কনজ্যুমার টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন প্রতিবছর দৈনন্দিন ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি প্রদর্শনীর জন্যে একটি বাণিজ্যিক মেলার আয়োজন করে। এখানে বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলো নিজেদের নতুন উদ্ভাবনী ও পণ্য প্রদর্শনীর সুযোগ পায়। এই মেলাটির নাম সিইএস (কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো)। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস কনভেনশন সেন্টারে জানুয়ারি মাসে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২১ সালের সিইএস সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিইএস ম্যানেজমেন্ট অনেকগুলো ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম রিভিউ করে মাইক্রোসফট টিমস বেছে নিয়েছিল, কারণ এটিই শুধু এতো বিশাল একটি কনফারেন্সের চাপ সামলাতে উপযুক্ত বলে তারা মনে করেছে। জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত এই অনলাইন কনফারেন্সটি চলেছে। সিইএস ২০২১ থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের এই লেখায় আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, শুরু করা যাক।
রোল্যাবল ফোন
ইলেকট্রনিক নির্মাতা এলজি রোল্যাবল ফোন নিয়ে কাজ করছে, এই গুজবটি বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। এবারের সিইএসে এলজি আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করেছে। ফোনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘এলজি রোল্যাবল’। একটি টিজার ভিডিওর মাধ্যমে সংক্ষিপ্তভাবে ফোনটি দেখানোও হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, একেবারে সাধারণ দেখতে একটি ফোন প্রস্থে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সবশেষে তা একটি ছোট ট্যাবলেটে পরিণত হয়। স্যামসাংয়ের নেতৃত্বে স্মার্টফোন দুনিয়ায় এখন ফোল্ডেবল ফোন নিয়ে যে কাজ চলছে, তার তুলনায় এই ডিজাইনটি একেবারেই ভিন্ন হিসেবে নজর কেড়েছে। তবে, দুইটি প্রযুক্তির উদ্দেশ্য একইরকম। তা হচ্ছে, একই ডিভাইসে প্রয়োজনমত ছোট ও বড় স্ক্রিন ব্যবহার করার সুবিধা যোগ করা। সম্ভবত, এ বছরই বিক্রির জন্য ফোনটি বাজারে মুক্তি দেওয়া হবে। কিছু সাংবাদিক অনুমান করছে, ফোনটির মূল্য হবে ২৩৫৯ ইউএস ডলার। অর্থাৎ, স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ডের চেয়েও এর মূল্য বেশি হবে।
এলজির পাশাপাশি অপ্পো ও টিসিএল কোম্পানিও রোল্যাবল ফোনের কিছু প্রোটোটাইপ দেখিয়েছে। তবে, এই ফোনগুলো বাজারে বিক্রির জন্য ছাড়া হবে কিনা সে সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে, অনেকগুলো কোম্পানিই যদি রোল্যাবল ধারণা নিয়ে কাজ করে, সেক্ষেত্রে এর মূল্য সাধারণ মানুষের সাধ্যের কাছাকাছি হবে।
গ্যালাক্সি এস২১ লাইনআপ
সিইএসের অন্যতম আকর্ষণ ছিল, এই বছরের প্রথম ফ্ল্যাগশিপ ফোনের ঘোষণা। স্যামসাং তাদের এস২১ লাইনআপের ঘোষণা দেয় এবারের সিইএসে। দেখা যাক, কী কী নতুন এসেছে এই ফোনগুলোতে।
