ইশ! আমার যদি অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা থাকতো!
জীবনে এমন দিবাস্বপ্ন দেখেননি কিংবা এ ধরনের ফ্যান্টাসিতে ভোগেননি, এমন কাউকে সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা থাকলে কী কী করতেন, তার অনেক লম্বা তালিকাও বোধহয় কেউ কেউ তৈরি করে রেখেছেন মনে মনে। মানব মনের অনেক অপূরণীয় বাসনার মতো এই আকাঙ্ক্ষাটিও এতটাই তীব্র যে, এর কথা বারবার গল্পের আকারে উঠে এসেছে সাহিত্যের পাতা থেকে শুরু করে সিনেমার পর্দায়।
বিভিন্ন গল্পে কোনো চরিত্রকে যাদুমন্ত্রের সাহায্যে অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, আবার কিছু চরিত্রকে অদৃশ্য করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এর নিদর্শন আমরা দেখতে পাই এইচ. জি. ওয়েলসের লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘অদৃশ্য মানব’, ‘হ্যারি পটার’ বা ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ এ। কিন্তু ফিকশনের জগত থেকে ফিরে এসে যদি বাস্তব জগতে পা রাখি, তাহলে আমরা কী দেখতে পাবো? সত্যিই কি এমন কোনো উপায় আছে, যার সাহায্যে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া সম্ভব? আর সম্ভব হলে সেটা কীভাবে? এরকমই কিছু প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজবো আজ।
কীভাবে অদৃশ্য হওয়া সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠলে স্বাভাবিকভাবেই সবাই মূলত দুই ধরনের উপায়ের কথা চিন্তা করে। এক ম্যাজিকের মাধ্যমে, আরেকটি হলো কিছু কৌশল ব্যবহার করে কিংবা প্রযুক্তির সহায়তায়। এখানে আমরা শুধু বাস্তবিক ও প্রযুক্তিগত দিকগুলোই দেখবো।
অদৃশ্য হওয়া সম্ভব কি না, তার উত্তর খুঁজতে যাওয়ার আগে একটি বিষয় সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার হয়ে নেওয়া দরকার। ‘অদৃশ্য হওয়া’ বলতে আমরা ঠিক কী বুঝি। ‘অদৃশ্য হওয়া’ বলতে কেউ যদি বুঝে থাকেন উধাও হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ কোনো কিছু অদৃশ্য হয়ে গেলে সেটাকে একদমই দেখা যাবে না, আবার ধরা বা ছোঁয়াও যাবে না। তাহলে সেই ধারণাটা বাস্তবসম্মত নয়। সেক্ষেত্রে উত্তর খুঁজতে যাওয়া বৃথা। এখানে অদৃশ্য হওয়া বলতে আমরা বুঝবো, ‘অন্যের দৃষ্টির আড়াল হওয়া বা দৃষ্টিকে ফাঁকি দেওয়া’।
আমরা যেভাবে দেখি
কীভাবে অদৃশ্য হওয়া সম্ভব, সেটা বুঝতে গেলে প্রথমে জানতে হবে, আমরা কোনো বস্তুকে কীভাবে দেখি কিংবা একটি বস্তু কীভাবে আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে? একটি বস্তুকে আমাদের চোখ ঠিক তখনই দেখতে পায়, যখন সেই বস্তু থেকে দৃশ্যমান আলো যেমন বেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল ইত্যাদি বর্ণের আলোকরশ্মি নির্গত হয়ে বা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে গিয়ে রেটিনায় আপতিত হয়।
এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, আলো সবসময় সরলরেখায় চলে; এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম (আমরা রিলেটিভিটিতে যাচ্ছি না)। তার মানে হলো, কোনো একটি বস্তুকে যদি আপনি দেখতে চান, তাহলে সেই বস্তু থেকে নির্গত আলো সোজা আপনার চোখে এসে পড়তে হবে। লক্ষ্যবস্তু এবং চোখের মাঝে যদি আরেকটি বস্তু থাকে, তাহলে সেই দ্বিতীয় বস্তুর জন্য প্রথম বস্তুকে দেখতে পারবেন না। উদাহরণস্বরূপ, টিভিতে খেলা দেখার সময় আপনার ঠিক সামনে এসে কেউ দাঁড়ালে তার বাধার কারণে টিভি সেট থেকে নির্গত আলো আপনার চোখে এসে পৌঁছাবে না। ফলে আপনি খেলার দৃশ্য দেখতে পারবেন না।
এখন একটু ভাবুন তো, যিনি আপনার সামনে এসে দাঁড়ালেন, তিনি যদি কাঁচের মতো স্বচ্ছ হতো, কিংবা টিভি থেকে নির্গত হওয়া আলোকরশ্মি যদি কোনোভাবে তার শরীরের পাশ দিয়ে বেঁকে এসে আপনার চোখে প্রবেশ করতো, তাহলে তো আপনি ঠিকই টিভি দেখতে পারতেন। একইসাথে তখন এক অদ্ভুত বিষয় ঘটতো, আপনার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে আপনি দেখতে পেতেন না। অর্থাৎ সেই ব্যক্তিকে আপনার কাছে অদৃশ্য মনে হতো!
