সাইলেন্ট নাইট: ক্রিসমাস এবং আত্মহননের একটি রাত

গোটা বাড়িতে বেশ উৎসব উৎসব ভাব। বড়দিনের আয়োজন। ক্রিসমাস! এই একটা দিনে পরিবারের সকলের একসাথে মিলিত তো হতেই হবে। উপহার দেওয়া-নেওয়া হবে। মহাভোজ হবে। হাসি, আনন্দ সবই হবে। ‘ক্রিসমাস ফিল্ম’ নামে একটা সাবজনরা যে তৈরি হয়েছে, এ তারই নিখুঁত সেটিং। এই সেটিংয়ের মধ্য দিয়ে অনায়াসে কমেডি, হরর, মিস্ট্রি, জটিল ড্রামা যেকোনো কিছুই ঢুকে যাবে; তেমনটাই নিয়ম। ব্যত্যয় ঘটেনি ‘সাইলেন্ট নাইট’-এর ক্ষেত্রেও। সকল ভাইবোনেরা আসছে। কিন্তু একটা গম্ভীরতাও সরু গলি দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে। পরিবারের সকল বাচ্চাদের যখন বলা হয়, এইবারের ক্রিসমাসে তারা সানন্দে ‘কার্স ওয়ার্ড’ বলতে পারবে, মানে সোজাকথায় গালি দিতে পারবে, তখনই কোনো একপ্রান্তের তারে যে গোলযোগ রয়েছে সেটা অমোঘ রূপে বুঝতে পারা যায়।

ডিনার টেবিলের মহাভোজ যখন বিপরীত পালে হাওয়া দেয়, তখনই সিনেমাটি ঢুকে যায় ‘ডিনারপার্টি ফ্রম হেল’ সাব-জনরায়। স্বাদগন্ধযুক্ত সকল লোভনীয় খাবারের সামনে বসে, অতীতের বিস্বাদীয় তক্তপোশে হাতুড়ি পেটানোই এই সাবজনরার অলিখিত নিয়ম, আঙ্গিক, বা সেটিং— যাই বলা হোক। বুনুয়েলের ‘দ্য এক্সটার্মিনেটিং এঞ্জেল’, ‘দ্য ডিস্ক্রিট চার্ম অভ দ্য বুর্জোয়াসি’; হিচককের ‘রোপ’-এর মতো গ্রেট সিনেমাগুলো কিংবা ইদানীংকালের ‘দ্য ইনভাইটেশন’ (২০১৫), ‘পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স’ (২০১৬), ‘দ্য পার্টি’ (২০১৭), ‘বেট্রিজ এট ডিনার’ (২০১৭)-এর মতো সিনেমাগুলো ওই সেটিং বা সাব জনরাকেই ব্যবহার করেছে। তা যাক। খুচরো পেটিসে কামড় দিয়ে বার্গারের গপ্পো কিংবা তাদের বিভিন্ন ধরনের নামের স্তুতি গাওয়া চলে না। রহিত হোক।

‘সাইলেন্ট নাইট’-এর আপাতদৃষ্টিতে সরব আয়োজন নীল আর সায়মন দম্পতির ঘরে। তাদের ৩ ছেলে। একজনের নাম আর্ট। বাকি ২ জন যমজ। বুদ্ধিশুদ্ধিতে আর্ট’ই বেশ পরিণত, বয়স অনুযায়ী। এই বয়সের স্বাভাবিক জেদের পাশাপাশি যুক্তিটাও কিন্তু তার খাতায়। ঘটনার অস্বাভাবিকতা তাই সর্বপ্রথম তার কথার মধ্য দিয়েই দর্শকের কাছে উন্মোচিত হয়। তা সেই অস্বাভাবিকতা কোথায়? সবাই তো এসেছে উৎসবে। নীলের এক বোন সাথে এসেছে তার পার্টনারকে। সমকামী সে। বাকিদের মেকি আনন্দহুল্লোড় থেকে সে নিজেকে একটু দূরেই রাখে। এসবের কারণ অবশ্য তার গায়ের বর্ণতে। তার কালো বর্ণই যে তাকে অনাহূত করে রেখেছে, একটা দৃশ্যেই সেটা টের পাওয়া যায়। তখন সবাই একসাথে গলা মেলাচ্ছিল। তার উপস্থিতি নিয়ে সেই মুহূর্তে কেউই ঘা-ই করে না। খুব সূক্ষ্মভাবেই সেই বিষয়টি আঁচ করতে পারা যায়।

