গত বছরের জুলাইয়ে এক সাক্ষাৎকারে আইরিশ ব্যাটসম্যান এড জয়েস বলেছিলেন,
“আমি এখনও নিশ্চিত নই, এ বছরের পর আমি খেলা চালিয়ে যাবো কি না! যদি টেস্ট ক্রিকেট না থাকতো, অবশ্যই এ বছরেই ক্রিকেটকে বিদায় জানাতাম।”
বরাবরই টেস্ট ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিয়েছেন এড জয়েস। শেষপর্যন্ত আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে খেলার স্বাদ নিয়ে বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে আয়ারাল্যান্ডের ঐতিহাসিক প্রথম টেস্ট ম্যাচে অধিনায়ক পোর্টারফিল্ডের সাথে ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন জয়েস। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মাত্র চার রান করে ফিরে গেলেও ফলো-অনে পড়া আয়ারল্যান্ডকে ভালো সূচনা এনে দেন তিনি। রান আউটের ফাঁদে পড়ার আগে ৯৮ বলে ছয়টি চারের মারে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন জয়েস।
আয়ারল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বল মোকাবেলা করা এবং প্রথম রান সংগ্রহ করা ব্যাটসম্যান হিসেবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন জয়েস।
স্বপ্নের টেস্ট ম্যাচ খেলার পরই ক্রিকেটকে বিদায় জানান আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা জয়েস।
১
২২শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ক্রীড়ানুরাগী এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এডমন্ড ক্রিস্টোফার জয়েস। তার বাবা জিমি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর প্রথম ক্রিকেট খেললেও তার পাঁচ ছেলে এবং চার মেয়ে কখনও ব্যাট-বলের সংকটে পড়েনি।
জয়েসের নয় ভাই-বোনের মধ্যে পাঁচজন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন। এড জয়েস ও ডমিনিক জয়েস আয়ারল্যান্ডের পুরুষ ক্রিকেট দলে খেলেছেন এবং যমজ দুই বোন ইসাবেল জয়েস ও সেসেলিয়া জয়েস আয়ারল্যান্ড প্রমীলা ক্রিকেট দলে খেলেছেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় আয়ারল্যান্ডের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেও এড জয়েসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছে ইংল্যান্ডের হয়ে।
জয়েসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ১৩ জুন ২০০৬ সালে। কাকতালীয়ভাবে ঐ ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিলো আয়ারল্যান্ড। আইরিশদেরও এটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ম্যাচ ছিলো। বেলফাস্টে জয়েস এবং আয়ারল্যান্ডের অভিষেক ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের হয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন এড জয়েস এবং মার্কাস ট্রেসকোথিক। জয়েস ১০ রান করে ফিরে গেলেও ট্রেসকোথিকের ১১৩ রান এবং ইয়ান বেলের ৮০ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ৭ উইকেটে ৩০১ রান সংগ্রহ করেছিলো ইংল্যান্ড। জবাবে আয়ারল্যান্ডের ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৬৩ রানে থেমে যায়।
এই ম্যাচে অভিষেক হয় এড জয়েসের ছোট ভাই ডমিনিক জয়েসেরও। তার অভিষেক ঘটে আয়ারল্যান্ডের হয়ে। আইরিশদের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান ডমিনিক।
২
মিডলসেক্সের হয়ে প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে ১৯৯৯ সালে অভিষেক ঘটে এড জয়েসের। তখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে আয়ারল্যান্ড। ২০০১ সালে মিডলসেক্সের হয়ে খেলার সময় ঠিক করেন ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করার প্রধান কারণ ছিলো আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন।
২০০৫ সালের জুলাইতে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার অনুমতি পেয়ে যান এড জয়েস। কয়েকমাস পরেই ইংল্যান্ড ‘এ’ দলে ডাক পান তিনি। ২০০৬ সালের জুনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পেলেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য তাকে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০০৬ সালের ১৩ জুন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন। দুদিন পরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও অভিষেক জয়েসের।
