‘হেরেডিটারি‘কে এ বছরের সেরা হরর মুভি নয়, সেরা মুভিগুলোর একটি হিসেবেও বিবেচনা করছেন অনেকে। সমালোচকদের চোখে দারুণ প্রশংসিত মুভিটি রোটেন টমাটোসে পেয়ে গেছে ৮৯% ফ্রেশ রেটিং। মুভির একদম শেষের দিকে পিশাচ পেইমনের নাম উচ্চারিত হলেও পুরো কাহিনী কিন্তু এই পিশাচকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। মুভিটি দেখার পরে বেশিরভাগ দর্শকের মাথায় যে প্রশ্নটা এসেছে, তা হলো, “কে এই পেইমন?“
পরিচালক অ্যারি অ্যাস্টার বলেছেন,
লুসিফারকে নিয়ে বহু কাহিনী বানানো হয়েছে, তাই আমি আর ওপথে হাঁটতে চাইনি।
তাই বলে পেইমন কিন্তু অ্যাস্টারের কল্পনাপ্রসূত কোনো চরিত্র নয়।
কে এই পেইমন?
১৬৪১ সালে প্রকাশিত ডেমোনোলজির নিষিদ্ধ বই ‘দ্য লেসার কি অফ সলোমন’ এ পেইমনের কথা বিস্তারিতভাবে বলা আছে। এছাড়া ‘ডিকশনারি ইনফার্নাল’, ‘দ্য বুক অফ ওবেরন’ এ ও পেইমনের কথা বলা আছে।
লুসিফারের সবচেয়ে অনুগত শিষ্যদের একজন হলো পেইমন। নরকের আটজন মহান সম্রাটের একজন সে। ড্রমেডারি নামক বিশেষ উটের পিঠে চড়ে চলাফেরা করা পেইমনকে অনুসরণ করে উচ্চশব্দে বাদ্যযন্ত্র বাজানো পিশাচ অনুসারীরা। তার প্রধান ভৃত্যেরা হলো আলফ্যাসিস, বাসান, বেলফার্থ, বিলিয়াল, রমব্যালেন্স, স্পিরিয়ন। পেইমনের দু’শো সৈন্যের মধ্যে দেবদূতেরাও আছে।
তার চেহারা কমনীয়, গলার স্বর ভারী ও কর্কশ, কথা দুর্বোধ্য। কাউকে সম্মোহন না করা পর্যন্ত তার পক্ষে পেইমনের কথা বোঝা অসম্ভব। তাকে বিজ্ঞান এবং শিল্প বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ধরা হয়। সাধনা করে ডেকে আনার জন্য পেইমনের উদ্দেশ্যে বড় কিছু উৎসর্গ করতে হয়। বিনিময়ে পেইমন তার উপসনাকারীদের উপহার দেয় প্রাচুর্য, উন্মোচন করে দেয় তার অগাধ জ্ঞানের ভাণ্ডার।
পেইমন সাংঘাতিক কিছু ক্ষমতার অধিকারী। পূর্ণ শক্তির পেইমনের ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে- অতীত এবং ভবিষ্যতের সকল ঘটনা বলতে পারা, মৃত মানুষকে কিছু সময়ের জন্য জীবিত করে দেয়া, সন্দেহ দূর করা, হাওয়ায় ভেসে থাকা, কাল্পনিক বস্তু বা মানুষকে উপস্থাপন করে মানুষকে ধোঁকা দেয়া ইত্যাদি।
প্লট
‘হেরেডিটারি’র কাহিনী শুরু হয় অ্যানি গ্রাহামের মায়ের মৃত্যু দিয়ে। নিজের মায়ের সাথে খুব একটা ঘনিষ্ঠ না থাকলেও অ্যানির খাপছাড়া লাগতে থাকে সবকিছু। তাই নিজেকে অন্যমনস্ক করে রাখে মিনিয়েচার আর্ট বানানোর কাজে। সাইকিয়াট্রিস্ট স্বামী স্টিভ কিছুটা সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করে অ্যানিকে। তাদের দুই সন্তান- ছেলে পিটার আর মেয়ে চার্লি। নানীর মৃত্যুতে পিটার খুব একটা প্রতিক্রিয়া না দেখালেও গম্ভীর প্রকৃতির চার্লি আরো মনমরা হয়ে যায়। অ্যালেনের সাথে তারই বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল। মন ভালো করার জন্য অ্যানি তাকে জোর করে পিটারের সাথে স্কুলের এক পার্টিতে পাঠায়। সেখানে কেকের সাথে বাদাম খেয়ে অ্যালার্জিতে