পরিবারের লোকজনদের মাঝে একজন আছে, যে নীলদের বন্ধু। পরিবারের কেউ নয়। জেমস, নাম। জেমসের প্রেমিকাকে তারা কেউই খুব একটা বিশেষ আতিথেয়তা দেখায় না। তার প্রেমিকার দৃষ্টিতে, কথায় একটা চাপা উদ্বেগ। সর্বক্ষণ একটা দ্বন্দ্বের মধ্যেই যেন আছে সে। আর্টই তখন টিভি দেখে প্রথম বলে উঠে, “কেন আমরা বিশ্বাস করবো সরকারের কথায়? হতে পারে একটা নতুন ষড়যন্ত্র। কেন নিবো সেই পিল?” কোন পিলের কথা হচ্ছে? রহস্যের মাত্রা আর না চড়িয়ে বলা যাক। সুইসাইড পিল! তাই নিয়েই কথা হচ্ছে। ক্রিসমাসের এই সন্ধ্যা কোনো স্বাভাবিক সন্ধ্যা নয়। তারা সবাই আনন্দ উল্লাসের জন্য একত্রিত হয়নি আসলে। ওসব তো স্রেফ উপরটায়। ভেতরের কথাটা হচ্ছে, এটাই শেষ হুল্লোড়। শেষ দেখা। শেষ ভোজন, সকলে মিলে আত্মহত্যার আগে! 

ডিনার টেবিলে সকলে; Image Source: Marv Studios

কেন আত্মহত্যা? কারণ তা না করলে খুব যন্ত্রণাদগ্ধ হয়ে সবাইকে মরতে হবে। মৃত্যু অনিবার্য। পৃথিবীর গোটা পরিবেশে বিপর্যয় ঘটেছে। এক প্রাকৃতিক অ্যাপোক্যালিপ্স নেমে গেছে মনুষ্যত্বের চিহ্নকে মুছে দিতে। প্রকৃতি দূষিত হতে হতে গোটা সাইকেলই ধ্বংস হয়ে গেছে। এবং সেই মূল্য মেটাতে হচ্ছে প্রত্যেকটা জীবিত প্রাণীর মৃত্যু দিয়ে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া সেই ভয়ানক পদার্থ ঘূর্ণিঝড় রূপে দিয়ে আসছে এবং নিঃশেষ করছে সবকিছু। বাঁচার কোনো রাস্তাই বলে দিতে অক্ষম পরিবেশবিশারদ, বিজ্ঞানী, সরকার। তাই সেই যন্ত্রণাদগ্ধ মৃত্যুর বিকল্প একটাই— সরকারের দেওয়া পিলটা খেয়ে শান্তিতে মৃত্যু। ব্যথাহীন, যন্ত্রণাহীন এক মৃত্যু! ক্রিসমাসের এই রাতটা এই পরিবারের সকলে একসাথে উদযাপন করে, চুক্তি অনুযায়ী একসাথে সুইসাইড পিল গ্রহণ করবে।

এই ফলাফল এড়ানোর কোনো পথ যেন আর নেই। কিন্তু ছোট্ট আর্ট চায় না মরতে। জীবনের কিছুই যে তার দেখা হয়নি। সে বদ্ধপরিকর এই মৃত্যু এড়াতে। কোনো একটা মিরাকল ঘটবে তাতে তার দৃঢ়বিশ্বাস। বয়সটাই যে স্বপ্নের। তার দলে পায় জেমসের সেই প্রেমিকাকে। প্রেমিকা প্রেগন্যান্ট। সেও চায় না ভূমিষ্ঠ হবার আগেই সন্তানকে হত্যা করতে। কিন্তু পৃথিবীর আলো যে এমনিতেই দেখার সম্ভাবনা নেই বলছে সকলে! রাত বাড়তে থাকে। তাদের জটিলতা বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি গুমোট হয়। ওদিকে প্রাণবিনাশী ঘূর্ণি মানব সভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করতে, আসতে থাকে আরো তুমুল বেগে! 

