জর্জ ওয়াশিংটনসহ যে ক’জন আমেরিকান নেতা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন তৎকালীন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় জর্জ। ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী বরাবরই চেয়েছিল আমেরিকাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে রেখে আলাদাভাবে পরিচালনা করতে। অন্যদিকে, আমেরিকান নেতারা চেয়েছিলেন নতুন সরকার গঠন করে পুরোপুরি আলাদা হতে। রাজা তৃতীয় জর্জ প্রথমদিকে তাদের দমিয়ে রাখলেও পরে অবশ্য আমেরিকান দেশপ্রেমিক নেতাদের রাজি করাতে পারেননি। এদিকে ব্রিটিশরা সহজভাবে স্বাধীনতা হাতে তুলে দেবে এমনটাও ভেবে বসে থাকেননি আমেরিকান নেতারা।
সেসময় ১৩টি কলোনির কংগ্রেসম্যানরা একমত হন যে, অন্যান্য ঔপনিবেশিক দেশের মতো আমেরিকাতেও নিজস্ব সরকার গঠনের অধিকার সেখানকার নাগরিকদের রয়েছে। তারা প্রতিটি রাজ্যে আলাদা আলাদা সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে অন্য দেশ থেকে সমষ্টিগতভাবে আলাদা হওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর এই কারণেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া জরুরি ছিল তাদের জন্য। মূলত এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই ১৭৭৬ সালে জর্জ ওয়াশিংটনের অনুসারীদের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয় ব্রিটিশরা। ঐতিহাসিকদের মতে, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রই আমেরিকান বিপ্লবের পেছনে থাকা মূল্যবোধকে আরও শক্তিশালী করে।
এর আগে মহাদেশীয় কংগ্রেসের নির্দেশনায় ১৭৭৫ সাল থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ব্যাপক আলোচনার পর থমাস জেফারসনকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটির প্রধান নির্বাচিত করেন নেতারা। তিনি ছাড়াও এই কমিটিতে আরও ছিলেন জন এডামস, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, রজার শেরম্যান এবং রবার্ট লিভিংস্টোন। আমেরিকার ইতিহাসে একে ‘দ্য কমিটি অব ফাইভ’ নামে অভিহিত করা হয়। ১৭৭৬ সালের জুন মাসের শেষ অবধি ঘোষণাপত্র প্রণয়নের কাজ চলতে থাকে।
‘সকল মানুষ সৃষ্টিলগ্ন থেকে সমান’ এমন মর্মে দাসপ্রথাকে ঘৃণিত একটি পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন জেফারসন। চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন অবধি সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। শেষপর্যন্ত জুলাইয়ে থমাস জেফারসন চূড়ান্ত খসড়া কংগ্রেসে উত্থাপন করেন। তিনি সেখানে দাসপ্রথার প্রতি নিন্দা জানিয়ে ১৬৪ শব্দের একটি অনুচ্ছেদ বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এই অনুচ্ছেদে আমেরিকায় প্রচলিত দাসপ্রথাকে ব্রিটিশ কর্তাদের দ্বারা আমেরিকার উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া প্রথা হিসেবে উল্লেখ করেন থমাস জেফারসন। কিন্তু শেষবার তার এই অনুচ্ছেদটি সরিয়ে দেন নীতিনির্ধারকেরা। জেফারসন নিজেও হয়তো ভাবেননি দাসত্বের বিরুদ্ধে উল্লেখিত ঐ অনুচ্ছেদটি একসময় এত এত মানুষের আলোচনার বিষয়ে পরিণত হবে।
থমাস জেফারসন সমতার উদ্ভবের সাথে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়নের কৃতিত্ব পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু দাসত্বের বিরুদ্ধে তার উল্লেখিত বিষয়গুলো আমেরিকার ইতিহাস থেকে নীরবেই হারিয়ে যেতে থাকে। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, বিগত ২০০ বছর যাবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বর্ণবৈষম্যের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে ঐ অনুচ্ছেদটি মুছে ফেলাই দায়ী। কোন কারণে এটি বাদ দেয়া হয়েছিল সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আলোচনা করা দরকার কংগ্রেসম্যানদের কাছে দাসপ্রথার বিলুপ্তি কিংবা বিরুদ্ধাচরণ সে সময় কেমন প্রভাব ফেলেছিল। আর আমাদের আজকের আলোচনা এই বিষয়গুলো নিয়েই।
কী ছিল ঐ অনুচ্ছেদে?