খেয়াল করুন, ‘আমরা কীভাবে দেখতে পাই’-শুধুমাত্র এই ধারণার সাথে পরিচিত হওয়ার ফলে মনে হচ্ছে, ‘কীভাবে অদৃশ্য হওয়া যায়’ সেই ধারণার অনেকটা কাছাকাছি আমরা পৌঁছে গেছি, তাই না? এখন আমরা আরেকটু গভীরে যাবো, কয়েকটি উপায়ের সাথে পরিচিত হবো, যেসব উপায় অবলম্বন করে বর্তমানে বা অদূর ভবিষ্যতে অন্যের দৃষ্টিকে ফাঁকি দেওয়া যাবে কিংবা কারও দৃষ্টিতে সহজে ধরা পড়তে হবে না। অর্থাৎ অদৃশ্য হওয়া যাবে!
কেমোফ্ল্যাজ
নিজেকে লুকানোর জন্য বা অন্যের দৃষ্টিকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ক্যামোফ্ল্যাজ বা ছদ্মবেশ ধারণের পদ্ধতির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। বনে-বাঁদাড়ে, ঝোপে-ঝাড়ে, গাছে, মরুতে কিংবা পানিতে বসবাস করা এমন অসংখ্য প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়, যারা প্রাকৃতিকভাবেই ছদ্মবেশ ধারণ করার ক্ষমতা পেয়ে থাকে। এদের মধ্যে গিরগিটি, অক্টোপাস, স্কুইড, পেঁচা, কিছু সংখ্যক সাপ, প্রজাপতি, কয়েক প্রজাতির বিছা সদৃশ পতঙ্গ ইত্যাদি আমাদের বেশ পরিচিত। এগুলোর বাইরেও এমন আরও প্রচুর সংখ্যক প্রাণী রয়েছে, যাদের তালিকা অনেক লম্বা।
এরা ছদ্মবেশ ধারণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিজেদের গায়ের রঙই ব্যবহার করে না, বরং পরিস্থিতি ও পরিবেশের সাথে নিজেদের আকৃতি ও দৈহিক গঠনকে মানিয়ে নিয়ে শিকারিকে ফাঁকি দেয়, কিংবা নিজেই শিকারকে সাবধান হওয়ার সুযোগ না দিয়ে শিকারের খুব কাছাকাছি গিয়ে উপস্থিত হয়। ছদ্মবেশ ধারণ করা অবস্থায় আশেপাশের পরিবেশের সাথে তাদের গঠন বা রঙ কিংবা দুটোই অনেকখানি মিলে যাওয়ায় তাদেরকে পরিবেশ থেকে সহজে আলাদা করা যায় না। ফলে এদেরকে আমাদের দৃষ্টি সাপেক্ষে অনেকটা অদৃশ্যই বলা চলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালোমতো খেয়াল না করলে, তাদেরকে একদমই দেখা যায় না!