ইংল্যান্ডের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পরের মাসে কাউন্টি ক্রিকেটে ফিরে এসে মিডলসেক্সের হয়ে ক্যারিয়ার সেরা ২১১ রানের ইনিংস খেলেন এড জয়েস। সময়টা বেশ ভালো যাচ্ছিলো তার। কাউন্টি ক্রিকেটের দুর্দান্ত ব্যাটিং করেও অবসাদগ্রস্ত মার্কস ট্রেসকোথিকের জায়গায় ২০০৬/০৭ মৌসুমের অ্যাশেজ স্কোয়াডে জায়গা করে নেন তিনি। স্কোয়াডে জায়গা করে নিলেও কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি জয়েস।
টেস্ট ম্যাচে একাদশে না থাকলেও কেভিন পিটারসেনের ইনজুরির দরুন অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে নিয়মিত দলে ছিলেন। সিরিজে ৯ ম্যাচে ৩২.০০ ব্যাটিং গড়ে ২৮৮ রান করেছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে অর্ধশতক হাঁকানোর পরের ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
সিডনিতে কমনওয়েলথ ব্যাংক ওয়ানডে সিরিজের ১০ম ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ইংল্যান্ড। শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এড জয়েসের ১৪২ বলে ১০ চারের মারে ১০৭ রানের অনবদ্য ইনিংসের উপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯২ রান সংগ্রহ করেছিলো ইংল্যান্ড। জবাবে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ২০০ রানে গুটিয়ে গেলে ৯২ রানের জয় পায় ইংল্যান্ড। এড জয়েস তার অসাধারণ শতকের পুরস্কারস্বরূপ ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন।
ত্রিদেশীয় সিরিজে গড়পড়তা পারফরমেন্সের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন এড জয়েস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার বিশ্বকাপ মিশন। পরবর্তী দুই ম্যাচে কানাডা এবং কেনিয়ার বিপক্ষে ৬৬ এবং ৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জয়েস।
৩
ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটলেও আয়ারল্যান্ডকে ওয়ানডে স্ট্যাটাস এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন এড জয়েস। আইসিসি ট্রফিতে আয়ারল্যান্ডের হয়ে ৭০ এর উপর ব্যাটিং গড়ে রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডকে মূল পর্বে তোলার প্রধান কারিগর ছিলেন তিনিই। বাছাইপর্বের পাঁচ ম্যাচে যথাক্রমে ১০৩, ৪০, ১১৫*, ৬০ এবং ৮১ রান করেছিলেন।
আয়ারল্যান্ডকে বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করা জয়েস ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ খেলেন ইংল্যান্ডের হয়ে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের সুপার এইটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ খেলার পর আর ইংল্যান্ড দলে ডাক পাননি তিনি।
২০০৮ সালে মিডলসেক্স ছেড়ে সাসেক্সে যোগ দেওয়ার পর ২০০৯ মৌসুমে ব্যাট হাতে দারুণ সময় কাটিয়েছিলেন। যার ফলে তার আবারও ইংল্যান্ড দলে জায়গা পাওয়ার গুঞ্জন উঠেছিলো। কিন্তু জয়েস ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এড জয়েস ইংল্যান্ডের হয়ে ১৭ ওয়ানডেতে ২৭.৭০ ব্যাটিং গড়ে ৪৭১ রান এবং ২ টি-টোয়েন্টিতে ১ রান করেছেন। টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি জমালেও ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়নি জয়েসের।
৪
এক দেশ থেকে আরেক দেশের হয়ে খেলতে হলে আইসিসির নিয়মানুযায়ী চার বছরের ব্যবধান থাকতে হবে। জয়েস ইংল্যান্ডের হয়ে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ খেলেছিলেন মার্চ মাসে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ মাঠে গড়িয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। নিয়মানুযায়ী এড জয়েসের বিশ্বকাপ আয়ারল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামার কথা ছিলো না। শেষপর্যন্ত আইসিসি এড জয়েসের আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জনের সময়সীমা কমিয়ে আনলে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পান তিনি।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে এড জয়েসের অভিষেক ঘটে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে। ঐ ম্যাচে ৩৫ বলে ১৬ রান করেন তিনি। আইরিশদের হয়ে প্রথম অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেন বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। মোহালিতে তিনি ১০৯ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ৮৪ রান করেন। কাকতালীয়ভাবে চার বছর পর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঠিক ৮৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