থমাস জেফারসন প্রাথমিক খসড়ায় রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করান। ট্রান্সআটলান্টিক অঞ্চলে দাস ব্যবসায়ের জন্য তিনি তৃতীয় জর্জকে সরাসরি দায়ী করেন। জেফারসন একে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে আমেরিকান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে দাসপ্রথার বিলুপ্তি চেয়ে বসেন। দাস ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘নীরবতার যুদ্ধ’, ‘অভিশাপযোগ্য ব্যবসা’ এবং ‘ভয়াবহতম সমাবেশ’ হিসেবে উল্লেখ করে সমালোচনা করেন তিনি। উল্লেখ্য, এই অনুচ্ছেদে তিনি বরাবরই ব্রিটিশ সরকারের নিয়মনীতিকে দায়ী করে আমেরিকার স্বাধীনতায় দাসপ্রথা বাতিলের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এখানে ব্রিটিশদের সমালোচনার সুস্পষ্ট কিছু কারণও উপস্থাপন করেছিলেন জেফারসন। ১৭৭৫ সালে একজন ব্রিটিশ লর্ড ঘোষণা করেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অঞ্চলে বসবাসরত যেসকল দাসদাসী স্বেচ্ছায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যেকোনো বিপ্লবের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেবে, তাদেরকে দাসত্ব থেকে চিরদিনের জন্য মুক্ত করে দেয়া হবে। এই ঘোষণার পর আমেরিকা অঞ্চলের হাজার হাজার ক্রীতদাস ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার চেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে আমেরিকান বিপ্লবে অনেক ক্রীতদাসকে ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধ করতে দেখা গিয়েছে। আর তাই জেফারসন ইংরেজদের এই নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। জেফারসনের ঐ খসড়া অনুচ্ছেটি নিম্নরূপ,
তিনি (তৃতীয় জর্জ) নিজেই মানবপ্রকৃতির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন, দূরবর্তী অঞ্চলের সেসব মানুষের পবিত্র অধিকার এবং স্বাধীনতা লঙ্ঘন করেছিলেন যারা কখনোই তাকে অসন্তুষ্ট করেনি, বরঞ্চ চিত্তাকর্ষণের বদৌলতে তাদেরকে অন্য গোলার্ধে দাসত্বের পথে পরিবহন করে নিয়ে যেত যেখানে তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হতো।
তিনি আমাদেরকে প্রাপ্য স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছিলেন আবার ঠিক আমাদেরই বিরুদ্ধে তাদেরকে (দাস) অস্ত্র হাতে নিতে উত্তেজিত করেন। অর্থাৎ হত্যার উদ্দেশ্যে তিনি আবার তাদেরকেও হত্যা করতে চেয়েছেন। এভাবে একজনের নায্য স্বাধীনতার বিরুদ্ধে করা পূর্বের অপরাধসমূহের ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি তিনি (তৃতীয় জর্জ) অন্যের বিরুদ্ধে ক্রীতদাসদের লড়াই করার আহ্বান জানান যা যুদ্ধাপরাধের সামিল।
যে কারণে দাসপ্রথা-বিরোধী অনুচ্ছেদটি সরানো হয়
৩৩ বছর বয়সী থমাস জেফারসন ১৭৭৬ সালের ১১ জুন থেকে ২৮ জুন অবধি আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রাথমিক খসড়া লেখেন। অতঃপর তিনি এটি ‘কমিটি অব ফাইভ’ এর অন্য সদস্যদের নিকট জমা দেন। ইতিহাসবিদরা এখন অবধি নিশ্চিত হতে পারেননি ১৬৪ শব্দের ঐ অনুচ্ছেদটি কোন কারণে বাদ দেয়া হয়। দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেসের পুরোনো নথিতেও এই সম্পর্কিত কোনো বিবরণ নেই। কিন্তু পরবর্তী জীবনে থমাস জেফারসনের স্বীকারোক্তি থেকে অনুচ্ছেদটি বাতিলের প্রক্রিয়া জানা যায়। তিনি সেবছর জুনের ২৮ তারিখ প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন শেষে একটি কপি জন অ্যাডামস এবং বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের নিকট প্রেরণ করেন। মূলত ‘কমিটি অব ফাইভ’ এর সদস্যরা একে কংগ্রেসে উত্থাপনের পূর্বে যাচাইবাছাই করার কথা ছিল।