প্রাকৃতিক ছদ্মবেশের বাইরে আমরা মানুষেরাও কৃত্রিম ছদ্মবেশ ব্যবহার করে থাকি। এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় সামরিক বাহিনীর পোশাক-পরিচ্ছদে। সামরিক বাহিনীর একেকটা ইউনিটকে তাদের কাজ এবং কাজের পরিবেশের কথা বিবেচনা করে একেক ধরনের ক্যামোফ্ল্যাজযুক্ত পোশাক সরবরাহ করা হয়। যেমন মরুভূমিতে যেসব ইউনিট নিয়োজিত থাকে, তাদের পোশাকে থাকে বাদামী রঙের আধিক্য। আবার যেসব ইউনিট পাথুরে পরিবেশে অপারেশন চালায়, তাদের পোশাক অনেকটা ধূসর রঙের হয়ে থাকে। একইভাবে, বনে জঙ্গলে বা স্বাভাবিক পরিবেশে কাজ করা সেনাসদস্যদের পোশাকে সবুজ বা জলপাই রঙের আধিপত্য দেখা যায়। এর মধ্যে থাকে অন্যান্য রঙের ছোপ।
উদ্দেশ্য একটাই। শত্রুর চোখে সহজে ধরা না পড়া বা শত্রুর চোখকে ফাঁকি দেওয়া। আবার সামরিক বাহিনীর শুধুমাত্র সদস্যরাই যে ছদ্মবেশ ব্যবহার করে থাকেন তা নয়, প্রায়ই প্রয়োজনানুসারে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম যেমন ট্যাংক, আর্টলারি, স্নাইপার রাইফেল থেকে শুরু করে অস্ত্রাগার, সদস্যদের বসবাস করার ব্যারাক বা অস্থায়ী তাঁবুকেও ক্যামোফ্ল্যাজ বা ছদ্মবেশ ধারণের উপযুক্ত রং দেয়া হয়। বলা বাহুল্য, এতে শত্রুপক্ষের চোখে কিছু সময়ের জন্য হলেও অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারে এই সরঞ্জামগুলো বা স্থাপনাগুলো।
আবার, বিভিন্ন দেশের রাস্তাঘাটে বা বিশেষ কিছু স্থানে অনেকেই পথচারীদের সাথে মজা নেওয়ার জন্যও এরকম ছদ্মবেশ ব্যবহার করে থাকেন। প্রথম দেখায় হয়তো তাদেরকে খুঁজেই পাওয়া যায় না কিংবা একটা স্থির মূর্তি বলে মনে হয়, কিন্তু হঠাৎ দেখা গেলো তারা হাঁটা শুরু করে সবাইকে হতবাক করে দিলেন…! এটাও সম্ভব হয় তাদের নিঁখুত ছদ্মবেশের কল্যাণে।
বিপরীতমুখী প্রতিফলন
এবার আমরা একটু প্রযুক্তির ভেতরে প্রবেশ করি।
ফুটবল বা ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলার সময় বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় স্ক্রিনে আলো ফেলে খেলা দেখানো হয়। খেলা হচ্ছে ইউরোপে, আর আমরা বাংলাদেশে বসে প্রজেক্টরের সাহায্যে তার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি বড় স্ক্রিনে। এবার মনে করুন, আপনি যে পর্দায় খেলা দেখছেন, সেই পর্দার পেছনেই রয়েছে একটি রেললাইন, রেললাইন ধরে কিছুক্ষণ পরপরই ট্রেন যাওয়া-আসা করে। এখন কেউ যদি পর্দার পেছনে বসে একটি ট্রেন যাওয়ার দৃশ্য ভিডিও করে এবং সেই ভিডিওটার রিয়েল-টাইম এবং লাইভ দৃশ্য যদি প্রজেক্টরের সাহায্যে পর্দায় ফেলা হয়, তাহলে আপনি পর্দার ঠিক পেছনের দৃশ্যই পর্দার সামনে দেখতে পাবেন।
যদি পর্দায় ফেলা ভিডিওটির সাইজ এবং পজিশন এমনভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয় যে, আপনার অবস্থান থেকে ট্রেনটাকে যেমন দেখা যেতো, পর্দায়ও ঠিক তেমনই দেখা যাচ্ছে, তাহলে আপনার কাছে মনে হবে পর্দাটা সেখানে নেই, বরং আপনি সরাসরি ট্রেনটাকেই দেখতে পাচ্ছেন। অর্থাৎ, পর্দা এবং পর্দার পেছনে থাকা ক্যামেরাম্যান আপনার কাছে অদৃশ্য হয়ে গেলো! এবার, পর্দাটাকে আপনার গায়ের পোশাক হিসেবে পরিয়ে দিলে কেমন হবে?