গতবছরের তুলনায় এবারের এস সিরিজে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে, এর মূল্য। গ্যালাক্সি এস২১ পাওয়া যাবে ৮০০ ডলার থেকে। যেখানে গত বছরে এর দাম ছিল ১০০০ ডলার। ডিজাইনেও এসেছে পরিবর্তন। ক্যামেরা বাম্পকে ফোনের পাশের ধাতব ফ্রেমের সাথে যুক্ত করে এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘কনট্যুর কাট ক্যামেরা হাউজিং’। রেগুলার এস২১ এর পেছনে দেওয়া হয়েছে প্লাস্টিক পলিকার্বনেট, যেখানে এস২১ প্লাস ও এস২১ আলট্রার পেছনে রয়েছে গত বছরের মত গ্লাস কভার।
আরেকটি বড় পরিবর্তন হচ্ছে, নোট সিরিজের মতো এস২১ আলট্রাতে এস পেন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। তবে, এই স্টাইলাসের জন্যে খরচ করতে হবে বাড়তি ৪০ ডলার। নোট সিরিজের মতো ফোনের ভেতরে এই পেনটির হাউজিং রাখা হয়নি। তবে, একটি কেস কেনা যাবে যেখানে পেনটির হাউজিংয়ের সুবিধা রয়েছে। সবগুলো ফোনেই দেশভেদে স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ও এক্সিনোস ২১০০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে।
স্মার্ট মাস্ক
সবাইকে বেশ অবাক করে দিয়েই ল্যাপটপ ও গেমিং আনুষাঙ্গিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রেজার একটি স্মার্ট মাস্কের ঘোষণা দিয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রজেক্ট হ্যাজেল’। তবে খুব দ্রুতই এটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রযুক্তির সমন্বয়ে একটি মাস্ক কেমন হতে পারে, সে ব্যাপারে বেশ ভালো ধারণা পাওয়া যাবে এই মাস্কটি দেখলে। রেজারের ক্রোমা সফটওয়্যার দিয়ে এই মাস্কে ব্যবহৃত এলইডি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। অর্থাৎ, ব্যবহারকারী তাদের পছন্দমত বিভিন্ন রঙয়ের সমন্বয় এখানে তৈরি করতে পারবেন। এখানে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ফেইসপ্লেটটি স্বচ্ছ, ফলে সাধারণ মাস্কের মতো চেহারা লুকিয়ে রাখার উপায় নেই। রাতের বেলায়, ভেতরের আলো ব্যবহার করে নিজের চেহারাকে আলোকিত করে রাখা যায়।
মাস্কের দুই পাশে পুনঃব্যবহারযোগ্য এন৯৫ গ্রেডের ফিল্টার যুক্ত করা হয়েছে, যা মাস্ক ব্যবহারের আসল উদ্দেশ্যটি পূরণ করবে। সাধারণ মাস্কে অনেকসময়েই আমাদের কথা অস্পষ্ট বা কম আওয়াজে শোনা যায়। রেজারের মাস্কটিতে এই সমস্যা দূর করার জন্যে রয়েছে একটি বিল্ট-ইন অ্যামপ্লিফায়ার। রাতের বেলায় চার্জ দেওয়ার জন্যে রয়েছে একটি আলট্রাভায়োলেট স্টেশন যেখানে এটিকে চার্জ দেওয়ার পাশাপাশি জীবাণুমুক্ত করা হয়।
এআই পোষা রোবোট
গত কয়েক বছর ধরেই সিইএসে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা যায় এরকম রোবোট দেখা যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারে, ভ্যানগার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ে এসেছে একটি সুন্দর পোষা রোবোট। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মফলিন’। ভ্যানগার্ড দাবি করছে, এটির সংবেদনশীল ক্ষমতা রয়েছে। এটিকে কালো, গোলাকার চোখের একটি তুলতুলে গিনিপিগের মতো দেখায়।
