ফলস নাইন, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম পরিচিত এবং একই সাথে কার্যকর ফুটবল ট্যাকটিক্সের মধ্যে একটি। মডার্ন ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল উভয় ক্ষেত্রেই ফলস নাইনের ইমপ্লিমেন্টেশন এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বর্তমান সময়ে অনেক দলই ট্র্যাডিশনাল নাম্বার নাইনের পরিবর্তে দলের সবচেয়ে ট্যাক্টিক্যালি কমপ্লিট প্লেয়ারকে ‘ফলস নাইন’ রোলে খেলিয়ে দুর্দান্ত সাফল্য লাভ করেছে। ফলস নাইনের উদ্ভব অনেক আগে ঘটলেও মডার্ন ফুটবলকে পেপ গার্দিওলাই ফলস নাইনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এবং মেসিকে ফলস নাইন রোলে খেলিয়ে সাফল্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে।
ফলস নাইন কী?
‘ফলস নাইন’ হচ্ছে সেন্টার ফরোয়ার্ডদের মধ্যে এমন অনন্য ধরন, যেখানে এই রোলে থাকা ফুটবলার বক্সে পজিশন হোল্ড করে স্কোরিং চান্স খোঁজার পরিবর্তে ডিপে ড্রপ করে মিডফিল্ডারদের সাথে জয়েন করে মিডফিল্ডে ‘নিউমেরিক্যাল সুপিয়রিটি’ তৈরি করবে। ‘ফলস নাইন’ রোলে খেলা ফুটবলাররা লোন স্ট্রাইকারদের মতো বক্সের মধ্যে বলের অপেক্ষায় না থেকে মিডফিল্ডে ড্রপ করে বিল্ডআপে অংশ নেয় এবং টিমমেটদের জন্য বাড়তি পাসিং অপশন তৈরি করে।
গার্দিওলার জোন ওরিয়েন্টেশন এবং ফলস নাইন রোলে মেসি
প্রথমেই একটা ব্যাপার উল্লেখ করে রাখা যাক। চিরায়ত কোচিং রীতি অনুসারে, খেলার ট্যাকটিক্যাল প্ল্যানিং এবং অ্যানালাইসিসের জন্য প্রথমেই মাঠকে ১৮টি জোনে বিভক্ত করে নেওয়া হয়। তবে সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললে গার্দিওলা আর ‘গার্দিওলা’ হবেন কেন! তাই তিনি একটু অন্যরকমভাবেই চিন্তা করেন। চলুন, দেখে নেওয়া যাক।
পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনার প্লেয়িং স্টাইলের মূল দর্শন ছিল পজিশনাল প্লে। পজিশনাল সুপিয়রিটি অর্জনের জন্য প্লেয়ারদের ৪টি স্পেসিফিক পয়েন্ট সবসময় মাথায় রাখতে হয়, বল কোথায় আছে, তাদের টিমমেটদের পজিশন, ফ্রি স্পেস, এবং অপোনেন্ট প্লেয়ারদের পজিশন। এই চারটি পয়েন্ট মেইনটেইন করতে পারলে প্লেয়াররা সম্পূর্ণভাবেই ম্যাচটি নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পারেন, ডিফেন্সিভলি এবং অফেন্সিভলি উভয় ক্ষেত্রেই। এই ফিলোসফি মেইনটেইন করার জন্য পেপ মাঠকে স্পেসিফিক ২০টি জোনে ভাগ করে দেন। হ্যাঁ, ১৮ নয়, ২০ জোন। পজিশনাল সুপিয়রিটি মেইনটেইন করা এবং ম্যাচের ফ্রি ফ্লো কন্টিনিউ করার জন্য এই জোনগুলোকে কিছু স্পেসিফিক ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছিল। ম্যাচের কখনোই একই হরাইজোন্টাল লাইনে তিনজনের বেশি প্লেয়ার পজিশন নিতে পারবে না এবং একই ভার্টিক্যাল লাইনে দুইজনের বেশি প্লেয়ার পজিশন নিতে পারবে না।
