আমি অবশ্যই তাদের হয়ে খেলতে চাইব।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রিমিয়ার লিগে খেলা আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা হতো। আমার ক্যারিয়ারে আর আমার সিদ্ধান্তের ফলাফল কী হয়েছে, তা আমি জানি। তার মানে এই নয় যে আমি কিছু নিয়ে অনুতপ্ত। একদমই নয়। আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে গর্বিত। তবে আমি যদি সব কিছু পরিকল্পনা করতে পারতাম, তাহলে একটা সময় প্রিমিয়ার লিগে হয়তো খেলার ব্যাপারে বিবেচনা করতাম।

আপনাকে শান্ত হতে হবে, এবং নিজের সিদ্ধান্তেই শান্তি খুঁজতে হবে।সেই মুহূর্তে আমি ম্যানচেষ্টার সিটিকে ‘না’ বলাতেই শান্তি পেয়েছিলাম। 

Related Articles

Exit mobile version