বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিজস্ব ‘ভিয়েতনাম যুদ্ধ’ || শেষ পর্ব

[৩য় পর্ব পড়ুন]

গিনি–বিসাউয়ের স্বাধীনতা যুদ্ধ: পর্তুগালের ভিয়েতনাম

১৯৬১ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত ক্ষুদ্র পর্তুগিজ উপনিবেশ ‘পর্তুগিজ গিনি’তে মার্ক্সবাদী স্বাধীনতাকামী মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘পিএআইজিসি’ (পর্তুগিজ: Partido Africano para a Independência da Guiné e Cabo Verde, ‘PAIGC’) পর্তুগিজ–নিয়ন্ত্রিত ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ শুরু করে এবং ১৯৬৩ সালের জানুয়ারি নাগাদ এটি পর্তুগাল ও পিএআইজিসির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। এই যুদ্ধ ‘গিনি–বিসাউয়ের স্বাধীনতা যুদ্ধ’ নামে পরিচিতি লাভ করে, এবং সেসময় আফ্রিকায় চলমান তিনটি ‘পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক যুদ্ধে’র (Portuguese Colonial War) মধ্যে একটি ছিল এই যুদ্ধ।

পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে গিনি–বিসাউ ছিল পর্তুগালের একটি উপনিবেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো ক্রমান্বয়ে এশিয়া ও আফ্রিকায় অবস্থিত তাদের উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা প্রদান করতে শুরু করে বা করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পর্তুগালের অবস্থান ছিল সবচেয়ে অনমনীয়। পর্তুগিজ সরকার এশিয়া ও আফ্রিকায় অবস্থিত তাদের উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা প্রদান করতে আগ্রহী ছিল না এবং এজন্য তারা তাদের উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের পরিবর্তে সেগুলোকে প্রশাসনিকভাবে পর্তুগালের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে অঙ্গীভূত করতে শুরু করে।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে পর্তুগিজ উপনিবেশগুলোতে স্বাধীনতাকামী আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হচ্ছিল। পর্তুগিজ সরকার উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতার দাবিকে উপেক্ষা করে এবং স্বাধীনতাকামীদের ওপর দমন–পীড়ন শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬১ সাল নাগাদ আফ্রিকায় অবস্থিত পর্তুগিজ উপনিবেশগুলোতে (অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, গিনি–বিসাউ ও কেপ ভার্দে) স্বাধীনতাকামী মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলো পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। গিনি–বিসাউয়ে পর্তুগিজবিরোধী স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করে মার্ক্সবাদী মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘পিএআইজিসি’। তারা গেরিলা পদ্ধতিতে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে এবং ক্রমশ ‘পর্তুগিজ গিনি’র উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূখণ্ড অধিকার করে নেয়। তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, যুগোস্লাভিয়া, রোমানিয়া, কিউবা, গিনি, সেনেগাল, লিবিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র এই যুদ্ধে পিএআইজিসিকে সহায়তা প্রদান করে।

পিএআইজিসি মিলিট্যান্টরা ট্রাক থেকে অস্ত্র নামাচ্ছে; Source: Joao Carvalho/Wikimedia Commons

পর্তুগিজ সরকার পিএআইজিসিকে দমন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা ‘পর্তুগিজ গিনি’তে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে, পিএআইজিসিকে দমনের জন্য উপনিবেশটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করে এবং বহুসংখ্যক গিনিয়ান–বিসাউকে তাদের ঔপনিবেশিক সৈন্যদলে নিয়োগ দেয়। গিনি–বিসাউয়ে মোতায়েনকৃত পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ–নিয়ন্ত্রিত গিনিয়ান–বিসাউ সৈন্যদের সংখ্যা ছিল অন্তত ৩২,০০০, অন্যদিকে পিএআইজিসির সক্রিয় যোদ্ধার সংখ্যা ছিল মাত্র ১০,০০০। কিন্তু পর্তুগিজরা পিএআইজিসিকে দমন করতে ব্যর্থ হয় এবং ‘পর্তুগিজ গিনি’তে পিএআইজিসির অবস্থান ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকে। উল্লেখ্য, এসময় পর্তুগাল মার্কিন–নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘ন্যাটো’র সদস্য ছিল এবং পিএআইজিসি মার্ক্সবাদী ও সোভিয়েত–সমর্থনপুষ্ট হওয়ায় গিনি–বিসাউয়ের স্বাধীনতা যুদ্ধ কার্যত মার্কিন–নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী বিশ্ব ও সোভিয়েত–নেতৃত্বাধীন মার্ক্সবাদী বিশ্বের মধ্যেকার একটি ‘প্রক্সি যুদ্ধে’ পরিণত হয়।