দম বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয় চার্লির। গভীর রাতে তাড়াহুড়া করে গাড়ি চালাতে চালাতে পিটার একটি পোলের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে ফেলে, আর দুর্ভাগ্যক্রমে সেই মুহূর্তেই শ্বাস নেবার জন্য গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করেছিল চার্লি। ফলে তার ধড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
অ্যানির আগে থেকেই স্লিপ ওয়াকিং এবং হ্যালুসিনেশন দেখার সমস্যা ছিল। চার্লির এরকম নারকীয় মৃত্যুতে তার মনের ওপর নিদারুণ চাপ পড়ে, সেই সাথে ভেঙে পড়ে পিটারও। একটি সাপোর্ট গ্রুপের সাথে কথা বলতে গিয়ে অ্যানি জানায়, সে জন্মের আগেই পিটারকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এমনকি বেশ কিছুদিন আগে একবার ঘুমের ঘোরে পিটার আর চার্লির গায়ে তেল ঢেলে আগুন লাগাবারও উপক্রম করেছিল। আর এখন চার্লির মৃত্যুর পরে তো মা-ছেলে দুজনের সম্পর্ক আরো জটিল হয়ে গেছে। এদিকে জোন নামে সাপোর্ট গ্রুপের একজন সদস্য তার নিজের ছেলে এবং নাতির মৃত্যুর কথা বলে অ্যানির সাথে খাতির জমায়। সে জানায়, মৃত ব্যক্তির আত্মা ডেকে আনার একটি বিশেষ পদ্ধতি আছে। নিজের নাতিকেও একপর্যায়ে ডেকে এনে দেখায় সে।
নিজের সংসারে শান্তি ফেরানোর জন্য অ্যানি তাই পিটার আর স্টিভকে এ বিষয়ে চেষ্টা করার জন্য রাজি করায়। সবাই মিলে চার্লির আত্মাকে ডেকে আনতে যায় এক রাতে, কিন্তু অশুভ কোনো কিছু চলে আসে তার বদলে। সেই জিনিস তাড়া করে ফিরতে থাকে পিটারের পেছনে। অ্যানি জানতে পারে, জোন তার মায়ের পূর্বপরিচিত। জোনের বাসায় গিয়েও তার দেখা পায় না সে। অ্যানি না দেখলেও দর্শককে দেখানো হয়, জোনের বাসায় অ্যানির পারিবারিক ফটো, বিশেষ করে পিটারের ছবিকে নিয়ে বিভিন্ন জাদুটোনা করা হয়েছে।
নিজের প্রতিবিম্ব, কিংবা আশেপাশে বিভিন্ন অদ্ভুত ঘটনা মিলে পিটারের জীবন বিষময় হয়ে ওঠে। চার্লির ছবি আঁকার বইকে মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো অতৃপ্ত আত্মা চলে এসেছে, এ কথা ভেবে অ্যানি সেই বইটি পোড়াতে যায়। কিন্তু তার নিজের হাতেই আগুন লেগে যায়। ফলে অ্যানি ভাবে, সে নিজেকে উৎসর্গ করে পিটার আর স্টিভের জীবন বাঁচাবে। ইতিমধ্যে তাদের চিলেকোঠায় অ্যালেনের পচে যাওয়া লাশ এবং তার ওপরে রক্ত দিয়ে আঁকা একটি বিশেষ চিহ্ন আবিষ্কার করে সে। স্টিভকে বইটি পোড়ানোর ব্যাপারে রাজি করাতে না পেরে অ্যানি নিজেই বইটি পুড়িয়ে দেয়, কিন্তু আগুন অ্যানির গায়ে না লেগে স্টিভের গায়েই লেগে যায়।