জেমসের প্রেমিকাকে নিয়েই তাদের আলোচনা; Image Source: Marv Studios

গল্পধারণা থেকেই এটুকু স্পষ্ট হওয়া যায় যে ‘সাইলেন্ট নাইট’ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে কথা বলতে চায়। এই বিষয়টা বোধ করি সবসময়ই প্রাসঙ্গিক। তবে এই উত্তরাধুনিক সময়ে এর প্রাসঙ্গিকতা আরো বেড়েছে। কারণ ভয়াবহতাও যে বেড়েছে। এখনই তো একটা বৈশ্বিক অতিমারির সময় চলছে। ভোগবাদিতা চরমে উঠা, জনসংখ্যা লাগাম ছেড়ে যাওয়ার এই সময়ে এমন সিনেমা খুব দরকার। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ছে, বিপর্যয় আরো অবশ্যম্ভাবী হচ্ছে কিন্তু তাও মানুষ গা করছে না। শিল্পের দায় আছে সেইসকল বক্তব্য রাখার। তাইতো দেখা যায় সাম্প্রতিককালে ড্যারেন অ্যারোনফস্কি, তার ‘মাদার’ (২০১৭) অনেক বিব্লিক্যাল রূপকের সাথে প্রকৃতির উপর তান্ডব চালানোর দিকটিকে অমোঘরূপে উপস্থাপন করেছেন। সেই সিনেমার সমাপ্তিতে সবাই মিলে তো ওই মাদার ন্যাচারকেই ধ্বংস করতে সদা প্রস্তুত।

নগর সভ্যতার নামে প্রকৃতিকে বিপন্ন করার সেই রূপ যে বিভূতির বিখ্যাত উপন্যাস ‘আরণ্যক’-এও দেখতে পাওয়া যায়। তারপর আরো আছে পল শ্রেডারের সাম্প্রতিককালের গ্রেট সিনেমা ‘ফার্স্ট রিফর্মড’ (২০১৮)। আরো সূক্ষ্ম, আরো অন্তর্ভেদীরূপে এই সিনেমা পরিবেশকে ধ্বংস করার বিষয় নিয়ে তীর্যক বক্তব্য রাখে, আরো অনেককিছুর পাশাপাশি। ইকোলজিক্যাল ব্যাল্যান্স একবার হারিয়ে গেলে যে প্রাণীকূলের বিনাশ অনিবার্যই। সেই চিত্রটাই এই ব্রিটিশ সিনেমা, ‘সাইলেন্ট নাইট’-এর।

প্রসঙ্গে যেই দুটো সিনেমার নাম আনা হয়েছে (‘মাদার,’ ‘ফার্স্ট রিফর্মড’), ‘সাইলেন্ট নাইট’ ওই মাপের সিনেমা নয়। ওই দুটোর কথা বিষয়, বক্তব্যের খাতিরেই এসেছে। ‘সাইলেন্ট নাইট’ অমনটা হয়ে উঠতে তো পারতো, কিন্তু সেসবের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান; বিবরণ; দক্ষতার আরো দৃঢ় সমন্বয়ের দরকার ছিল। এই ধাঁচের সিনেমা, ‘ডিনারপার্টি ফ্রম হেল,’ যেখানে মূলত চরিত্রগুলোর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গল্প এগোবে এবং মূল বিষয় সামনে আসবে— সেইক্ষেত্রে চরিত্রগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণের ইন্টারেস্টিং হতে হয়। গভীরতা দরকার হয়, স্বীয় দর্শন প্রকাশ করতে হয় ছোটখাটো কথামালার ভেতর দিয়ে। সর্বোপরি চরিত্রগুলোকে অনেক বেশি বাস্তবিক করে তুলতে হয়, যাতে করে দর্শক ভুলত্রুটির মধ্য দিয়েও তাদের প্রতি একটা সহমর্মিতার একটা জায়গা খুঁজে পায়। ‘সাইলেন্ট নাইট’ সেই বিট মিস করেছে।

চরিত্রদের নিজস্ব গল্প আছে একজনের সাথে আরেকজনকে জড়িয়ে। ভুলত্রুটিগুলো সামনে এসেছে। কিন্তু পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য লেখা ক্যামিল গ্রিফিন এই জায়গাটায় নৈপুণ্যতা, সেভাবে প্রদর্শন করতে পারেননি। চরিত্রগুলোর বেড়ে উঠা এবং মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিকটাতে আরো সংবেদনশীল এবং সতর্ক হওয়া উচিত ছিল, যেহেতু সিনেমার দুই অংক এভাবেই এগোবার কথা। তবে বাচ্চা ছেলে আর্ট চরিত্রটির রূপায়ন বেশ ভালো হয়েছে। এই চরিত্রটির মধ্য দিয়ে সরকার ও রাজনীতি নিয়ে কৌশলে অনেককিছু বলিয়ে নিয়েছেন। তার এই বয়সের কৌতূহল, জেদের কারণে সেই প্রশ্নগুলোও সহজাত রূপ পেয়েছে ‘আর্ট’ চরিত্রটিতে। আর এই চৌকস চরিত্রটিতে ভারী চৌকস অভিনয়ই করেছে রোমান গ্রিফিন ড্যাভিস। মাত্র ১৪ বছরের এই বালক ‘জোজো র‍্যাবিট’ (২০১৯ সিনেমা দিয়েই অভিষিক্ত হয়। এবং অসামান্য অভিনয় করে। আগামীর রত্মই বটে। সিনেমায় তার আরো দুই আপন ভাইও অভিনয় করেছে। বড় টুইস্ট হলো সিনেমাটির চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক ক্যামিল গ্রিফিন এদেরই মা! বাবা বেন ড্যাভিস তো সিনেমাটোগ্রাফার এমনিতে। এই সিনেমায় সেই দায়িত্ব পালন করলে, সিনেমার মধ্য দিয়েই একটা পারিবারিক রিইউনিয়ন ঘটে যেত। সে যাক। 