পজিশনাল প্লে মেইনটেইন করার জন্য জোন ৬-৭-৮-১৩-১৪-১৫ নিজেদের কন্ট্রোলে রাখা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু এই জোনগুলো মাঠের কেন্দ্রে রয়েছে। দলের ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডারদের পেপ জোন ৬-৮ এবং ১৩-১৫তে অপারেট করাতেন, এর কারণ ছিল এই জোনগুলো ছিল হাফ-স্পেস এবং এই জোনগুলোতে অপোনেন্টের ওভারলোড থাকতো না; ফলে ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডারদের বল নিয়ে ফ্রি-ফ্লো করতে সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে জোন ১৪তে একজন টেকনিক্যালি সলিড ফুটবলারের উপস্থিতি যেকোনো ধরনের ডিফেন্স লাইনকে আনলক করে দিতে পারে। কারণ অপোনেন্ট ডিফেন্স লাইন খুব অর্গানাইজড হলেও সেন্টারব্যাক এবং ফুলব্যাকের মাঝে কিছুটা গ্যাপ থাকে। এক্ষেত্রে জাভি-ইনিয়েস্তা যদি জোন ১৩-১৫তে সেন্টারব্যাক এবং ফুলব্যাকের মাঝের গ্যাপে পজিশন নিতেন এবং জোন ১৪ থেকে কেউ তাদের ওই গ্যাপের ভেতর দিয়ে ডায়াগনাল পাস দেন, তাহলে এক মুহূর্তেই ডিফেন্স আনলক হয়ে যাবে। অথবা যদি অপোনেন্টের সেন্টারব্যাকরা যদি জাভি-ইনিয়েস্তাকে মার্ক করে, সেক্ষেত্রে জোন ১৪তে পজিশন হোল্ড করা প্লেয়ার খুব সহজেই ড্রিবল করে বক্সে ঢুকে অ্যাটেম্পট নিতে পারতেন। এজন্য পেপের দরকার ছিল ট্র্যাডিশনাল নাম্বার নাইনদের মতো না হয়ে এমন একজন ফুটবলার, যে অপোনেন্ট থার্ডে লাইন হোল্ড না করে মিডফিল্ডে ড্রপ করে অপোনেন্টের ডিফেন্স ব্রেক করতে সাহায্য করবে।
পেপ গার্দিওলার পজিশনাল প্লে-বেজড ফুটবলে বড় ধরণের বৈচিত্র্য এনেছিলেন ফলস নাইনের উদ্ভবের মধ্য দিয়ে। মেসি কখনোই ট্র্যাডিশনাল ফরোয়ার্ডদের মতো ছিলেন না, লাইন হোল্ড করে রাখার চেয়ে সবসময়ই নিচে ড্রপ করে বিল্ডআপে কন্ট্রিবিউট করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। মেসির গোলস্কোরিং অ্যাবিলিটি, চান্স ক্রিয়েটিং, ড্রিবলিং এবং বলে টাচ না করেই গেমে ইনভলভ থাকা – এইসব গুণাবলির জন্য পেপ মেসির জন্য এমন একটা রোল তৈরি করলেন, যেটা মেসিকে তার টিমমেটদের জন্য অপোনেন্ট থার্ডে স্পেস ক্রিয়েট করতে সাহায্য করেছে এবং সেন্টার-প্লেতে ডেস্ট্রাক্টিভ রোলের মাধ্যমে মেসিকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
মেসি ফলস নাইন রোলে খেললে অপোনেন্ট ডিফেন্ডাররা একরকম উভয় সংকটে পড়তো। যখন মেসি মিডফিল্ডে ড্রপ করবেন, তখন ডিফেন্ডারের রোল কী হবে? যদি সে মেসিকে মার্ক করে মিডফিল্ডে চলে আসে, সেক্ষেত্রে পেদ্রো, ভিয়া, জাভি, কিংবা ইনিয়েস্তার জন্য সেই স্পেস এক্সপ্লয়েট করে অপোনেন্ট বক্সে ফরোয়ার্ড রান নেওয়ার সুযোগ হবে। যদি সেই ডিফেন্ডার মেসিকে ফলো না করেন, তবে মেসি মিডফিল্ডে ফ্রি হয়ে যাবেন এবং কুইক সলো রান করে ডিফেন্স লাইনকে বিট করার চেষ্টা করবেন, অথবা জাভি-ইনিয়েস্তার সাথে পজিশন রিসাইক্লিং করে বিল্ডআপ করবেন। কিন্তু দুইক্ষেত্রেই বিপদের খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