ঘুম থেকে উঠে পিটার নিজেদের ড্রয়িং রুমে বাবার দগ্ধ লাশ দেখতে পায়। সেই সাথে টের পায় নগ্ন কভেন সদস্যদের উপস্থিতি। অ্যানিকে ডাকতে গিয়ে পিটার বুঝতে পারে, অ্যানির ওপরে কোনো পৈশাচিক শক্তি ভর করেছে। তার হাত থেকে পিটার গিয়ে পালায় চিলেকোঠায়। অ্যানিও হাজির হয় সেখানে, নিজের গলা নিজেই কেটে ফেলে পিটারের সামনে। এই সবকিছু সহ্য করতে না পেরে পিটার জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এর পরে পিটারের শরীরে প্রবেশ করে নতুন কেউ, তার শরীর প্রবেশ করে চার্লির ট্রি হাউজে। সেখানে কভেনের সদস্যেরা তাকে মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে স্বাগত জানায়। জোন তার মাথায় মুকুট পরিয়ে দেয় জোন। পিটারকে ‘পেইমন’ নামে সম্বোধন করে জোন বলে, এখন আর পৃথিবীতে রাজত্ব করতে কোনো অসুবিধা হবে না তার।
বিশ্লেষণ
আপাতদৃষ্টিতে একটি সাদাসিধে সাইকোলজিক্যাল হরর বলে মনে হলেও ‘হেরেডিটারি’ যে আসলে ডেমন পজেশন কেন্দ্রিক মুভি, তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। তবে খেয়াল করলে পুরো মুভিতে অনেক সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় । এ কারণে একে ‘দ্য এক্সরসিস্ট’ কিংবা ‘রোজমেরি’স বেবি’র মতো ক্লাসিকগুলোর সাথেও তুলনা করছেন অনেকে।
মুভির শেষে দেখা যায়, চিলেকোঠায় অ্যালেনের ছবিকে ‘কুইন লেই’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আসলে অ্যালেন ছিল শয়তান উপাসনাকারী একটি কভেনের উচ্চপদস্থ সদস্য। সেই কভেনের উদ্দেশ্য ছিল, সাধনা করে পিশাচ পেইমনকে পৃথিবীতে ডেকে আনা এবং অগাধ ধন-সম্পদ এবং জ্ঞানের অধিকারী হওয়া। সেই উদ্দেশ্যেই অ্যালেন নিজের পরিবারকে উৎসর্গ করলো। অ্যানি, স্টিভ, পিটার, চার্লি, অ্যানির ভাই সবাইকেই সে খেলিয়েছে দাবার ঘুঁটির মতো। কভেনের বিস্তারিত নীলনকশাটি মূলত কার্যকর হওয়া শুরু হয় অ্যালেনের মৃত্যুর পরে থেকে।
অ্যালেনের পরিবারের যে কারো ওপরেই পেইমন ভর করতে পারতো। তবে পুরুষ দেহই পেইমনের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। এতেই ‘হেরেডিটারি’ নামকরণের কারণ পরিষ্কার হয়। অ্যানির ভাই আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছিল। মারা যাবার আগে তার মনে হয়েছিল, মা তার ভেতরে কোনো কিছু ঢোকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তাকে পাগলের প্রলাপ হিসেবেই উড়িয়ে দেয় সবাই। অ্যানির স্বামী স্টিভ যেহেতু অ্যালেনের বংশের কেউ না, তাই সে এ সকল ঝুঁকির বাইরে ছিল।
নিজের ছেলে মারা যাবার পরে অ্যানির সন্তানদেরকে এই কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করতে থাকে অ্যালেন। অ্যানি পিটারের জন্মের সময়ে অ্যালেনকে ধারে কাছে আসতে দেয়নি। কিছুটা অপরাধবোধের কারণেই চার্লিকে জন্ম থেকেই অ্যালেনের কাছে থাকতে দেয় সে। সেখানেই হয়েছে মহা ভুল। জন্ম থেকেই চার্লির ওপরে ভর করেছে পেইমন, সেজন্যই সে জন্মের সময় থেকে শুরু করে ছোটবেলায় কখনো কাঁদেনি। জিভ দিয়ে একট বিশেষ শব্দ করতো সে, যেটি মুভির শেষে পিটাররূপী পেইমনকেও করতে দেখা যায়। একই কারণে অ্যালেনের শেষকৃত্যের দিনে কভেনের সদস্যরা তাই চার্লির দিকে বিশেষভাবে তাকিয়ে ছিল। পাখির মাথা কেটে ফেলাটাও তার মৃত্যুর একটা পূর্বাভাস। তবে চার্লিরূপী পেইমনকে বড় কোনো অপরাধ করতে দেখা যায়নি।