ঠিক এই কাজটাই পরীক্ষামূলকভাবে করে দেখিয়েছেন জাপানি গবেষক ড. সুসুমু তাচি। এক্ষেত্রে ড. তাচি বিপরীতমুখী প্রতিফলনকারী পদার্থ (Retro-reflective materials) ব্যবহার করেছেন। আমরা রাতের বেলায় গাড়ির আলোয় রাস্তার পাশে নাইট-ডিউটিতে কর্মরত শ্রমিকদের গায়ে কিংবা ট্রাফিক পুলিশের গায়ে পরিহিত পোশাকে এক ধরনের স্টিকার বা বেল্টের মতো অংশ চকচক করতে দেখি। সেটাও রেট্রো রিফ্লেকটিভ পদার্থ দিয়ে তৈরি। এধরনের পদার্থ আলোকে একটি নির্দিষ্ট দিকে বেশ দক্ষতার সাথে প্রতিফলিত করতে পারে। নিচের ভিডিওটা দেখলে ড. তাচির পদ্ধতিটি পুরোপুরি বোধগম্য হবে।
তবে এর সীমাবদ্ধতা হলো, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই এই পদ্ধতি কাজ করবে। দর্শকের অবস্থান বদলে গেলে কিংবা ক্যামেরার সাপেক্ষে দৃশ্যের দূরত্ব খুব বেশী পরিবর্তন হলে এই পদ্ধতিটা কার্যকারিতা হারায়। তবুও পদ্ধতিটা চমৎকার ও সম্ভাবনাময়, তাই নয় কি?
ড. তাচি মনে করেন, এই প্রযুক্তিটি নিছক মজা করার জন্য নয়। বরং চিকিৎসাবিদ্যায় এটাকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন ডাক্তার কোনো সার্জারী করার সময় তার নিজের হাতের দ্বারা রোগীর কোনো একটি অঙ্গের কিছু অংশ ঢাকা পড়ে যেতে পারে। ফলে ডাক্তার নিজের হাতের জন্যই রোগীর সেই অঙ্গটি ভালো করে দেখতে পান না। সূক্ষ্ম কোনো অপারেশনের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ড. তাচির পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা গেলে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে সার্জন তার হাতের গ্লাভসের উপরেই দেখতে পাবেন, সেই হাতের অপর পাশে কী আছে। এছাড়াও গাড়িতে থাকা একজন চালক গাড়ির আশেপাশের কিছু অংশ দেখতে পান না। চালকের এমন ‘ব্লাইন্ড স্পট’ও এই প্রযুক্তির সাহায্যে দূর করা যেতে পারে।
রেট্রো রিফ্লেকটিভ প্যানেল ব্যবহার করে অদৃশ্য হওয়ার খুব সুন্দর ও অনেকটাই বাস্তবসম্মত একটি দৃশ্য দেখানো হয়েছে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের দ্য অ্যাভেঞ্জারস মুভিতে। সেখানে আমরা যে দানবাকার হেলিক্যারিয়ার দেখতে পাই, সেটিও ড. তাচির ব্যবহৃত পদ্ধতির মতো একই পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজেকে অদৃশ্য করে ফেলে। তবে সেটা করা হয় অনেকগুলো প্রজেক্টরের মাধ্যমে এবং আরও জটিলভাবে।
ফলস ইমেজ প্রজেকশন
যখন মোবাইলের পেছনের ক্যামেরা দিয়ে কোনো দৃশ্য ভিডিও করা হয়, তখন একইসময়ে ক্যামেরা মোবাইলের পিছনের দিকের দৃশ্য ধারণ করতে থাকে এবং সেটা মোবাইলের সামনের ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হতে থাকে। যদি কোনোভাবে মোবাইলের ক্যামেরাটা কোনো রুমের দরজার ভেতরের দিকে ও ডিসপ্লেটা দরজার ঠিক অপরপাশে বাইরের দিকে সেট করা যায় এবং এই অবস্থায় ক্যামেরা-ডিসপ্লে দুইটাই চালু রাখা যায়, তাহলে দরজা বন্ধ থাকলেও বাইরে থেকে দেখা যাবে রুমের ভেতর কী হচ্ছে। তখন মনে হবে দরজা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও দরজার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। ডিসপ্লেটা একদম পাতলা ও বর্ডারলেস হলে এবং ক্যামেরা ভালো মানের হলে, দরজার সেই অংশটা একদমই নেই মনে হবে। অর্থাৎ মনে হবে দরজার সে অংশটা দেখা যাচ্ছে না, বরং সে অংশের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে।