মেসি নিচে ড্রপ করলে কি মিডফিল্ডারের মেসিকে মার্ক করা উচিত? যদি অপোনেন্ট মিডফিল্ডার মেসিকে ম্যান মার্ক করে, তবে জাভি-ইনিয়েস্তার জন্য পজিশন হোল্ড করে ফরোয়ার্ড মুভমেন্ট নিতে সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে মেসির বুদ্ধিদীপ্ত মুভমেন্ট অপোনেন্ট থার্ডে টিমমেটদের ফরওয়ার্ড মুভ করতে সুবিধা করে দেবে এবং গোলস্কোরিং চান্স তৈরি করতে পারবে।
মেসিকে ফলস নাইন রোলে রেখে বার্সেলোনার বিল্ডআপ স্ট্র্যাটেজি
বার্সেলোনা সবসময় ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপ করতে শুরু করে এবং ইনিশিয়াল বিল্ডআপের সময় সেন্ট্রাল এরিয়াগুলো ওভারক্রাউডেড করার চেষ্টা করে। গার্দিওলা সবসময় জাভি এবং ইনিয়েস্তার সাথে মেসিকে ডিপে ড্রপ করিয়ে সেন্টার মিডফিল্ড এরিয়ায় ওভারলোড ক্রিয়েট করে পাসিং ফ্লো কন্টিনিউ রাখার চেষ্টা করতেন।
এক্ষেত্রে অপোনেন্টের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মেসির ফ্রি রোমিং। পেপ বার্সেলোনার হয়ে সর্বপ্রথম ২০০৮-০৯ সিজনের এল ক্ল্যাসিকো ম্যাচে মেসিকে ফলস নাইন রোলে ব্যবহার করেন এবং ফলস্বরূপ ওই ম্যাচে বার্সেলোনা রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ২-৬ ব্যাবধানে জয়লাভ করে। রিয়াল মাদ্রিদের এরকম হিউমিলিয়েশন ছিল গার্দিওলা এবং মেসির বুদ্ধিদীপ্ত স্ট্র্যাটেজির ফলাফল। দুজনেরই নিজেদের সামর্থ্যের উপর পূর্ণ আস্থা ছিল, গার্দিওলার জানা ছিল পজিশনিংয়ের গুরুত্ব আর মেসির ছিল দুর্দান্ত পজিশনিং সেন্স।
বল পজেশন থাকা অবস্থায় বিল্ডআপের সময় মেসি মিডফিল্ডে ড্রপ করে মিডফিল্ডে ওভারলোড তৈরি করতো এবং একই সাথে অপোনেন্ট সেন্টারব্যাকের মার্কিং জোন থেকে নিজেকে আনমার্কড করে নিত। এজন্য বল পায়ে আসার পর মেসির কাছে টার্ন করার মতো প্রচুর স্পেস থাকতো। এ সময় মেসি তার ড্রিবলিং অ্যাবিলিটি এবং কুইক রানের মাধ্যমে অপোনেন্টের ডিফেন্সলাইন ব্রেক করে বক্সে অ্যাটেম্পট নিত। মিডফিল্ড থেকে মেসির এই কুইক মুভমেন্টগুলো ফলস নাইনের আদর্শ উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। সর্বোচ্চ স্ট্যান্ডার্ড লেভেলে একজন ফলস নাইনকে কেমন রোল প্লে করতে হবে, সেটা মেসির পারফরম্যান্স থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব।
রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ওই ম্যাচের শুরুতে ইতো সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড এবং মেসি রাইট ফ্লাঙ্কে খেলতে শুরু করেন। কিন্তু ম্যাচের মাত্র পাঁচ মিনিটেই দু’জন নিজেদের মধ্যে পজিশন অদলবদল করে নেন। এসময় ইতো রাইট উইংয়ের হাফ স্পেসে পজিশন নেন এবং মেসি রাইট উইং থেকে ডিপে ড্রপ করে জাভি এবং ইনিয়েস্তার সাথে মিডফিল্ডে ওভারলোড তৈরি করেন। এসময় অঁরি লেফট ফ্লাঙ্কে টাচলাইন উইঙ্গারের মতো ওয়াইড এরিয়ায় পজিশন নিয়ে রিয়ালের রাইটব্যাক রামোসকে নিজের দিকে ড্র্যাগ করে রাখেন।