কভেনের সদস্যরা পোলের গায়ে পেইমনের সিজিল তথা চিহ্ন এঁকে রেখেছিল, তাই চার্লির দুর্ঘটনাটা অতর্কিতে মনে হলেও আসলে পূর্বপরিকল্পিত। এটি আসলে পেইমনকে পুনরুজ্জীবিত করে একটি পুরুষ দেহে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার অংশ। পিটারের ওপরে তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। অ্যালেনের জাদুটোনার বইয়েও ছিল যে, মানসিকভাবে দুর্বল থাকলে পজেশন করা সহজ হয়।
চার্লি মারা যাবার পরে তার সাথে মিশে থাকা পেইমনের আত্মাও মুক্ত হয়ে পড়ে। প্রথমে অ্যানির কাছে মিডিয়ামের বিজ্ঞাপন পাঠানো হয়েছিল, তবে সে সেটাকে অগ্রাহ্য করে। পরে জোন নিজেই আগ বাড়িয়ে তাকে নিজের মৃত নাতিকে ডেকে আনার পন্থা শেখায়। চার্লিকে ডেকে আনার লোভ সামলাতে না পেরে অ্যানি সেই পন্থা অবলম্বন করতে যায় এবং পেইমনকে ডেকে আনে। পেইমন এবার দুঃখে ভারাক্রান্ত পিটারের পেছনে লাগে। আলোর মতো একটি জিনিসকে যাওয়া আসা করতে দেখে পিটার। এদিকে চার্লির নোটবুকে পিটারের বিভিন্ন ছবি ফুটে উঠতে দেখে অ্যানি পিটারের বিপদ টের পেয়ে জোনের কাছে যায়। তাছাড়া মায়ের সাথে জোনের ছবি এবং পেইমনের উপাসনার প্রমাণ খুঁজে পায়। দেখে তাদের দুজনের কাছে একই নেকলেস ছিল, সেই নেকলেসের চিহ্নটি মূলত মিথলজিতে পাওয়া পেইমনের সিজিল। চিলেকোঠার ছাতেও সিজিলটি রক্ত দিয়ে আঁকা ছিল।
এ ব্যাপারে পরিচালক বলেছেন,
অন্য মুভিতে পিশাচ বোঝাতে উলটে যাওয়া ক্রস কিংবা পেন্টাগ্রাম দেখানো হয়। আমি কিছুটা ভিন্ন মাত্রা আনার জন্য পেইমনের এই সিজিলটিকে ব্যবহার করেছি।
নোটবুকটা পুড়িয়ে দেবার সাথে স্টিভের গায়ে আগুন লাগার ব্যাপারটি অনেকের কাছেই অস্পষ্ট মনে হয়েছে। কাল্পনিক কোনো কিছুর মাধ্যমে ধোঁকা দেখানো পেইমনের ক্ষমতাগুলোর একটি। তাই সে অ্যানিকে বোকা বানিয়েছিল। আসলে বই পোড়ার সাথে অ্যানির মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যভাবেও স্টিভকে মারা যেত। কিন্তু অ্যানি সবসময় পিটার বা চার্লিকে পুড়িয়ে মারার দুঃস্বপ্ন দেখতো, তাই পেইমন কিছুটা প্রহসনের আকারেই তার দুঃস্বপ্নটাকে বাস্তব করে দিলো।
স্টিভের মৃত্যুর পরে অ্যানির চূড়ান্ত মানসিক বিপর্যয় ঘটে এবং পেইমন অস্থায়ীভাবে তার শরীরে ভর করে। কভেনের সদস্যদের মিশন প্রায় সফল, তারা ইতিমধ্যেই পিটারের বাসার ভেতরে ঢুকে পড়েছে। পিটার ঘুম ভেঙে তার মায়ের রূপে পেইমনের তাড়া খেয়ে চিলেকোঠায় যায়, সেখানে নিজের মাকে নিজের পিয়ানোর তার দিয়ে মাথা কেটে ফেলতে দেখে। পরিবারের সবার মৃত্যুতে পিটারের ধৈর্য্যের শেষ বাঁধটিও ভেঙে যায়। সে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। দেখা যায়, তার শরীরের ওপর থেকে একটি ছায়া সরে যাচ্ছে। পিটারের আত্মা বেরিয়ে যাবার পরে তার শরীরে পেইমনের আত্মা প্রবেশ করে, ফলে কভেনের সদস্যদের উদ্দেশ্য সফল হয়।
আরো কিছু প্রশ্ন
১. অ্যানি কি তার মায়ের এসব ভয়ানক কীর্তিকলাপ টের পায়নি?