এখন এমন একটি পোশাকের কথা চিন্তা করুন, যেটার পুরোটা জুড়ে অনেক উচ্চ প্রযুক্তির অসংখ্য ছোট ছোট ক্যামেরা এবং একই সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, মাত্র কয়েক পিক্সেলের বহুসংখ্যক ডিসপ্লে লাগানো আছে। সেই পোশাকের পেছন দিকের ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও পোশাকের সামনের ক্ষুদ্র ডিসপ্লেগুলোতে দেখানো হলে আপনি সামনে থেকে পোশাকের উপর পোশাকের পেছনের দৃশ্য দেখতে পাবেন। কাজটা খুব ভালোভাবে করতে পারলে মনে হবে, আপনি পোশাকটার মধ্য দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন। অর্থাৎ পোশাকটা যেখানে আছে, সেখানে কিছুই নেই বলে মনে হবে।
একই কথা, সেই পোশাক পরিহিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেহেতু সে পোশাকের ভেতরেই আছে, সুতরাং তাকেও দেখা যাবে না। অর্থাৎ একটু আগে যে মোবাইলের ক্যামেরা এবং ডিসপ্লের কথা বলা হলো, সেরকম কাজই হচ্ছে এখানে। পোশাকের পেছনে, ডানে-বায়ে, সবদিক থেকেই একই কথা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ এটিও একটি সম্ভাব্য পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে কোনও কিছুকে অদৃশ্য করে ফেলা যেতে পারে।
হলিউডের বিখ্যাত নায়ক টম ক্রুজ অভিনীত মিশন ইমপসিবল: ঘোস্ট প্রটোকল মুভিতে এমনই একটি বিষয় দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। এতে একজন গার্ডের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ইথেন হান্ট এবং বেনজিকে ক্রেমলিনকে একটি সুরক্ষিত ও গোপন কক্ষে ঢুকতে দেখা যায়। তারা একটি বড় এবং উচ্চ প্রযুক্তির ডিসপ্লেকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে পেছনের দৃশ্যকে সে ডিসপ্লেতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আর নিজেরা গার্ডের চোখে অদৃশ্য রয়ে গিয়েছিলেন। তবে মুভিতে এটাও দেখা যায় যে, এই কাজটা করতে গেলে দর্শকের দৃষ্টিকেও মনিটরিং করতে হয়।
ফলে একজন দর্শকের চোখে অদৃশ্য হওয়ার কাজটা যতটা সহজে করা যায়, দর্শকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে কাজটা মোটেও ততটা সহজ থাকে না। কারণ একেকজন দর্শক টার্গেটের (যে ব্যক্তি বা বস্তুকে অদৃশ্য করতে হবে) পেছনে থাকা একেকটা বস্তুকে একেক কোণ থেকে এবং একেক দূরত্ব থেকে দেখবে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন ক্যামেরাকে সে অনুসারে পেছনের দৃশ্য ধারণ করতে হবে এবং ডিসপ্লের ভিন্ন ভিন্ন অংশকেও সে অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন কোণে ভিন্ন ভিন্ন ছবি ফুটিয়ে তুলতে হবে। ক্যামেরা ও ডিসপ্লের এই সমন্বয় করার এলগরিদমটা এতটাই জটিল ও কঠিন হবে যে, এই কাজটার জন্য মোটামুটি শক্তিশালী একটা সুপার কম্পিউটারই ব্যবহার করতে হবে!