ভ্যানগার্ড জানিয়েছে, মফলিনে ব্যবহৃত অ্যালগরিদমের সাহায্যে এটি আলাদা আলাদা মানুষ চিনতে পারে এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ করে। সাধারণ কুকুরের মতোই এটি অনুভূতি প্রকাশে নড়াচড়া ও শব্দ ব্যবহার করে, যে শব্দ সত্যিকারের প্রাণী থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মফলিন আবার সময়ের সাথে সাথে পরিবেশ ও তার মালিকের আচরণের উপরে নির্ভর করে একটি নিজস্ব ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম।
মফলিনকে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থাটিও অনেক আকর্ষণীয়। একটি ওয়্যারলেস চার্জিং স্টেশনে একে বসানো হয়, যেখানে সত্যিকারে এটি আদুরে ঘুমের শব্দ করে ও ছোট ছোট প্রতিক্রিয়া দেখায়। মফলিনে ব্লুটুথ ৪.২ ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটির অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপ রয়েছে। মার্চ মাসে মফলিনের প্রথম ডেলিভারি দেওয়ার জন্যে ভ্যানগার্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং এটি পাওয়া যাবে ৪০০ ইউএস ডলারে।
মফলিন ছাড়াও বেশ কিছু রোবোট প্রদর্শন করা হয়েছে এবারের সিইএসে। তার মধ্যে স্যামসাংয়ের বট কেয়ার৫ ও বট হ্যান্ডি৬ উল্লেখযোগ্য। প্রথমটি অনেকটা ‘পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ অ্যাপের মতো কাজ করবে। ব্যবহারকারীর নিত্যকার রুটিনের সাথে এটি পরিচিত হয়ে উঠবে এবং সময়সূচী অনুযায়ী বিভিন্ন কাজের কথা মনে করিয়ে দিবে। আর পরেরটি হচ্ছে কিচেন অ্যাসিস্ট্যান্ট। এই রোবোটটি ডিশওয়াশারে ডিশ লোড করা, পানি এনে দেওয়ার মতো কাজ করতে পারে। এই রোবোটগুলি কবে বাজারে আসবে সে ব্যাপারে স্যামসাং এখনো কিছু জানায়নি।
সনি এয়ারপিক ড্রোন
গত নভেম্বর মাসে সনি ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা এআই রোবোটিক্স ক্ষেত্রে ড্রোনের একটি নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছে। এরপরে, সিইএস ২০২১-এ এসে তারা এই ঘোষণাটিকে আরো বিস্তারিতভাবে জানায়। সেখানে তারা বলেছে, প্রথম ধাপে সনি প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফি ও ভিডিও প্রোডাকশনকে লক্ষ্য করে ড্রোন তৈরি করবে। এখানে লক্ষণীয় যে, সনি তাদের এই ‘এয়ারপিক’ ড্রোনকে ‘প্রজেক্ট’ ও ‘নতুন ব্যবসা’ নামে পরিচিত করেছে। অর্থাৎ, এই লাইনআপে ভবিষ্যতে আরো বিভিন্ন ধরনের ড্রোন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিইএসে সনি একটি টিজার ভিডিও প্রকাশ করেছে। এই ভিডিওটিই প্রথম ড্রোনটি ঠিক কী ধরনের হতে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে ভালো ধারণা দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তুষারে আচ্ছাদিত একটি অঞ্চলে, একটি গাড়ির সাথে তাল মিলিয়ে এই ড্রোনটি সনির একটি আলফা মিররলেস ক্যামেরাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, এই ড্রোনটিতে ডিজেআইয়ের ড্রোনের মতো ক্যামেরা বিল্ট-ইন থাকবে না। প্রোফেশনাল সিনেম্যাটোগ্রাফারদের লক্ষ্য করেই এই ড্রোনটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই, ডিজেআইয়ের জনপ্রিয় ড্রোনগুলোর সাথে এটি প্রতিযোগিতা করবে না।