দুই যমজ সহ রোমান গ্রিফিন ডাভিস; Image Source- Marv Films

জনি ডেপ কন্যা লিলি রোজ ডেপের সোফি চরিত্রটি দিয়েও এই সিনেমা একটা আশাবাদী কোণ এই সিনেমা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। এমনিতে তো নায়েলিস্টিক টোনটাই সিনেমায় গোটা সময়ে বিরাজ করেছে। এছাড়া কেইরা নাইটলি, ম্যাথিউ গুড, সোপ দিরিসু-সহ বেশ আকর্ষণীয় একটা কাস্টিং এবং ভালো সব পারফরমেন্স এই সিনেমা পেয়েছে। 

শেষ অংক আসতে আসতেই এই সিনেমা খুবই নিগূঢ় হয়ে উঠে। আর্ট চরিত্রটি যখন দৌড়ে বেরিয়ে যায় এবং বীভৎসতার সাক্ষী হয়ে যখন ফিরে আসে, এরপরই সিনেমার গোটা আবহ আরো তমসাচ্ছন্ন আর নৈরাশ্যে ভারী হয়ে উঠে। সাথে একটা ক্লস্ট্রোফোবিক ভাব জাগায় দর্শকের মনে। এই ক্লস্ট্রোফোবিক ভাবটাই দর্শককে বীভৎসতা আঁচ করতে বাধ্য করে। এবং হাসফাসের অনুভূতি জাগায়। যেই বক্তব্য এই সিনেমা রাখতে চেয়েছে, যেই সত্য অনুধাবন করাতে চেয়েছে; সেটাকে অভিঘাতী করে তুলেছে। দর্শকের চিন্তার সুতোটাকে নাড়া দিয়েছে। নৈরাশ্যের অনুভূতি সারা মনেই জাগিয়েছে ধীরে ধীরে।

ক্যামিল গ্রিফিন তার ফিল্মমেকিংয়ের সেন্সিবিলিটি এই অংকে এসেই প্রদর্শন করেছেন। খুব বেশি ক্লোজ আপে না গিয়ে মিড রেঞ্জ আর লং শটেই পরিবেশটার যথাযোগ্য চিত্রণ তিনি করেছেন। অনেক বেশি ক্লোজ আপ শট না থাকা সত্ত্বেও অস্বস্তিদায়ক অনুভূতিটা ভালোভাবেই পাওয়া যায়। ঘটনার প্রবাহে, চরিত্রদের ছোটাছুটিতে, ঠিকঠাক কম্পোজিশনে, লাইটিংয়ে— গোটা আবহটাই অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ হয়ে উঠে। সেই কারণেই তো জাগে ওই ক্লস্ট্রোফোবিয়া। সাথে ব্ল্যাক কমেডির রসটাকে ধরে রেখে, মোচড় দিয়ে আরো নিগূঢ় করেছেন পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে। 

সকল স্টাররা
Image Source- Marv Films

শেষ অংকে এই সিনেমা যেই রূপ পেয়েছে, দক্ষতার প্রদর্শন করেছে; সেটা গোটা সিনেমায় করলে ‘সুপেরিয়র’ একটা অবস্থানে যেতে পারতো এই সিনেমা। তবে ক্রিসমাস ফিল্মের মোড়কে যেই প্রাসঙ্গিক এবং ভয়াবহ বক্তব্য ডিনারপার্টিতে বসে আওড়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় ‘সাইলেন্ট নাইট’-এর অভিজ্ঞতাটা দর্শকের নেওয়া প্রয়োজন।

————————————-

সিনেমা- সাইলেন্ট নাইট

পরিচালক- ক্যামিল গ্রিফিন

জনরা- ব্ল্যাক কমেডি, হরর, ড্রামা

মুক্তিকাল- ২০২১

দেশ ও ভাষা- ব্রিটেন, ইংরেজি  

This article is a bengali review of the film 'Silent Night' (2021), directed by Camille Griffin. 

Feature Image: Marv. Films

Related Articles

Exit mobile version