১৯৭০ সাল নাগাদ এটি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে, পিএআইজিসিকে দমনের জন্য পর্তুগিজদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। পর্তুগিজ গিনির পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র গিনি ও সেনেগাল পিএআইজিসিকে সাহায্য করছিল। বিশেষত গিনিয়ান সরকারের সঙ্গে পিএআইজিসির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং পিএআইজিসি গিনিয়ান ভূখণ্ডকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। এমতাবস্থায় ১৯৭০ সালের ২২ নভেম্বর পর্তুগাল গিনিতে আক্রমণ পরিচালনা করে। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল গিনিয়ান রাষ্ট্রপতি আহমেদ সেকু তুরেকে ক্ষমতাচ্যুত করা, গিনিতে অবস্থানরত পিএআইজিসি নেতা আমিলকার কাব্রালকে বন্দি করা এবং সেখানে পিএআইজিসির হাতে বন্দি থাকা পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ–নিয়ন্ত্রিত গিনিয়ান–বিসাউ সৈন্যদের মুক্ত করা।

পর্তুগিজদের শেষোক্ত উদ্দেশ্যটি সফল হয়, কিন্তু সেকু তুরেকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা কাব্রালকে বন্দি করার ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়। তদুপরি, গিনির ওপর পরিচালিত এই পর্তুগিজ আগ্রাসনের ফলে নাইজেরিয়া ও আলজেরিয়াসহ বিভিন্ন আফ্রিকান রাষ্ট্র এই যুদ্ধে পিএআইজিসিকে সরাসরি সমর্থন করতে শুরু করে। সর্বোপরি, এই ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন এতদঞ্চলে একটি নৌবহর প্রেরণ করে এবং এর পাশাপাশি পিএআইজিসিকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের মাত্রা বৃদ্ধি করে। সামগ্রিকভাবে, এই সময় নাগাদ এই যুদ্ধে পর্তুগালের বিজয় লাভের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।

পিএআইজিসি মিলিট্যান্টদের হাতে বিধ্বস্ত একটি পর্তুগিজ আর্মার্ড কার; Source: Roel Cutinho Guinea-Bissau and Senegal Photographs (1973-1974)/Wikimedia Commons

১৯৭৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পিএআইজিসি একপাক্ষিকভাবে গিনি–বিসাউয়ের স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র গিনি–বিসাউকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করতে আরম্ভ করে। এদিকে ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে পর্তুগালের মূল ভূখণ্ডে পর্তুগিজ সশস্ত্রবাহিনীর বামপন্থী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি বিপ্লব/অভ্যুত্থান ঘটে এবং তদানীন্তন পর্তুগিজ সরকারের পতন ঘটে। গিনি–বিসাউসহ আফ্রিকান উপনিবেশগুলোতে চলমান দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ এবং যুদ্ধের ফলে পর্তুগালের উল্লেখযোগ্য সামরিক ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ছিল এই বিপ্লব/অভ্যুত্থানের অন্যতম একটি কারণ। নতুন পর্তুগিজ সরকার পর্তুগালের আফ্রিকান উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯৭৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্তুগাল আনুষ্ঠানিকভাবে গিনি–বিসাউকে স্বাধীনতা প্রদান করে। এর মধ্য দিয়ে ‘গিনি–বিসাউয়ের স্বাধীনতা যুদ্ধে’র অবসান ঘটে।