মাইক্রো এলইডি স্মার্ট চশমা
প্রযুক্তি কোম্পানি ভুজিক্স একটি নতুন স্মার্ট চশমার কথা ঘোষণা করেছে, যেটি স্মার্ট চশমার সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা সমাধান করতে যাচ্ছে। আর তা হচ্ছে, এর ডিজাইন। মাইক্রো এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুজিক্স খুবই ছোট দুইটি প্রজেক্টর তৈরি করেছে যেগুলো চশমার দুই পাশে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই চশমাটি দেখতে সাধারণ চশমার মতোই মনে হবে। এই ব্যাপারটির জন্যে কৃতিত্ব দিতে হবে মাইক্রো এলইডি প্রযুক্তিকে। ভুজিক্স এই কাজের জন্যে চীনা স্ক্রিন নির্মাতা কোম্পানি জেইড বার্ড ডিসপ্লের সাথে চুক্তি করেছিল।
এই চশমাটির কার্যকারিতা অবশ্য গুগল গ্লাসের মতোই। স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত থেকে সেখানকার তথ্য এটি তার গ্লাসে প্রতিফলিত করে। গ্লাসের ভেতরে একটি ছবি নিক্ষেপ করা হয়, যেটি ত্রিমাত্রিক বস্তুর একটি বিভ্রম তৈরি করে। স্মার্টফোন অ্যাপ এই চশমাতে ম্যাপ, ডেটা সেট, কল ইনফরমেশন ইত্যাদির ভার্চুয়াল প্রতিচ্ছবি পাঠায়। সেখান থেকে এই প্রতিফলনটি তৈরি হয়। এর পাশাপাশি এই গ্লাসটিতে স্টেরিও স্পিকার ও নয়েজ ক্যান্সেলিং মাইক্রোফোনও রয়েছে।
ল্যাপটপের জন্যে এনভিডিয়া আরটিএক্স ৩০০০ গ্রাফিক্স কার্ড
সিইএস ২০২১-য়ে এনভিডিয়া অবশেষে তাদের আরটিএক্স ৩০০০ সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ডের ল্যাপটপ সংস্করণ ঘোষণা করেছে। আরটিএক্স ২০০০ সিরিজ বাজারে আসার দুই বছর পরে, অবশেষে গেমিং ল্যাপটপগুলো যথেষ্ট আপগ্রেড পেতে যাচ্ছে। এনভিডিয়া প্রাথমিকভাবে তিনটি ল্যাপটপ জিপিইউর ঘোষণা দিয়েছে। তারমধ্যে আরটিএক্স ৩০৮০তে রয়েছে ১৬ জিবি মেমোরি। তাছাড়াও এটি পৃথিবীর দ্রুততম ল্যাপটপ জিপিইউ হতে যাচ্ছে। আরেকটি জিপিইউ হচ্ছে আরটিএক্স ৩০৭০, যেটি আরটিএক্স ২০৭০ ডেস্কটপ প্রসেসরের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ দ্রুত। অন্যদিকে, আরটিএক্স ৩০৬০ পিএস৫-য়ের তুলনায় ১.৩ গুণ দ্রুত পারফর্ম করবে।
এএমডি রাইজেন ৫০০০ ল্যাপটপ প্রসেসর
সিইএস ২০২১য়ের একজন প্রধান বক্তা হিসেবে এএমডির সিইও লিসা সু চমৎকার বক্তব্য দিয়েছেন, যেখানে তিনি বহুল প্রত্যাশিত এএমডি রাইজেন ৫০০০ সিরিজের ল্যাপটপ প্রসেসরের ঘোষণা করেন। ডেস্কটপ প্রসেসরে ইন্টেলের দ্রুতগামিতাকে পেছনে ফেলে এবারে ল্যাপটপ প্রসেসরেও একই দিকে এগিয়ে চলেছে এএমডি।