অদৃশ্য হওয়ার জন্য এমন একটি পোশাক তৈরি করতে গেলে এবং তার আনুষঙ্গিক সিস্টেম দাঁড় করাতে গেলে কী কী করতে হবে এবং কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণাই করে ফেলেছেন ফ্র্যাংকো জ্যাম্বোনেলি এবং মার্কো মামেই নামক দুই গবেষক। তাদের গবেষণাপত্রে দেখা গেছে এমন একটি পূর্ণাঙ্গ সিস্টেম তৈরি করতে প্রয়োজন কমপক্ষে ৫,০০,০০০ ইউরো!
বাস্তবে খরচটা এরচেয়ে অনেক বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এখানে বলে রাখা ভালো যে, তারা এই সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গিয়ে যেসব উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রাংশের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন, তার সবগুলোই বর্তমান বাজারে সহজপ্রাপ্য নয়। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষে একসময় সেগুলো যে সহজলভ্য হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।
এরকম একটি ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতো একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিডিএস আর্কিটেক্ট (GDS Architects Inc.) । তারা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের নিকটবর্তী ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে টাওয়ার ইনফিনিটি (Tower Infinity) নামক এক স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যেটাকে প্রযুক্তির সাহায্যে দৃষ্টির আড়াল করে রাখা যাবে!
নকশা অনুসারে, টাওয়ারটির বাইরের দেয়ালজুড়ে বিভিন্ন কোণে থাকবে অসংখ্য উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরা এবং LED ডিসপ্লে। একপাশের ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য অপর পাশের LED ডিসপ্লেতে দেখানো হবে। বাইরে থেকে একজন দর্শক যখন এই টাওয়ারের দিকে তাকাবেন, তখন তিনি টাওয়ারটির পেছনের দৃশ্য দেখতে পাবেন। ফলে এটিকে অনেকটাই অদৃশ্য বলে মনে হবে।
রচেস্টার ক্লোক
সম্প্রতি রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক খুব অল্প খরচে এবং খুব কার্যকরভাবে অদৃশ্য হওয়ার এক সম্ভাবনাময় উপায় আবিষ্কার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তাদের এই কাজটাই কোনো কিছুকে অদৃশ্য করার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী, প্রয়োগসাধ্য ও বাস্তবসম্মত উপায়। তাদের কাজের ফর্মুলাটি খুবই সাধারণ। তারা দেখিয়েছেন, একটি বস্তু থেকে নির্গত বা প্রতিফলিত আলোকরশ্মিগুচ্ছকে দর্শকের চোখে সরাসরি পৌঁছানোর পূর্বে উপর্যুপরি কয়েকটি উত্তল লেন্সের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে দেওয়া হলে আলোকরশ্মিগুলোর গতিপথ কয়েকটা জায়গায় খুবই সংকীর্ণ হয়ে আসে। সেই সংকীর্ণ পথের আশেপাশের কিছু নির্দিষ্ট জায়গা জুড়ে দর্শকের দৃষ্টির সাপেক্ষে অদৃশ্য স্থান তৈরি হয়। সেসব স্থানে কোনো বস্তু রাখা হলে দর্শকের চোখে তা ধরা পড়বে না।
এ প্রক্রিয়াটি এতই সহজসাধ্য ও সহজবোধ্য যে, কারো কাছে মোটামুটি শক্তিশালী কয়েকটি উত্তল লেন্স থাকলে এবং লেন্স ও প্রতিসরণ-সংক্রান্ত কিছু মূল ধারণা থাকলে, ঘরে বসেই সামান্য হিসাব-নিকাশ দ্বারা এটি পরীক্ষা করা সম্ভব।