এই যুদ্ধ চলাকালে অন্তত ২,০৬৯ জন পর্তুগিজ সৈন্য নিহত এবং ৩,৮৩০ জন পর্তুগিজ সৈন্য গুরুতরভাবে আহত হয়। তদুপরি, গিনি–বিসাউ স্বাধীনতা লাভ করার পর রাষ্ট্রটির সরকার এই যুদ্ধে পর্তুগালের পক্ষে লড়াইয়ে অংশ নেয়া অন্তত ৭,৪৪৭ জন গিনিয়ান–বিসাউ নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। শুধু তা-ই নয়, এই যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রতি বছর পর্তুগিজ সরকারকে তাদের বার্ষিক বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করতে হচ্ছিল। কিন্তু এতকিছুর পরেও পর্তুগালের পক্ষে গিনি–বিসাউয়ে সামরিক বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়নি। অ্যাঙ্গোলা ও মোজাম্বিকে স্বাধীনতাকামী মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলো পর্তুগিজদেরকে সামরিকভাবে পর্যুদস্ত করতে পারেনি। কিন্তু গিনি–বিসাউয়ে পিএআইজিসির সঙ্গে যুদ্ধে পর্তুগিজরা সামরিক অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়।

বিপুল সামরিক–অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পর্তুগাল ক্ষুদ্র গিনি–বিসাউয়ের ভূখণ্ডে সংখ্যাগত ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে তুলনামূলকভাবে দুর্বল পিএআইজিসিকে দমন করতে ব্যর্থ হয়। তদুপরি, পর্তুগালে তরুণদের বাধ্যতামূলকভাবে সশস্ত্রবাহিনীতে যোগদানের নিয়ম প্রচলিত ছিল, কিন্তু এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ এড়াতে বহুসংখ্যক পর্তুগিজ তরুণ দেশত্যাগ করে। পর্তুগালের অভ্যন্তরে এই যুদ্ধ ক্রমশ অত্যন্ত অজনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। এই প্রেক্ষাপটে গিনি–বিসাউয়ের স্বাধীনতা যুদ্ধকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘পর্তুগিজ ভিয়েতনাম’ (Portuguese Vietnam) হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।

পিএআইজিসি মিলিট্যান্টদের দ্বারা ভূপাতিত একটি পর্তুগিজ সামরিক বিমানের ধ্বংসাবশেষ; Source: Roel Cutinho Guinea-Bissau and Senegal Photographs (1973-1974)/Wikimedia Commons

অবশ্য এই যুদ্ধে পিএআইজিসির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নেহাৎ কম ছিল না। তাদের অন্তত ৬,০০০ যোদ্ধা এই যুদ্ধে হতাহত হয় এবং এই যুদ্ধের ফলে গিনি–বিসাউয়ে অন্তত ৫,০০০ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ঘটে। তদুপরি, এই যুদ্ধের ফলে গিনি–বিসাউয়ের অর্থনীতি ও অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত গিনি–বিসাউ পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং এর মধ্য দিয়ে পিএআইজিসি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করে।

অ্যাঙ্গোলান গৃহযুদ্ধ: কিউবা ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভিয়েতনাম

১৯৭৫ সালের নভেম্বরে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র অ্যাঙ্গোলায় গৃহযুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং রাষ্ট্রটির ক্ষমতাসীন মার্ক্সবাদী দল ‘এমপিএলএ’কে (পর্তুগিজ: Movimento Popular de Libertação de Angola, ‘MPLA’) সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ল্যাটিন আমেরিকান মার্ক্সবাদী রাষ্ট্র কিউবা অ্যাঙ্গোলায় সৈন্য প্রেরণ করে। এর মধ্য দিয়ে অ্যাঙ্গোলান গৃহযুদ্ধে কিউবান সামরিক হস্তক্ষেপ আরম্ভ হয়। ১৯৯১ সালের মে পর্যন্ত কিউবা এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল, এবং এটি ছিল স্বাধীন কিউবার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ।