জয়েস আয়ারল্যান্ডের হয়ে প্রথম ওয়ানডে শতকের দেখা পান ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ। ডাবলিনে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন নাম্বারে ব্যাট করতে নামেন তিনি। ওপেনার স্টার্লিং ইনিংসে ৫ম বলে সাজঘরে ফিরে গেলে প্রথম ওভারেই ব্যাট হাতে নামতে হয় জয়েসকে। অপরপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের পতন ঘটলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে শেষপর্যন্ত ১৩২ বলে ১২টি চার এবং ১টি ছয়ের মারে ১১৬* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তার শতকের উপর ভর করে আয়ারল্যান্ড ৯ উইকেটে ২২৯ রান সংগ্রহ করে।
পাকিস্তান ২৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৭ রানে ৪ উইকেট এবং ৬০ রানে ৫ উইকেট হারায়। পাকিস্তানকে চাপে ফেলেও জয়ের দেখা পায়নি আয়ারল্যান্ড। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কামরান আকমলের ৮১ রান এবং ওয়াহাব রিয়াজের অপরাজিত ৪৭ রানের উপর ভর করে পাকিস্তান দুই উইকেটে জয় পায়।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও রানের মধ্যে ছিলেন এড জয়েস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৬৭ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়ে অবদান রাখেন। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চার উইকেটে পরাজিত করেছিলো আয়ারল্যান্ড। গ্রুপপর্বের আরেক ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
আয়ারল্যান্ডের জার্সি গায়ে এড জয়েস তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে। পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে রশিদ খান এবং মোহাম্মদ নাবীদের বিপক্ষে ১৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আয়ারল্যান্ড পাঁচ উইকেটে ২৬৫ রান সংগ্রহ করে। এড জয়েস ওপেনিংয়ে নেমে শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১৪৮ বলে ১৯টি চার এবং তিনটি ছয়ের মারে ১৬০ রান করেন। তার অনবদ্য ইনিংসের উপর ভর করে আফগানিস্তানকে ১৩ রানে পরাজিত করে সিরিজে ২-২ এ সমতায় এনেছিল আয়ারল্যান্ড।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে পুরো সিরিজেই ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন এড জয়েস। বৃষ্টির কারণে প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর পরবর্তী চার ম্যাচে যথাক্রমে ৬২, ১০৫*, ১২ এবং ১৬০* রানের ইনিংস খেলেন। যার ফলে সিরিজ সেরার পুরস্কার তার হাতেই উঠে।
এড জয়েস আয়ারল্যান্ডের হয়ে শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। নিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে কোনো রান না করেই সাজঘরে ফিরে যান তিনি। এই ম্যাচ বাদে পুরো টুর্নামেন্টেই রানের মধ্যে ছিলেন জয়েস। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৬ রানের ইনিংস খেলার পর পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৫৩ রান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৮টি ভিন্ন দেশের বিপক্ষে মোট ৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন। ৭৮ ম্যাচে ছয়টি শতক এবং ১৫টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৮.০০ ব্যাটিং গড়ে ২,৬২২ রান করেছেন। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ডের হয়ে পাঁচটি শতক এবং ১২টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪১.৩৬ ব্যাটিং গড়ে ২,১৫১ রান করেছেন।
৫