তবে এর সীমাবদ্ধতা হলো, লেন্সের ঠিক পেছনে মাঝ (লেন্সের প্রধান অক্ষ) বরাবর রাখা কোনো কিছুকে অদৃশ্য করা যাবে না। তবে প্রধান অক্ষকে ঘিরে চারপাশের একটা নির্দিষ্ট স্থানজুড়ে অদৃশ্য স্থান তৈরি হবে। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায় প্রধান অক্ষের উপর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর আশেপাশের যে স্থানটুকুকে অদৃশ্য করা যাবে, ত্রিমাত্রিকভাবে সেই স্থানটুকুর আকৃতি হবে অনেকটা ডোনাটের মতো।
মেটাম্যাটেরিয়াল
মেটা উপাদানগুলো একটু আজব ধরনের। প্রকৃতিতে যেসব উপাদান পাওয়া যায়, তাদের কিছু নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য থাকে। এরা বিভিন্ন অবস্থায় একেক প্রকার শক্তির প্রভাবে একেক ধরনের আচরণ করে থাকে। যেমন কোনো অস্বচ্ছ মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণ ঘটবে না, এটি সেই অস্বচ্ছ বস্তু বা মাধ্যমের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। আবার সাধারণ তাপমাত্রায় তামার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হবে, এটিও একটি স্বাভাবিক ঘটনা বা তামার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষকরা গবেষণাগারে এমন কিছু পদার্থ তৈরি করেন, যেগুলো আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। যেসব বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিকভাবে সাধারণত কোনো বস্তু বা পদার্থে পাওয়া যায় না। কিন্তু এতে বিজ্ঞানের কোনো সূত্রের লঙ্ঘন হয় না। কেননা, গবেষকরা এসব উপাদান তৈরি করার জন্য প্রাকৃতিক উপাদানই ব্যবহার করেন। সেসব উপাদানের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেই কাজে লাগান। গবেষণাগারে তৈরি এরূপ কৃত্রিম উপাদানকেই মেটা-উপাদান (Metamaterials) বলা হয়। মেটা-উপাদান তৈরি করার সময় গবেষকরা এর মূল উপাদানগুলোকে এমনভাবে সমন্বিত করেন এবং তাদের গাঠনিক সজ্জাকে এমনভাবে নির্ধারণ করেন যেন, সেসব উপাদানে বিদ্যমান প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেই ব্যবহার করে নতুন কোনো বৈশিষ্ট্য লাভ করা যায়।
এর একটি চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে, অপটিকাল (Optical/Photonic Metamaterials) বা আলোকীয় মেটা-উপাদান। আমরা জানি, প্রকৃতিতে বিদ্যমান পদার্থগুলোর সাথে আলোর মিথস্ক্রিয়ার ফলে কয়েকটি প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ঘটনা ঘটে যেমন প্রতিফলন, প্রতিসরণ, বিচ্ছুরণ, আলোর শোষণ, বিক্ষেপণ ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা অদৃশ্য হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখলেন, শুধুমাত্র সাধারণ প্রতিসরণ বা প্রতিফলন ব্যবহার করে কাজটা করা অনেক কঠিন এবং ঝামেলাপূর্ণ। তাই তারা একটু ভিন্ন পথে হাঁটার চিন্তা করলেন।
একটি স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে আরেকটি ভিন্ন স্বচ্ছ মাধ্যমে আলো প্রবেশ করলে প্রতিসরণের ফলে আলোর দিক পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন কতটুকু হবে, তা জানা যায় মাধ্যম দুটোর প্রতিসরণাঙ্ক থেকে। প্রতিসরণাঙ্কের মান প্রাকৃতিকভাবে সর্বদাই ধনাত্মক হয়। কিন্তু গবেষকেরা এমন এক ধরনের আলোকীয় মেটা-উপাদান বানানোর চেষ্টা করছেন, যার প্রতিসরণাঙ্ক হবে ঋণাত্মক!