পঞ্চদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অ্যাঙ্গোলা পর্তুগালের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অ্যাঙ্গোলায় স্বাধীনতাকামী আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৬১ সাল নাগাদ অ্যাঙ্গোলান স্বাধীনতাকামী মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলো পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু অ্যাঙ্গোলান স্বাধীনতাকামী গ্রুপগুলোর নিজেদের মধ্যেও তীব্র আদর্শিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিদ্যমান ছিল। এই গ্রুপগুলোর মধ্যে ছিল মার্ক্সবাদী ‘এমপিএলএ’, মাওবাদী ও ওভিমবুন্দু–নিয়ন্ত্রিত ‘ইউনিটা’ (পর্তুগিজ: União Nacional para a Independência Total de Angola, ‘UNITA’) এবং জাতীয়তাবাদী ও কমিউনিজমবিরোধী ‘এফএনএলএ’ (পর্তুগিজ: Frente Nacional de Libertação de Angola, ‘FNLA’)। তদুপরি, অ্যাঙ্গোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কাবিন্দা প্রদেশে সক্রিয় স্থানীয় স্বাধীনতাকামী মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘এফএলইসি’ (পর্তুগিজ: Frente para a Libertação do Enclave de Cabinda, ‘FLEC’) কাবিন্দা প্রদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে আগ্রহী ছিল।

মানচিত্রে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউনিটা কর্তৃক অধিকৃত অ্যাঙ্গোলান ভূখণ্ড; Source: GhePeU/Wikimedia Commons

১৯৭৪ সালের এপ্রিলে পর্তুগালে সংঘটিত একটি বিপ্লব/অভ্যুত্থানের ফলে তদানীন্তন পর্তুগিজ সরকারের পতন ঘটে এবং একটি বামপন্থী সরকার তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। নতুন পর্তুগিজ সরকার অ্যাঙ্গোলান স্বাধীনতাকামী মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে তাদের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তি অনুযায়ী পর্তুগাল ১৯৭৫ সালের নভেম্বর নাগাদ অ্যাঙ্গোলাকে স্বাধীনতা প্রদান করতে রাজি হয়। কিন্তু এর পরপরই অ্যাঙ্গোলান মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই যুদ্ধে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন, কিউবা, পূর্ব জার্মানি, যুগোস্লাভিয়া, কঙ্গো, উত্তর কোরিয়া, রুমানিয়া, মোজাম্বিক ও আরো কিছু রাষ্ট্র এমপিএলএকে সমর্থন করে, অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, জায়ারে (বর্তমান কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র), চীন, মরক্কো ও জাম্বিয়া ইউনিটা ও এফএনএলএকে সমর্থন প্রদান করে। ফ্রান্স কাবিন্দাভিত্তিক ‘এফএলইসি’কে সহায়তা করে।

১৯৭৫ সালের আগস্ট নাগাদ এমপিএলএ মিলিট্যান্টরা অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডাসহ অ্যাঙ্গোলার ১৫টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১১টি দখল করে নিতে সক্ষম হয়। এমতাবস্থায় যুদ্ধের গতি ঘুরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে অক্টোবর নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকা ও জায়ারে অ্যাঙ্গোলায় সৈন্য প্রেরণ করে এবং ইউনিটা ও এফএনএলএ মিলিট্যান্টদের সঙ্গে মিলে এমপিএলএর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় নভেম্বরে কিউবা অ্যাঙ্গোলায় সৈন্য প্রেরণ করে এবং এমপিএলএর পক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১১ নভেম্বর অ্যাঙ্গোলা স্বাধীনতা লাভ করে এবং রাজধানী লুয়ান্ডা এমপিএলএর নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকায় এমপিএলএ অ্যাঙ্গোলার সরকার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক ইউনিটা ও এফএনএলএকে সমর্থন প্রদানের প্রত্যুত্তরে অ্যাঙ্গোলা ও কিউবা দক্ষিণ আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ দল ‘এএনসি’ (African National Congress, ‘ANC’) এবং দক্ষিণ আফ্রিকান উপনিবেশ দক্ষিণ–পশ্চিম আফ্রিকার (বর্তমান নামিবিয়া) স্বাধীনতাকামী মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘সোয়াপো’কে (South West Africa People’s Organisation, ‘SWAPO’) সমর্থন প্রদান করে।