মেসি ফলস নাইন রোলে খেললে অপোনেন্ট সেন্টারব্যাকদের জন্য সবচেয়ে বড় কনফিউশনের ব্যাপার হচ্ছে, মেসি মিডফিল্ডে ড্রপ করলে তারা মেসিকে মার্ক করে হাইলাইনে উঠে যাবে, নাকি মেসিকে ফ্রি করে নিজেদের ডিফেন্সিভ শেপ মেইনটেইন করবে। সেদিনকার ম্যাচের শুরুতেও মেসি বারবার নিচে ড্রপ করে এরকম পরিস্থিতি তৈরি করছিলেন মাদ্রিদ সেন্টারব্যাক ডুয়োর জন্য। ম্যাচের ফার্স্ট হাফে মাদ্রিদের দুই সেন্টারব্যাক ক্যানাভারো এবং হেইঞ্জ দু’জনই নিজেদের ইনিশিয়াল পজিশন হোল্ড করে মেসিকে এনাফ স্পেস দিয়ে ফ্রি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের এই অ্যাপ্রোচ সেকেন্ড হাফের শুরু থেকেই চেঞ্জ হয়ে যায়। সেকেন্ড হাফে ক্যানাভারো শুরু থেকেই মেসিকে মার্ক করে অনেক সময় বার্সার হাফেও চলে যাচ্ছিলেন।
হাইপারলিঙ্ক করা এই ভিডিওতে দেখা যায়, মেসি মিডফিল্ডে ড্রপ করাতে ক্যানাভারো মেসির সাথে হাইলাইনে উঠে এসেছেন। ফলে লেফট সাইড থেকে আবিদালের থ্রু-পাসে মাদ্রিদের ডিফেন্সলাইনে বিগ হোল ক্রিয়েট হয়েছে।
ওই ম্যাচে গার্দিওলার অন্যতম প্রধান স্ট্র্যাটেজি ছিল মেসিকে মিডফিল্ডে ড্রপ করিয়ে জাভি-ইনিয়েস্তার সাথে জুটি করে মিডফিল্ডে ওভারলোড ক্রিয়েট করা এবং মাদ্রিদের গ্যাগো এবং ডিয়ারাকে আউটনাম্বার করে দেওয়া। কখনো কখনো তোরে জাভি-ইনিয়েস্তা-মেসির সাথে জয়েন করে মাদ্রিদের ম্যান-টু-ম্যান প্রেসিংকে আরো কঠিন করে তুলছিলেন। জাভি-ইনিয়েস্তার ‘কন্টিনিউয়াস ফ্রি রোম’-এর কারণে ডিয়ারা এবং গ্যাগোর পক্ষে তাদের প্রেস করে পজেশন রিগেইন করা এমনিতেই কঠিন হয়ে পড়ছিল। মেসির কন্টিনিউয়াস ডিপে ড্রপ করে পাসিং অপশন ক্রিয়েট করার কারণে তাদের বল রিগেইন করার প্রচেষ্টা আরো বেশি দুঃসহ হয়ে পড়ছিল।
মেসি মিডফিল্ডে ড্রপ করলে অনেক সময় অপোনেন্ট ফরোয়ার্ডরা মিডফিল্ডে ড্রপ করে মিডফিল্ডে ওভারলোড ক্রিয়েট করতেন এবং সেন্ট্রাল এরিয়ায় পাসিং অপশন ব্লক করে লং বল খেলতে ফোর্স করতেন। এসময় তোরে কিছুটা উপরে উঠে আসতেন এবং আবিদাল হাইলাইন থেকে ড্রপ করে পিকে ও পুয়োলের সাথে থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইন ক্রিয়েট করতেন। তোরে-জাভি-ইনিয়েস্তা-মেসি মিলে ডায়মন্ড শেপ ক্রিয়েট করে কুইক ডায়াগনাল পাসে ওভারক্রাউডেড অপোনেন্ট মিডফিল্ড লাইনকে ব্রেক করে ফরোয়ার্ড মুভ করার চেষ্টা করতেন।
মেসির রোল
মেসি কন্টিনিউয়াসলি সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশন ছেড়ে মিডফিল্ডে ড্রপ করছিলেন। এই ধরনের ক্লিনিক্যাল মুভমেন্ট এবং পজিশনিং সেন্স ফলস নাইন রোলে খেলা ফুটবলারের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এবং মেসি সবচেয়ে দুর্দান্তভাবে তার ভূমিকা পালন করছিলেন। মেসি মিডফিল্ডে ড্রপ করে ওভারলোড ক্রিয়েট করছিলেন, তাকে মার্ক করা সেন্টারব্যাককে নিজের দিকে ড্রাগ করে আউট অব পজিশনে নিয়ে এসে অপোজিশন ডিফেন্স লাইনে হোল ক্রিয়েট করছিলেন। এক্ষেত্রে অপোজিশন সেন্টারব্যাক তাকে মার্ক না করলে মেসি ফ্রি স্পেসে ড্রিবল করে অ্যাটাকিং থার্ডে স্পিডি মুভমেন্ট করে অ্যাটেম্পট নেওয়ার সুযোগ পেতেন অথবা টিমমেটদের ডিফেন্স ব্রেকিং পাস দিয়ে গোলস্কোরিং চান্স ক্রিয়েট করতে পারতেন।