যদি এমন মেটা উপাদান তৈরি করা যায়, তাহলে বিজ্ঞানীরা উপযুক্ত হিসাব নিকাশের মাধ্যমে খুব সহজেই আলোর গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ক্ষেত্রবিশেষে আলোকরশ্মিকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পাশ দিয়ে বাঁকিয়ে দর্শকের চোখে পৌঁছে দিতে পারবেন। ফলে সেই ব্যক্তি বা বস্তুটিকে আর দেখা যাবে না। এভাবে মেটা উপাদান দিয়ে বিশেষ নকশার মাধ্যমে পোশাক তৈরি করা গেলে, সেই পোশাক পরিহিত মানুষটি সহজেই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারবেন।
ইতোমধ্যে, ২০০৬ সালে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন আলোকীয় মেটা উপাদান তৈরি করেছেন, যেটা শুধুমাত্র মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের (আলোক তরঙ্গের মতোই, তবে অদৃশ্য তরঙ্গ) উপর কাজ করে। এই মেটা উপাদান দিয়ে একটি ক্ষুদ্র বস্তুকে মুড়িয়ে সেটাকে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের প্রতি অদৃশ্য করে দেখিয়েছেন তারা।
তবে দৃশ্যমান আলোকে প্রভাবিত করতে সক্ষম, এমন মেটা উপাদান তৈরি হতে আমাদেরকে আরও বহুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কেননা এই ধরনের গবেষণা এখনো পর্যন্ত একদম প্রাথমিক পর্যায়েই আছে। অদূর ভবিষ্যতের কোনো একদিন এই গবেষণা সাফল্যের মুখ দেখলে হয়তো বাস্তবে অদৃশ্য পোশাকের নমুনা দেখা যাবে। কিংবা হয়তো কখনোই দেখা যাবে না; কারণ পোশাকটা তো হবেই ‘অদৃশ্য’!
শেষকথা
অদৃশ্য হওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ না থাকলেও, এই বিষয়টাতে সম্ভবত সমরবিদদের আগ্রহই সবচেয়ে বেশি। মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনী ইতোমধ্যেই এমন প্রযুক্তি হাতে পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যেটা তাদের বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে অদৃশ্য হয়ে যেতে কিংবা শত্রুর চোখে কম দৃশ্যমান থাকতে সাহায্য করবে। খুব সম্ভবত যুদ্ধের প্রয়োজনেই কোনো একদিন এই প্রযুক্তি আলোর মুখ দেখবে; মানবজাতির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনে। পরবর্তীতে সেই প্রযুক্তি মানুষের জন্য ব্যবহারোপযোগী করা হয়েছে।
হাইপারস্টেলথ নামক কানাডিয়ান এক কোম্পানি দাবি করছে যে, তারা ইতোমধ্যে অদৃশ্য হওয়ার প্রযুক্তি বা Cloaking Technology আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু এরকম আজগুবি দাবির স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ এবং সেই প্রযুক্তির তত্ত্ব সম্পর্কে কোনোরূপ ধারণা দিতে না পারায় সাইবার জগতে তাদের এই দাবি নিয়ে কেবল হাসি-তামাশাই চলছে।
প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা খুবই অননুমেয় একটি ব্যাপার। আগামী ১০ বছর পর কী আসবে সেটা আজ আপনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবেন না। আজকের দিনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অদৃশ্য হওয়াটা অনেকটা অসম্ভব বা অবান্তর ভাবনা মনে হলেও, অদূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তির বিকাশ আমাদের কল্পনাকেও হার মানাতে পারে। আজ থেকে ৫০ বছর আগেও হয়তো মানুষ ভাবেনি যে, একসময় সবার হাতে হাতে স্মার্টফোনের মতো এমন যন্ত্র থাকবে, যেটা দিয়ে এক জায়গায় বসেই এত এত কাজ করে ফেলা যাবে!