৭ ন্যানোমিটার আর্কিটেকচারের প্রসেসরের দুর্দান্ত গতির সাথে এএমডি লম্বা সময়ের ব্যাটারি লাইফেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাইজেন ৫০০০-এর ল্যাপটপগুলো গেমার ও সাধারণ ব্যবহারকারী সবাইকেই লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রোডাকটিভিটি ডেস্কটপ সফটওয়্যারগুলোতে, ইন্টেলের কোর আই৭-১১৬৫জি৭ প্রসেসরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পারফরমেন্স বৃদ্ধি দেখা যাবে বলে তারা দাবি করেছে।
লেনোভো ল্যাভি মিনি
লেনোভো ল্যাভি মিনি হচ্ছে নেটবুক ও নিনটেন্ডো সুইচের মতো গেমিং কনসোলের একটি সমন্বয়। সাধারণভাবে এটি একটি ল্যাপটপ কিন্তু একে আবার গেমিং হ্যান্ডহেল্ডের মতো রূপান্তর করা যায়। গুগল স্টেডিয়ার মতো সার্ভিসের জন্যে এটি একটি চমৎকার ডিভাইস হতে পারে।
এই ডিভাইসটিতে ইন্টেল কোর আই৭ প্রসেসর, ১৬ জিবি র্যাম ও ২৫৬ জিবি এম২ এসএসডি মেমোরি দেওয়া হয়েছে। তবে, ডিভাইসটি এখন পর্যন্ত প্রোটোটাইপ হিসেবেই দেখানো হয়েছে। ভবিষ্যতে কবে তা বাজারে ছাড়া হবে কিংবা আদৌ ছাড়া হবে কিনা সে সম্পর্কে কোনোকিছু জানানো হয়নি।
রেজার প্রজেক্ট ব্রুকলিন গেমিং ককপিট
রেজারের এই প্রজেক্টটি একটি আকর্ষণীয়, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গেমিং স্টেশন। রেজারের সিইও দাবি করছে, এরকম গেমপ্লে অভিজ্ঞতা আর কোথাও পাওয়া সম্ভব হবে না। এর ছবি দেখে কথাটি সত্য মনে হতে পারে। কিন্তু এবারের সিইএস মেলাটি অনলাইন হওয়ার ফলে, সামনাসামনি অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ আর থাকছে না।
এই গেমিং স্টেশনে রয়েছে কার্বন ফাইবার কাঠামো, আরজিবি লাইট, অডিওচালিত হ্যাপটিক ফিডব্যাক এবং ৪ডি আর্মরেস্ট। এটির সিটের পেছন দিকের সাথে একটি ৬০ ইঞ্চি ওলেড স্ক্রিন রয়েছে, যেটি প্যানারমিক একটি ভিজ্যুয়াল দেয়। একটি বাটনের চাপে সম্পূর্ণ ডিসপ্লেটি পেছন থেকে বের হয়ে আসে।
লো কোবাল্ট ব্যাটারি
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির জন্যে কোবাল্ট সংগ্রহ একটি বিপজ্জনক কাজ। এটি একটি বিষাক্ত পদার্থ। তাছাড়া, পৃথিবীতে এর পরিমাণও বেশ কম। যা রয়েছে, তার বেশিরভাগই কঙ্গোতে পাওয়া যায়। সেখানে শিশু শ্রম খুবই সাধারণ একটি ঘটনা এবং এই কোবাল্ট উত্তোলন করতে গিয়ে তাদেরকে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে হয়। তাই, এ বছরের সিইএসে ব্যাটারি প্রস্তুতকারকরা কোবাল্টমুক্ত করতে চাইছে কিংবা কোবাল্টের ব্যবহার কমাতে চাইছে, এটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও একটি পদক্ষেপ।
টেসলার লিথিয়াম আয়ন সেলের সরবরাহকারী প্যানাসনিক নতুন ব্যাটারি দেখিয়েছে, যেখানে কোবাল্টের পরিমাণ শতকরা পাঁচ ভাগেরও কম। জেনারেল মোটরস এলজির সাথে চুক্তি করেছে তাদের পরবর্তী ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারির জন্যে। এলজির এই ব্যাটারিগুলো ৭০ শতাংশেরও বেশি কোবাল্টমুক্ত হয়েছে। তারা কোবাল্টের পরিবর্তে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করছে। ২০২৩ সালের মধ্যে জেনারেল মোটরসের সবগুলো ইলেকট্রিক পরিবহনই লো-কোবাল্ট ব্যাটারি ব্যবহার করবে।