মায়ের সাথে সম্পর্ক ভালো ছিল না তার। কিন্তু তাই বলে শয়তানের উপাসনা করার ব্যাপারটি হয়তো বা সে কল্পনাও করতে পারেনি। কিংবা এমনও হতে পারে যে, সে মনের গভীরে ঠিকই জানত, কিন্তু সেসবকে নিজের উদ্ভট কল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। অবচেতন মনে পেইমনকে ডেকে আনা থেকে বিরত থাকার জন্যই হয়তো সে পিটারকে পৃথিবীতে আনতে যায়নি, তার ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি মাকে। এমনকি স্লিপ ওয়াকিং করে পিটারকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করার সময়েও অ্যানিকে বলতে দেখা যায়, “আমি তোমাকে মারছি না, বাঁচানোর চেষ্টা করছি।”
পেইমন খুব সম্ভবত আগেও অ্যানির ওপরে ভর করেছিল। তার মানসিক সমস্যাগুলোর পেছনে এটি একটি বড় কারণ হতে পারে। হয়তো এ কারণেই সাইক্রিয়াটিস্ট স্টিভের সাথে তার পরিচয়ের সূত্রপাত হয়েছে।
২. দেয়ালের গায়ে লেখাগুলোর অর্থ কী?
গ্রাহামদের বাড়িতে দেয়ালের গায়ে ‘satony,’ ‘liftoach pandemonium’ , ‘zazas’ লেখাগুলো দেখা যায়। এগুলো মূলত অ্যালেনেরই কুকীর্তি। ‘স্যাটোনি’ মূলত নেক্রোম্যান্সির তথা মৃতদেহ দিয়ে কালোজাদু করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি শব্দ। ‘জাজাস’ হলো প্ল্যানচেটের মাধ্যমে ডেকে আনা একটি পিশাচের নাম। ‘প্যারাডাইজ লস্ট’ বইয়ে ‘প্যান্ডেমোনিয়াম’ বলতে নরকের রাজধানীকে বোঝানো হয়েছে। আর হিব্রু ভাষায় ‘লিফটোক’ শব্দের অর্থ হলো ‘খুলে দেয়া’। এই সবকিছু মিলিয়ে নরক থেকে পিশাচ ডেকে আনারই আভাস পাওয়া যায়।
৩. এই দুর্বিষহ জীবন এবং নারকীয় পরিণতি থেকে মুক্তি পাবার কোনো উপায় কি ছিল?
সত্যি বলতে, না। বয়োজ্যেষ্ঠ একজন সদস্য যদি নিজের পরিবারের ওপর এতো বড় অভিশাপ দিয়ে যায়, তাহলে তা এড়ানো অসম্ভব। এক্ষেত্রে ‘প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটি’ সিরিজের উদাহরণও দেয়া যেতে পারে। অ্যানির মিনিয়েচার আর্টের মতোই পুরো গ্রাহাম পরিবার ছিল কভেনের সদস্যদের হাতের পুতুল। নিজেদের জীবন কখনোই তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এরকম বংশে জন্ম নেওয়ার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না।
বিগত কয়েক বছরের ভিন্নধর্মী হররের ভিড়ে আরেকটি ব্যতিক্রমী সংযোজন এই হেরেডিটারি। এক দেখায় অনেক কিছু খটকা লাগলেও ভালো মতো চিন্তা করলে পুরো বিষয়টিই পরিষ্কার হয়ে যায়। হেরেডিটারির সফলতার ফলে এটুয়েন্টিফোর প্রোডাকশন হাউজ থেকে সামনে আরো চিন্তাশীল হরর মুভি আসতে যাচ্ছে।