কিউবান ও অ্যাঙ্গোলান সৈন্যরা দক্ষিণ আফ্রিকান সৈন্যদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে সক্ষম হয় এবং ১৯৭৬ সাল নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকা ও জায়ারে অ্যাঙ্গোলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু অ্যাঙ্গোলান গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে এবং কিউবান সৈন্যরা এই গৃহযুদ্ধে অ্যাঙ্গোলান সরকারকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করতে থাকে। ১৯৮১ সাল নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকা আবার অ্যাঙ্গোলায় আক্রমণ চালায় এবং কিউবান ও অ্যাঙ্গোলান সৈন্যরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অ্যাঙ্গোলায় কিউবান সামরিক উপস্থিতির মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৮৮ সাল নাগাদ অন্তত ৬০,০০০ কিউবান সৈন্য অ্যাঙ্গোলায় অবস্থান করছিল।

অ্যাঙ্গোলায় মোতায়েনকৃত একদল কিউবান সৈন্য; Source: Jacobin

এই যুদ্ধ ক্রমশ উভয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। কিউবার পক্ষে এত বড় মাত্রার একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ পরিচালনা করা ক্রমশ অর্থনৈতিকভাবে কঠিন হয়ে উঠছিল। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে অ্যাঙ্গোলায় তাদের অবস্থান ধরে রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছিল এবং দক্ষিণ–পশ্চিম আফ্রিকার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা ও খোদ দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরে শ্বেতাঙ্গ শাসন বজায় রাখা তাদের পক্ষে ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছিল। ১৯৮৮ সালের আগস্ট নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকা অ্যাঙ্গোলান ভূখণ্ড থেকে তাদের সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। এই পরিস্থিতিতে ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে অ্যাঙ্গোলা, কিউবা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী কিউবা ধাপে ধাপে অ্যাঙ্গোলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে সম্মত হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দক্ষিণ–পশ্চিম আফ্রিকাকে (নামিবিয়া) স্বাধীনতা প্রদান করতে সম্মত হয়।

১৯৮৯ সালের জানুয়ারিতে কিউবা অ্যাঙ্গোলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করে। ইতোমধ্যে ১৯৯০ সালের মার্চে নামিবিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা নামিবিয়া থেকেও তাদের সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৯১ সালের মে নাগাদ অ্যাঙ্গোলা থেকে কিউবান সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়। এমপিএলএ অ্যাঙ্গোলার শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে, কিন্তু অ্যাঙ্গোলা থেকে সমস্ত বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের পরেও অ্যাঙ্গোলায় গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। অবশেষে ২০০২ সালে ইউনিটা চূড়ান্তভাবে অ্যাঙ্গোলান সরকারের নিকট পরাজিত হয় এবং এর মধ্য দিয়ে অ্যাঙ্গোলান গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে।