১ জুন থেকে ৩ জুন অবধি কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক করে। মূলত এই সময়ের মধ্যেই দাসপ্রথা বিরোধী অনুচ্ছেদটি বাদ দেয়া হয়। এটি অপসারণের পেছনে আমেরিকার তৎকালীন রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেই দায়ী করেন অনেক আমেরিকান ইতিহাসবিদ। ইতোমধ্যেই ১৩টি কলোনি দাসপ্রথার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে চলে যায়। উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ইতোমধ্যেই আফ্রিকান এবং ইউরোপিয়ান ক্রীতদাসদের বড়সড় ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের চাষাবাদে বিনামূল্যে শ্রমিক সরবরাহ ছিল অপরিহার্য। সেখানকার উৎপাদিত চাল, তুলা, তামাক এবং দামী শস্য ইউরোপে রপ্তানি করা হতো। এই খাতটি উপনিবেশিক আমেরিকার অর্থনীতির চাকা সচল রাখত।
অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চলের বণিকেরা ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে বড়সড় ভূমিকা পালন করেন। আমদানি এবং রপ্তানিতে তাদের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। আর এই নৌপথ সচল রাখতে তাদেরকে সাহায্য করতো বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রীতদাসেরা। এই জলপথ একসময় আফ্রিকার সঙ্গেও আমেরিকানদের বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নে সাহায্য করেছিল। এতে করে ক্রীতদাস কেনাবেচার ব্যবসা আরও জোরদার ঘটে। আমেরিকা, আফ্রিকা এবং ইউরোপের মধ্যে চলমান ত্রিভুজাকৃতির বাণিজ্যিক সম্পর্কের আড়ালে দাস ব্যবসা দিন দিন লাভজনক হয়ে ওঠে। আর বিনে পয়সায় শ্রমিক পাওয়ার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উৎপাদনমুখী অর্থনীতি সাজাতে বেশি সময় নেননি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা। থমাস জেফারসন পরবর্তী জীবনে দক্ষিণের দুই অঞ্চলকে সরাসরি দায়ী করেন। তিনি বলেন,
সাউথ ক্যারোলিনা এবং জর্জিয়া আফ্রিকান দাসত্ব বন্ধে ভূমিকা পালন করেনি। বরঞ্চ তারা ক্রীতদাস আমদানি চালিয়ে নিতে চেয়েছিল এবং এই আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়নি। তবে আমাদের উত্তরের ভাইবোনেরা তুলনামূলক কম সংখ্যক ক্রীতদাস রেখেছিলেন। তবুও তারা অন্যদের দৃষ্টিতে একই ছিলেন।
মূলত তিনি উত্তরাঞ্চলের দায় এড়াতে চেয়েছিলেন। অথচ ক্রীতদাস আমদানিতে সবচেয়ে বড় সংযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেছিল উত্তরের বণিকদল। তবে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আফ্রিকান কিংবা ইউরোপিয়ান ক্রীতদাসদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারে দূর্নীতির মতো কার্যকলাপ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। একটি সম্প্রদায়কে আজীবনের জন্য দাসত্বের অন্ধকারে গুম করে রাখা অন্তত গণতান্ত্রিক দেশে শোভা পায় না।
তবে থমাস জেফারসন সেকালে এটি ভেবে দাসপ্রথা বিরোধী অনুচ্ছেদটি উল্লেখ করেছিলেন কি না সেটি বোঝার উপায় নেই। কারণ আমেরিকান বিপ্লবের পর ১৭৮৮ সালে আমেরিকায় নতুন সংবিধানের মাধ্যমে দাসপ্রথাকে আইনসম্মত ঘোষণা করা হয়। ফলে নতুন উদ্যমে দাস ব্যবসার উত্থান ঘটে। আর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতারিত হয়ে আসা ক্রীতদাসেরা আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান খুঁটিতে পরিণত হয়।
কংগ্রেসম্যানদের গুপ্ত সমর্থন