মাদ্রিদের সাথে ম্যাচের উপর ভিত্তি করে ফলস নাইন রোলে মেসির পারফরম্যান্সকে কিছু স্পেসিফিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ভাগ করা যায়:
-
বার্সেলোনার পজিশনাল সিস্টেম অনুযায়ী পজিশন আন্ডারস্ট্যান্ডিং।
-
ইতোর সাথে কুইক পজিশন ইন্টারচেঞ্জ করা।
-
সবসময় ফরোয়ার্ড পাসের মাধ্যমে বল প্রোগ্রেশনের চেষ্টা করা।
-
সবচেয়ে কম পরিমাণ মুভমেন্টের মাধ্যমে স্পেস ক্রিয়েট করার চেষ্টা করা।
-
অপোজিশনের ডিফেন্স এবং মিডফিল্ড লাইনের মধ্যে এসে বল রিসিভ করা।
-
ডিপে ড্রপ করে মিডফিল্ডে ওভারলোড ক্রিয়েট করা।
-
ডিপে ড্রপ করে নিজেকে আনমার্ক করা এবং কোনরকম বাঁধা ছাড়াই বল রিসিভ করা।
-
ডিপে ড্রপ করে টিমমেটদের জন্য ফ্রি স্পেস ক্রিয়েট করা।
-
টিমমেটদের কন্টিনিউয়াস ডিফেন্স ব্রেকিং পাস দিয়ে গোলস্কোরিং চান্স ক্রিয়েট করা।
মেসির আরেকটা ক্রুশিয়াল রোল ছিল অফ দ্য বল পজিশনিং। অপোনেন্টের বিল্ডআপের সময় মেসি বল ক্যারিয়ারের দিকে কুইক রান নিয়ে বল ক্যারিয়ারকে ট্রিগার করতেন। এসময় অঁরি এবং ইতো অপোনেন্ট ফুলব্যাকদের জোনাল মার্কিং করতেন। ফলে বল ক্যারিয়ার কিছুটা বাধ্য হয়েই লং বল খেলতো। বার্সার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার তোরে ছিলেন দারুণ বল উইনার, ফলে এরিয়াল বলে বার্সার পজেশন রিগেইন করার বেশ ভালো সম্ভাবনা তৈরি হতো। আবার অপোনেন্ট মিডফিল্ডে পজিশন হোল্ড করে রাখলে মেসি সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ডদের মতো লাইন হোল্ড না করে মিডফিল্ডে ড্রপ করে সরাসরি প্রেসিং করতেন, তখন জাভি ও ইনিয়েস্তা সরাসরি ম্যান মার্ক করতেন, এবং তোরে কভার ম্যানের মতো ম্যান মার্কিং ফ্রি রোলে স্পেস কভার দিতে চেষ্টা করতেন।
মেসির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল অপোজিশনের ডিফেন্স এবং মিডফিল্ড লাইনের মধ্যে এসে বল রিসিভ করা। এ সময় মেসি সর্বনিম্ন সংখ্যক মুভমেন্টের মাধ্যমে বলের লাইনে চলে আসতেন এবং নিজের জন্য হিউজ স্পেস ক্রিয়েট করতেন। এটা সম্ভব হতো কেবলমাত্র মেসির ব্রিলিয়ান্ট পজিশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং কুইক গেম রিডিং স্কিলের কারণে। যখনই তিনি ইন-বিটুইন দ্য লাইনে ড্রিফট করে বল রিসিভ করার সুযোগ পেতেন, এক কথায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করতেন।
রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ম্যাচটাই ছিল প্রথম ম্যাচ যেখানে মেসি ফলস নাইন রোলে খেলেছিলেন। মডার্ন ফুটবলের সাথে তখনই পরিচয় ঘটলো ফলস নাইন নামক জাদুকরী এক স্ট্র্যাটেজির, ফুটবলবিশ্ব দেখল ফলস নাইনে খেলে একজন মেসি কতটুকু ডমিনেটিং হতে পারে। ফলস নাইন যেমন একদিকে মেসিকে নিয়ে গেল সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে, তেমনি পেপ গার্দিওলাকে পৌঁছে দিল সর্বকালের সেরা ফুটবল ট্যাকটিশিয়ানদের কাতারে।