কার্যত অ্যাঙ্গোলান গৃহযুদ্ধে কিউবা পরাজয় বরণ করেনি। এই যুদ্ধে কিউবার মূল উদ্দেশ্য ছিল এমপিএলএর নিয়ন্ত্রণাধীন অ্যাঙ্গোলান সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহায়তা করা এবং অ্যাঙ্গোলার ওপর দক্ষিণ আফ্রিকান আক্রমণ প্রতিহত করা। তাদের দুইটি প্রধান উদ্দেশ্যই পূর্ণ হয়। কিন্তু এই প্রলম্বিত যুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলে কিউবা ব্যাপক সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিউবান সরকারের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে অন্তত ২,০১৬ জন কিউবান সৈন্য নিহত হয়। অবশ্য অন্যান্য সূত্রের মতে, এই যুদ্ধে অন্তত ৫,০০০ কিউবান সৈন্য নিহত এবং আরো অন্তত ১০,০০০ কিউবান সৈন্য আহত বা নিখোঁজ হয়। তদুপরি, এই যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান ব্যয় কিউবান অর্থনীতির ওপর মারাত্মক চাপের সৃষ্টি করে। এজন্য বহু আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক, বিশেষত কিউবান সরকারবিরোধী ও কমিউনিজমবিরোধী বিশ্লেষকরা অ্যাঙ্গোলান গৃহযুদ্ধকে ‘কিউবান ভিয়েতনাম’ (Cuban Vietnam) হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

অ্যাঙ্গোলান সীমান্তে একদল দক্ষিণ আফ্রিকান প্যারাট্রুপার; Source: Wikimedia Commons/Foreign Policy

অন্যদিকে, কিউবার প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যও এই যুদ্ধ মোটেই লাভজনক ছিল না। এই যুদ্ধে কিউবার মূল উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ হয়েছিল, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো উদ্দেশ্যই কার্যত পূর্ণ হয়নি। এমপিএলএকে অ্যাঙ্গোলার শাসনক্ষমতা থেকে অপসারণ করা, ইউনিটাকে অ্যাঙ্গোলার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা কিংবা দক্ষিণ–পশ্চিম আফ্রিকা/নামিবিয়ায় চলমান যুদ্ধে সোয়াপোকে সহায়তা প্রদান থেকে অ্যাঙ্গোলাকে বিরত রাখা – এগুলোর কোনোটিই দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তদুপরি, এই যুদ্ধে কিউবান ও অ্যাঙ্গোলান সৈন্য ও সোয়াপো মিলিট্যান্টদের সঙ্গে লড়াইয়ে অন্তত ২,৫০০ জন দক্ষিণ আফ্রিকান সৈন্য নিহত হয়, যদিও এই সংখ্যাটি আরো বেশিও হতে পারে। তদুপরি, অ্যাঙ্গোলান গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপের ফলে দক্ষিণ আফ্রিকান অর্থনীতি প্রচণ্ড চাপের সম্মুখীন হয়, যেটি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ–নিয়ন্ত্রিত বর্ণবাদী সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য কিছু কিছু বিশ্লেষক অ্যাঙ্গোলান গৃহযুদ্ধকে ‘দক্ষিণ আফ্রিকান ভিয়েতনাম’ (South African Vietnam) হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন।

ইরানি–ওসমানীয় যুদ্ধসমূহ: ওসমানীয় রাষ্ট্রের ভিয়েতনাম

পঞ্চদশ শতাব্দীতে ওসমানীয় রাষ্ট্র ও সাফাভি রাজবংশের শাসনাধীন ইরান পরস্পরের প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং বর্তমান ইরাক, পূর্ব তুরস্ক, পশ্চিম ইরান ও দক্ষিণ ককেশাসের অধিকার নিয়ে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর ফলে ১৪৭৩ থেকে ১৬৩৯ সাল পর্যন্ত ১৬৬ বছরে ওসমানীয় রাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে অন্তত ৫টি (১৫১৪, ১৫৩২–৫৫, ১৫৭৮–৯০, ১৬০৩–১৮, ১৬২৩–৩৯) প্রলম্বিত যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধগুলোর কোনোটিতে ওসমানীয় রাষ্ট্র সাফল্য অর্জন করে, আবার কোনোটিতে ইরান সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু এই যুদ্ধগুলোর ফলে উভয় পক্ষের বিপুল পরিমাণ সামরিক ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষত ইরানের বিরুদ্ধে অবিরত যুদ্ধবিগ্রহ পরিচালনা করতে গিয়ে ওসমানীয় রাষ্ট্রের কার্যত দেউলিয়ায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয় এবং এর ফলে অন্যান্য রণাঙ্গনে মনোনিবেশ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওসমানীয় রাষ্ট্র বিষয়ক ইতিহাসবিদ নরম্যান ইজকোউইটজ ১৬৩৯ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ইরানি–ওসমানীয় যুদ্ধগুলোকে ‘ওসমানীয় ভিয়েতনাম’ (Ottoman Vietnam) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