সেসময় দাসপ্রথাকে ‘মানুষের প্রকৃতির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর যুদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করলেও আমেরিকান নেতাদের কথায় এবং কাজের মধ্যে ব্যাপক অমিল লক্ষ্য করা যেত। জেফারসন তার জীবদ্দশায় ক্রীতদাস অধ্যুষিত কলোনিগুলোতে দাসপ্রথার অর্থনৈতিক আগ্রহ সম্পর্কে একটি নথি প্রকাশ করেন। তবে এ কথা সত্য যে, আমেরিকার স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করা এক-তৃতীয়াংশ লোকই জীবনের কোনো না কোনো সময় ক্রীতদাস হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। যখন উত্তরাঞ্চলে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হতে শুরু থাকে তখন রাজ্য সরকার একটি আইন পাশ করে একে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির নির্দেশনা দেয় সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা।
এতে করে বোঝা যায় জনসম্মুখে দাসপ্রথা নিয়ে নীতিকথা বলা কংগ্রেসম্যান এবং নেতারা গোপনে দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। থমাস জেফারসন নিজেও অদ্ভুত মনোভাবপূর্ণ ছিলেন। দাসপ্রথা বিলুপ্তির জন্য তিনি যে জীবনদর্শন নিয়ে কাজ করে গেছেন সেটির বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যায় তার ব্যক্তিজীবনে। জীবদ্দশায় সর্বমোট ৬০০ জন দাসদাসী তার অধীনস্থ ছিল। এর মধ্যে স্যালি হ্যামিংস নামক একজন দাসী ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
১৮২৬ সালে ঋণে জর্জরিত হয়ে জেফারসন যখন মৃত্যুবরণ করেন তখনও তিনি তার অধীনস্থ কোনো দাসদাসীকে মুক্ত ঘোষণা করেননি। বরঞ্চ তিনি তাদেরকে নিজের সম্পত্তি হিসেবেই দাবি করেন। হাজার হাজার আফ্রিকান ক্রীতদাসের স্বাধীনতা হরণের জন্য ম্যাসাচুসেটসের সাবেক গভর্নর থমাস হাচিনসন সরাসরি ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড এবং ক্যারোলিনার প্রতিনিধিদের দোষী সাব্যস্ত করেন। দাসপ্রথা বিলুপ্তি নয়, বরঞ্চ অব্যাহত রাখার পেছনে তখনকার কংগ্রেসম্যানদের সখ্য অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে আসে।
শেষপর্যন্ত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রবর্তনকারীরা সমস্ত দোষ রাজা তৃতীয় জর্জের উপর চাপিয়ে দিয়ে বিপ্লবের দিকেই ধাবিত হয়। তারা তৃতীয় জর্জের বহুল আলোচিত ‘নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া বিবর্তন’ নীতিকে সম্মুখে রেখে আদিবাসী এবং ক্রীতদাসদের মাধ্যমে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে প্রচার করতে থাকে। ১৭৭৬ সালের ৪ জুন জেফারসনের দাসপ্রথার বিরুদ্ধে নিন্দা সম্বলিত অনুচ্ছেদটি বাদ দিয়েই আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র কংগ্রেসে পাশ হয়। এখন অবধি একে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘বাতিল’ হিসেবে দেখেন ইতিহাসবিদরা। আমেরিকান স্থপতিরা ‘সকল মানুষ সৃষ্টিলগ্ন থেকে এক’ এই বাক্যের ব্যাখ্যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারেননি।
ফলে স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে দাসপ্রথা টিকে থাকে আরও প্রায় অর্ধশত বছর। এছাড়াও দু’শো বছরেরও বেশি সময় যাবত আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকেরা অধিকার আন্দোলন এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। মূলত এসবের সূচনা হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে দাসপ্রথার নিন্দা অনুচ্ছেদটি বাতিল করা কিংবা ১৭৮৮ সালে সংবিধানে দাসপ্রথা পুনরায় বৈধতা দেয়ার কারণেই। নাগরিক ও সামাজিক অধিকার নিয়ে এখনও আন্দোলনে নামেন ‘আফ্রিকান আমেরিকান’ খ্যাত কৃষ্ণাঙ্গরা। অথচ আজকের বিশ্বে স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রে আদিবাসী, শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা উপজাতি নামে কোনো বিভেদ দেখা যেত না যদি সেকালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি দাসপ্রথা বিলুপ্তির সাক্ষ্য দিত।