এড জয়েস বরাবরই টেস্ট ম্যাচ খেলার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। সবসময় নিজেকে টেস্ট ম্যাচের জন্য প্রস্তুত রাখতেন তিনি। ২০১৫-১৭ সালের ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে আয়ারল্যান্ডকে রানার্স আপ হতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন জয়েস। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে রানার্স আপ হওয়ার দরুন আয়ারল্যান্ড দ্রুত টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যায়। টুর্নামেন্টে তিনি ছয় ম্যাচে দুটি দ্বিশতকের সাহায্যে ৭০.০০ ব্যাটিং গড়ে ৭০০ রান করেন।
২০১৫ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ শুরু হওয়ার পর থেকে আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি জয়েস। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৪ সালে। তিনি ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের হয়ে মোট ১৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ১৬ ম্যাচ। ১৬ ম্যাচের ১৪ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৬.৭২ ব্যাটিং গড়ে ৪০৪ রান করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডের হয়ে কখনও এক সংখ্যার রান করে আউট হননি এড জয়েস।
৬
এড জয়েস তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন ইংলিশ কাউন্টিতে। ১৯৯৯ সালে মিডলসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। পরের বছরেই এন.বি.সি ডেনিস কম্পটন অ্যাওয়ার্ড জেতেন। ২০০২ সাল থেকে মিডলসেক্স দলের নিয়মিত সদস্যতে পরিণত হন জয়েস। ঐ বছর প্রায় ৫১ ব্যাটিং গড়ে রান করেছিলেন। চারটি শতকও হাঁকিয়েছিলেন তিনি।
এড জয়েস ২০০৮ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখে মিডলসেক্স ছেড়ে সাসেক্সে যোগদান করেন। ১৯৯৯-২০০৮ সাল পর্যন্ত মিডলসেক্সের হয়ে ১১৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৪৬.৭৬ ব্যাটিং গড়ে ৮,২৭৮ রান করেছেন। মিডলসেক্সের হয়ে শতক হাঁকিয়েছেন ১৯টি এবং অর্ধশতক ৪৮টি। এছাড়া ১২৪টি লিস্ট-এ ম্যাচে একটি শতক এবং ২২টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩২.০২ ব্যাটিং গড়ে ৩,২৩৫ রান করেছেন।
২০০৯ সালে সাসেক্সে নাম লেখানোর পর প্রথম মৌসুম স্বপ্নের মতো কাটিয়েছিলেন। প্রথম মৌসুমেই তিনটি শতক হাঁকিয়ে ইংল্যান্ডের নির্বাচকমণ্ডলীর নজরে চলে আসেন। অবশ্য ততদিনে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, এখনই সময় নিজ দেশ আয়ারল্যান্ডকে কিছু দেওয়ার। ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। তখনও সাসেক্সের হয়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন। ২০১২-১৫ সাল পর্যন্ত তিনি সাসেক্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এড জয়েস কাউন্টি ক্রিকেটে নিজের সেরা সময় কাটিয়েছেন সাসেক্সের হয়ে। গত বছর সাসেক্সকে বিদায় জানানোর আগপর্যন্ত ১১৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৩টি শতক এবং ৩৯টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৯.৩৯ ব্যাটিং গড়ে ৮,৩৪৮ রান করেছেন। এবং ৭৯টি লিস্ট-এ ম্যাচে আটটি শতক এবং ১৩টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪৭.০৪ ব্যাটিং গড়ে ৩,১০৫ রান করেছেন।
ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার আগপর্যন্ত তিনি ২৫৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৪৭টি এবং ৯২টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। আয়ারল্যান্ডের কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৭.৯৫ ব্যাটিং গড়ে মোট ১৮,৪৬১ রান করেছেন। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও তার পরিসংখ্যান বেশ উজ্জ্বল। ৩১১টি লিস্ট-এ ম্যাচে ১৮টি শতক এবং ৫৮টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৮.৮৯ ব্যাটিং গড়ে ১০,২৬৭ রান করেছেন।
বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে এড জয়েস এখন কোচিংয়ে মনোযোগ দিয়েছেন। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটকে তিনি বিদায় জানালেও ক্রিকেট তাকে এত সহজে ছাড়ছে না। অবসরের পর আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন এড জয়েস। সদ্য টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটা আইরিশ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে তিনি নিজেও উচ্ছ্বসিত।
ফিচার ইমেজ: Twitter