কার্যত ১৬৩৯ সাল নাগাদ ওসমানীয় রাষ্ট্র ও ইরান এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, তাদের কেউই অপরপক্ষকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না এবং তাদের মধ্যে কেউ এই প্রচেষ্টা চালালে তাদের নিজস্ব অর্থনীতিই ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। এই প্রেক্ষাপটে ১৬৩৯ সালে ওসমানীয় সুলতান ৪র্থ মুরাদ ও ইরানি শাহ সাফি জুহাব/কাসর–এ–শিরিন সন্ধিতে স্বাক্ষর করেন এবং এর মধ্য দিয়ে প্রলম্বিত ইরানি–ওসমানীয় যুদ্ধসমূহের অবসান ঘটে। বস্তুত, ১৬৩৯ সালের পর ইরানি–ওসমানীয় সীমান্তের কার্যত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। বস্তুত বর্তমান তুর্কি–ইরানি সীমান্ত বহুলাংশে সপ্তদশ শতাব্দীর ইরানি–ওসমানীয় সীমান্তের অনুরূপ। 

১৬৬১ সালের একটি মানচিত্রে ওসমানীয় রাষ্ট্র ও ইরান; Source: Andre Daulier Deslandes, Israel Silvestre and Antoine Paillet/Wikimedia Commons

অবশ্য ১৬৩৯ সালের সন্ধির পরে যে ওসমানীয় রাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একেবারেই কোনো যুদ্ধ হয়নি, এমনটা নয়। বস্তুত অষ্টাদশ শতাব্দীতে ও ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাষ্ট্র দুটির মধ্যে অন্তত ৪টি যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং এগুলোতে কার্যত ইরানিরাই বেশি সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু এই যুদ্ধগুলো ১৬৩৯ সালের আগে সংঘটিত ইরানি–ওসমানীয় যুদ্ধগুলোর মতো প্রলম্বিত ছিল না এবং এগুলোর ফলে ইরানি–ওসমানীয় সীমান্তে সেরকম কোনো উল্লেখযোগ্য স্থায়ী পরিবর্তন ঘটেনি। এজন্য ওসমানীয় রাষ্ট্রের জন্য ১৬৩৯ সালের পরবর্তী ইরানি–ওসমানীয় যুদ্ধগুলো ১৬৩৯ সালের পূর্ববর্তী ইরানি–ওসমানীয় যুদ্ধগুলোর মতো অতটা ধ্বংসাত্মক ছিল না। এজন্য ১৬৩৯ সালের পরবর্তী ইরানি–ওসমানীয় যুদ্ধগুলো ওসমানীয় রাষ্ট্রের বা ইরানের জন্য ‘ভিয়েতনাম’ হয়ে ওঠেনি।

সামগ্রিকভাবে, ইতিহাসের প্রায় প্রতিটি বৃহৎ ও আঞ্চলিক শক্তিই কার্যত কখনো না কখনো কোনো ক্ষুদ্র শক্তির সঙ্গে এমন কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে ঐ বৃহৎ বা আঞ্চলিক শক্তির জন্যই ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনাম যুদ্ধ এই জাতীয় যুদ্ধগুলোর প্রায় সর্বজনস্বীকৃত প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের ‘ভিয়েতনাম’ খুঁজে পেয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে বলা যেতে পারে, এই শতাব্দীতে আরো কিছু বৃহৎ ও আঞ্চলিক শক্তি তাদের নিজেদের ‘ভিয়েতনাম’ খুঁজে পাবে, এই সম্ভাবনা প্রবল।

Related Articles

Exit mobile version